[ Online ] 09/06/2022
 
সিলেটে গ্যাস উত্তোলন ৪ গুণ করার উদ্যোগ
সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেড (এসজিএফএল) গ্যাস উত্তোলন বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। বর্তমানে দিনে ৮৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন হচ্ছে, যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। ফলে বেশ কিছুদিন ধরে সিলেটে গৃহস্থালি, শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে গ্যাসের হাহাকার চলছে। এই সংকট থেকে বেরিয়ে আসতে দিনে ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এছাড়া প্রতিদিন ১৫শ ব্যারেল কনডেনসেড উত্তোলনেরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এজন্য পরিত্যক্ত ১০-১২টি কূপের ওয়ার্কওভারের পাশাপাশি নতুন আরও ১০-১২টি কূপ খননের তোড়জোড় চলছে। ইতোমধ্যে নতুন দুটি কূপ খননের অনুমোদন মিলেছে। আরও চারটি ওয়ার্কওভারের ডিপিপি পেট্রোবাংলার অনুমোদন শেষে এখন মন্ত্রণালয়ে। আরও একটির ডিপিপিও জমা দেওয়া হয়েছে সম্প্রতি। আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে এসজিএফএল।

কথা হয় এসজিএফএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মিজানুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বুধবার যুগান্তরকে জানান, পুরোনো কূপে গ্যাসের মজুত কিছুটা কমে যাওয়ায় এ গ্যাস ক্ষেত্রের আওতাধীন বিভিন্ন কূপ থেকে গ্যাস উত্তোলন প্রতিদিন ৮৫ মিলিয়ন ঘনফুটে নেমে আসে। আগামীতে কমপক্ষে ২০০ থেকে ২২০ মিলিয়ন ঘনফুট উত্তোলন নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ষাটের দশকে শুরু হওয়া এসজিএফএলের উত্তোলন এক সময় দিনে ২০০ মিলিয়ন ঘনফুটে উন্নীত হয়েছিল।

বর্তমানে নতুন চালু হওয়া কৈলাশটিলা ৭ নং গ্যাস কূপ থেকে প্রতিদিন উত্তোলন হচ্ছে ১৬ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। সব মিলিয়ে প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে ৯৬ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস ও ৭শ ব্যারেল কনডেনসেড উৎপাদন করছে।

সূত্র বলছে, সরকারের সিদ্ধান্ত অনুয়ায়ী গ্যাসের উত্তোলন বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। উত্তোলন বাড়লে এলএনজির (লিকুইড ন্যাচারাল গ্যাস) ওপর চাপ কমবে। নাইকোর সঙ্গে চলমান মামলা শেষ হলে ছাতক গ্যাসফিল্ড থেকেও গ্যাস উত্তোলন শুরু হবে। এরইমধ্যে এসজিএফএল এলপিজি উৎপাদন করে বিক্রি শুরু করেছে।

এদিকে এসজিএফএলের উদ্যোগে সিলেট শহরতলির এফআইভিডিবি মিলনায়তনে এক সভা হয়েছে। জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল, বার্ষিক কর্মসম্পাদন কার্যক্রম চুক্তি, সেবা প্রদান প্রতিশ্রুতি ও অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থাপনা বাস্তবায়নের অংশ হিসাবে এই আয়োজন করা হয়। এসজিএফএলের এমডি মিজানুর রহমান সভাপতির বক্তব্যে বলেন, জ্বালানি দেশের উন্নয়নের মূল চালিকাশক্তি। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতের মাধ্যমে কোম্পানির উন্নয়ন নিশ্চিত করাই এ সভার মূল লক্ষ্য। তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালের ৯ আগস্ট আমাদের স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বহুজাতিক শেল অয়েল কোম্পানির কাছ থেকে নামমাত্র মূল্যে সিলেটের দুটিসহ সারা দেশে ৫টি গ্যাসক্ষেত্র মাত্র ৪ দশমিক ৫ মিলিয়ন পাউন্ড স্টার্লিং দিয়ে (তখনকার সময়ে ১৭-১৮ কোটি টাকা) কিনে রাষ্ট্রীয় মালিকানা প্রতিষ্ঠা করেন। বিপুল পরিমাণ গ্যাসের মজুত সমৃদ্ধ গ্যাস ক্ষেত্রগুলো এত সস্তায় কিনে নেওয়ার ঘটনা বিশ্বে আর দ্বিতীয়টি নেই। দীর্ঘ চার দশকের বেশি সময় ধরে ক্রমবর্ধমান ব্যবহারের পরেও বর্তমানে দেশের মোট উৎপাদনের ৩১ দশমিক ৪৪ শতাংশ জ্বালানি নামমাত্র মূল্যে কেনা এই গ্যাস ক্ষেত্রগুলো থেকেই পাওয়া।

সভায় ভার্চুয়ালি প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন পেট্রোবাংলার পরিচালক (প্রশাসন) মো. আলতাফ হোসেন। মঙ্গলবার গ্যাসফিল্ডের ব্যবস্থাপক (প্রশাসন ডিভিশন) মো. হেলাল উদ্দিনের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখেন এসজিএফএলের কোম্পানি সচিব প্রকৌশলী মো. ফারুক হোসেন, মহাব্যবস্থাপক (এলপিএম) প্রকৌশলী প্রদীপ কুমার বিশ্বাস এবং মহাব্যবস্থাপক (পিএন্ডডি) প্রকৌশলী মো. কামরুল ইসলাম সরদার প্রমুখ। অনুষ্ঠানে পেট্রোবাংলার আওতাধীন ১৩টি কোম্পানি, বিপিসির পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা অয়েল কোম্পানির প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

Shares