[ ] 09/06/2022
 
ফ্যাটি লিভার ৩ জনে একজনের, ক্যানসার ঝুঁকিতে ১ কোটি
বাংলাদেশে প্রতি তিনজনে একজনের ফ্যাটি লিভার আছে। প্রায় চার কোটি পঞ্চাশ লাখ মানুষ ফ্যাটি লিভারে ভুগছে। এর মধ্যে প্রায় এক কোটি মানুষ সিরোসিস বা লিভার ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকিতে আছে। অথচ অনেক ক্ষেত্রে শুধু খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রার ধরন পরিবর্তন এবং ওজন কমানোর মাধ্যমে ফ্যাটি লিভার ও ন্যাশ প্রতিরোধ করা যায়। পঞ্চম আন্তর্জাতিক ন্যাশ দিবস উপলক্ষ্যে বুধবার সিরডাপ মিলনায়তনে এক বৈজ্ঞানিক সেমিনারে এ তথ্য জানানো হয়।

সেমিনারে বক্তারা বলেন, লিভার রোগজনিত মৃত্যু বিশ্বব্যাপী মারাত্মক জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসাবে পরিগণিত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, বাংলাদেশে মোট মৃত্যুর ২ দশ?মিক ৮২ শতাংশ লিভারের রোগ, বিশেষ করে সিরোসিস ও লিভার ক্যানসারের কারণে হয়ে থাকে। লিভার সিরোসিস ও ক্যানসারের অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে লিভারে চর্বি জমাজনিত প্রদাহ। চিকিৎসাবিজ্ঞানের পরিভাষায় একে বলে স্টিয়াটো-হেপাটাইটিস। অতিরিক্ত চর্বি জমা হওয়ার কারণে যকৃতে যে প্রদাহ সৃষ্টি হয়, তাকেই স্টিয়াটো-হেপাটাইটিস বলা হয়। ফ্যাটি লিভারের বিপজ্জনক পরিণতি হচ্ছে ন্যাশ। নির্ণয়হীন ও নিয়ন্ত্রণহীন অবস্থায় ফ্যাটি লিভার বিপজ্জনকভাবে এর দিকে অগ্রসর হতে থাকে। লিভারে প্রদাহ সৃষ্টি করা ছাড়াও যকৃতে চর্বি জমার আরও বেশকিছু খারাপ দিক রয়েছে। এই রোগটি হৃদ্রোগ, ডায়াবেটিস এবং শরীরে ইনসুলিন হরমোনের কার্যকারিতা কমে যাওয়ার সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত। সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও এ রোগের প্রাদুর্ভাব আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে।

অধ্যাপক মবিন খানের সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের স্বাস্থ্যবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল ডা. এএসএম মতিউর রহমান এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন আইসিডিডিআর,বির নির্বাহী পরিচালক ড. তাহমিদ আহমেদ।

সেমিনারের শেষ অংশে কয়েকজন ভুক্তভোগী রোগী তাদের ভোগান্তি, রোগ যন্ত্রণা এবং কষ্টের কথা তুলে ধরেন। হেপাটোলজি সোসাইটি, ঢাকা কর্তৃক বাংলাদেশে ফ্যাটি লিভার রোগ প্রতিরোধে কর্মপন্থা নির্ধারণে ১১ দফা সুপারিশ তুলে ধরা হয়। সুপারিশগুলো হলো-প্রত্যেক ব্যক্তির সপ্তাহে অন্তত পাঁচ দিন এবং প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট করে হাঁটতে হবে; দড়ি লাফ এবং সাইকেল চালানো শরীরচর্চার জন্য ভালো অপশন; দুধ, ফল, শাকসবজি খাওয়া বাড়ানো এবং চিনিযুক্ত খাবার, পানীয়, চকলেট, আইসক্রিম, ফাস্ট ফুড এবং (ভাজা খাবার) ট্রান্স-ফ্যাটের পরিমাণ কমানোর মাধ্যমে খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করে ক্যালরি গ্রহণ কমাতে হবে, শরীরচর্চা বাড়ানো যায়-এরকম পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। দেশের প্রতিটি স্কুল এবং প্রশাসনিক ওয়ার্ডে খেলার মাঠ রাখা বাধ্যতামূলক করতে হবে এবং প্রতিটি শিশুকে খেলতে এবং অন্যান্য শারীরিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের জন্য অনুপ্রাণিত করতে হবে; বাইসাইকেল চালানো এবং হাঁটার জন্য আলাদা লেন তৈরি করা, যা স্বাস্থ্য এবং অর্থনীতি উভয়ের জন্য উপকারী হবে; গণসচেতনতামূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অধিক স্যাচুরেটেড ফ্যাট, চিনি ও লবণযুক্ত জাংক ফুড এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার পরিহার করতে উৎসাহিত করতে হবে; প্রক্রিয়াজাত খাবারের পুষ্টিমান সঠিক রাখার জন্য (উদাহরণস্বরূপ, ট্রান্সফ্যাট, স্যাচুরেটেড ফ্যাট, চিনি এবং লবণ পরিহার) খাদ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে আইনের অধীনে আনতে হবে; সফট ড্রিংকসের পরিবর্তে ফ্রেশ ফলের জুস এবং পানি পানকে উৎসাহিত করতে হবে। ছোট-বড় সবার জন্য পার্ক, খেলার মাঠ, স্কুল এবং কর্মস্থলে পরিষ্কার পানির ব্যবস্থা করতে হবে; প্রক্রিয়াজাত খাবারের ক্ষেত্রে প্যাকেটের গায়ে পুষ্টিমান এবং শক্তিমান (ক্যালরি) উল্লেখ করা বাধ্যতামূলক করতে হবে; সব চিকিৎসককে ফ্যাটি লিভার সংক্রান্ত পর্যাপ্ত জ্ঞান দিতে হবে, এর ভয়াবহতা সম্পর্কে সচেতন করতে হবে এবং ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর দিকে খেয়াল রাখতে হবে যাতে তারা ন্যাশের ঝুঁকিতে না পড়ে এবং ব্যবহার ও প্রয়োগ কমানোর জন্য চর্বি বা চিনি কর ধার্য করার চিন্তা করা যেতে পারে।