[ অনলাইন ] 19/07/2022
 
বিদেশে পাঠানোর নামে কোটি টাকা হাতিয়ে নিতেন কালাম
সংঘবদ্ধ মানব পাচার ও প্রতারণার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে রাজধানীর পল্টন এলাকা থেকে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছের্ যাব-৩। বিদেশে পাঠানোর কথা বলে তিনি মানুষের কাছ থেকে প্রায় ৩ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। তার কাছ থেকে পাসপোর্ট, জাল ভিসা ও নকল বিএমইটি কার্ড উদ্ধার করা হয়েছে।

সোমবার দুপুরে রাজধানীর কাওরান বাজার মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনের্ যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, 'গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রোববার রাতে রাজধানীর পল্টন এলাকায় অভিযান চালিয়ে আবুল কালাম (৪১) নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করের্ যাব-৩। তার গ্রামের বাড়ি ফেনীর ছাগলনাইয়া এলাকায়। তিনি মানব পাচারের সঙ্গে জড়িত। মানুষকে বিদেশ পাঠানোর কথা বলে জাল ভিসা ও বিএমইটি কার্ড দিয়ে টাকা আত্মসাৎ করতেন তিনি। তার কাছ থেকে ১৪টি পাসপোর্ট, নকল বিএমইটি কার্ড ৬টি, আর্থিক লেনদেনের বিভিন্ন লেজার, রেজিস্ট্রার এবং ডায়েরি উদ্ধার করা হয় হয়েছে।'

যাব-৩ এর অধিনায়ক জানান, সংঘবদ্ধ মানব পাচার ও প্রতারক চক্রের সদস্য তিনি। তার জনশক্তি রপ্তানির কোনো লাইসেন্স নেই। কিন্তু তিনি দীর্ঘদিন ধরে জনশক্তি রপ্তানির নামে অবৈধভাবে ভ্রমণ ভিসার মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে বিভিন্ন বয়সি মানুষ পাঠিয়ে আসছেন। এ ছাড়াও মধ্যপ্রাচ্য হয়ে ইউরোপে জনশক্তি পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে বিদেশ গমনে ইচ্ছুক বেকার যুবক ও নারীদের কাছ থেকে ৫ হতে ৭ লাখ টাকা করে হাতিয়ে নিতেন। এরপর তিনি ভুয়া ভিসা এবং নকল বিএমইটি কার্ডভুক্তভোগীদের হাতে ধরিয়ে দিতেন। ভুক্তভোগীরা নকল ভিসা এবং নকল বিএমইটি কার্ড নিয়ে বিমানবন্দরে গেলে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ তাদের বিমানবন্দর থেকে ফিরিয়ে দেয়। ভুক্তভোগীরা এ বিষয়ে প্রতিকার চাইলে আসামি তাদের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন।

আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ জানান, গত ৩ বছরে তিনি অবৈধভাবে অর্ধশতাধিক লোককে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে পাঠিয়েছে। যারা বিদেশ গিয়ে কাজ না পেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। অন্যদিকে তিন শতাধিক লোককে মধ্যপ্রাচ্য হয়ে ইউরোপে পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে ৫-৭ লাখ টাকা করে প্রায় ৩ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি।

তিনি জানান, আবুল কালাম চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছেন। তিনি ২০০৪ সালে ফ্রি ভিসায় দুবাই গিয়ে দর্জি হিসেবে কাজ শুরু করেন। মালিকের সঙ্গে মনোমালিন্য হওয়ায় ২০১১ সালে তিনি দেশে ফিরে আসেন। তারপর তিনি তার এলাকায় দর্জি ব্যবসা করার চেষ্টা করে সফল না হওয়ায় ২০১৯ সাল হতে অবৈধভাবে জনশক্তি বিদেশে প্রেরণ এবং প্রতারণা শুরু করেন। তিনি প্রথমে ভিকটিমদের ইউরোপে উচ্চ বেতনে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে পাসপোর্ট এবং প্রাথমিক খরচ বাবদ ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা নিয়ে থাকেন। তারপর ভিসা, টিকিট, মেডিকেল, বিএমইটি ক্লিয়ারেন্স ইত্যাদির খরচ দেখিয়ে ধাপে ধাপে ভিকটিমদের কাছ থেকে টাকা আদায় করতে থাকেন।

এইর্ যাব কর্মকর্তা আরও জানান, একপর্যায়ে ভিকটিমের আস্থা অর্জনের জন্য দুই-একজনকে ভ্রমণ ভিসায় দুবাই পাঠায় এবং ভিকটিমদের স্থায়ী ঠিকানা সংশ্লিষ্ট জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসে ফিঙ্গার প্রিন্ট দিয়ে নিবন্ধন করতে বলেন। নিবন্ধন বিএমইটি কার্ড পাওয়ার কোনো নিশ্চয়তা বহন করে না। কিন্তু ভিকটিমরা তাদের অজ্ঞতার কারণে ওই নিবন্ধনকেই বিএমইটি ক্লিয়ারেন্স প্রাপ্তির চূড়ান্ত ধাপ হিসেবে মনে করেন। তারপর ভিকটিমদের ভুয়া ভিসা ও নকল বিএমইটি কার্ড ধরিয়ে দিয়ে ফ্লাইটের জন্য পুনরায় টাকা দাবি করেন। এভাবে তিনি প্রতারণার মাধ্যমে বিপুল অর্থ উপার্জন করেন।