[ অনলাইন ] 27/07/2022
 
চট্টগ্রাম বন্দরে অবৈধ পণ্য খালাসে অসাধু চক্র
সাম্প্রতিক সময়ে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে অবৈধভাবে খালাস পেয়ে যায় দুই কন্টেইনার মদ। ধরা পড়ে আরও তিন কন্টেইনার মদ। এর আগেও বিভিন্ন সময়ে বিদেশি সিগারেট ও বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থসহ খালাস পেয়ে যায়। ফলে পণ্য খালাসে অসাধু চক্রের সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি আবার সামনে উঠে আসছে।

বন্দর ব্যবহারকারীরা বলছেন, চট্টগ্রাম বন্দরে অবৈধভাবে পণ্য খালাস দেওয়ার পেছনে রয়েছে বড় অসাধু চক্র। যাদের সাম্প্রতিক ঘটনাবলি তদন্ত করলে শনাক্ত করা সম্ভব হবে। এ ক্ষেত্রে পিবিআই ও র্যাবকে তদন্তভার দেওয়ার দাবি করেছেন বন্দর ব্যবহারকারীরা।

বন্দর ব্যবহারকারীদের অভিযোগ, ভৌগোলিক কারণে চট্টগ্রাম বন্দর দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলেও স্ক্যানার ও জনবলসহ নানা সঙ্কটে ধুঁকছে সংস্থাটি। আর এই সুযোগে অসাধু ব্যক্তিরা মোটা অঙ্কের উৎকোচের বিনিময়ে মিথ্যা ঘোষণায় আনা পণ্য কোটি কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে খালাস পেয়ে যাচ্ছে। গত এক বছরে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে মিথ্যা ঘোষণায় বিপুল পরিমাণ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বিদেশি সিগারেট ধরা পড়েছে। সম্প্রতি টানা তিন দিনে পাঁচ কন্টেইনার বিদেশি মদ জব্দ করেছে কাস্টমস। সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ও অসাধু কাস্টমস কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় অবৈধভাবে আমদানি করা পণ্য আনতে চট্টগ্রাম বন্দরকে নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহার করছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, অসাধু ব্যবসায়ীরা অবৈধভাবে পণ্য আমদানির চেষ্টা করলেও তারা সফল হচ্ছে না। বন্দর প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে এখন অনেক এগিয়েছে। অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি বসানো হয়েছে। পাশাপাশি বন্দরের স্ক্যানার মেশিনগুলোও সচল রয়েছে। প্রতিনিয়ত মেশিনগুলোর কাজ চলছে।

আরও স্ক্যানার মেশিন সংগ্রহের বিষয়ে আলোচনা চলছে। তিনি বলেন, মিথ্যা ঘোষণায় পণ্যের চালান আসে। তবে মদের এত বড় চালান দেখে আমরাও অবাক। শেষমেশ আইপি জালিয়াতি করে তারা যে বড় অঙ্কের রাজস্ব ফাঁকি দিতে চেয়েছিল তা আমরা রুখে দিতে পেরেছি। সামনে বন্দর কর্তৃপক্ষ এসব বিষয়ে আরও বেশি কঠোর হবে। অপরাধীদের আরও কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হবে।

চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্যমতে, বন্দরে ১২টি গেটের মধ্যে স্ক্যানার রয়েছে ৭টিতে। এর মধ্যে বন্দরের জেনারেল কার্গো বার্থ (জিসিবি) ১ নম্বর গেট, নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) ৩ নম্বর গেট, চিটাগাং কন্টেইনার টার্মিনাল (সিসিটি) ২, ৪ ও ৫ নম্বর গেটে আছে একটি করে ফিক্সড কন্টেইনার স্ক্যানার। পাশাপাশি সিসিটি-২ ও জিসিবি-২ নম্বর গেটে একটি করে মোবাইল কন্টেইনার রয়েছে।

সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী মাহমুদ ইমাম বিলু বলেন, বন্দরের স্ক্যানার মেশিন সঙ্কট একটা বড় ধরনের দুর্বলতা। এ ছাড়া অনেক সময় একটি সিঅ্যান্ডএফ প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারী বা কাছের কেউ প্রাতিষ্ঠানিক পাসওয়ার্ড জানা থাকলে লোভের বশবর্তী হয়ে এ ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। কাজেই এ অপরাধ আসলে কে করেছে তা সুষ্ঠুভাবে তদন্ত করা প্রয়োজন। মদের চোরাচালান কেন বাড়ল, চট্টগ্রাম বন্দরকে কেন আমদানির নিরাপদ রুট মনে করে ব্যবহার করা হচ্ছে তা খতিয়ে দেখার জন্য পিবিআই বা র্যাব দিয়ে তদন্ত করলে আসল ঘটনা বেরিয়ে আসবে।

তিনি বলেন, বন্দরে প্রতিনিয়ত মিথ্যা ঘোষণায় আনা পণ্য বা চোরাচালান জব্দ করে কাস্টমস। চট্টগ্রাম বন্দরে স্ক্যানারের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। তাই অসাধু সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ও কিছু কাস্টমস কর্মকর্তা আমদানিকারকদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে অবৈধভাবে আনা পণ্যগুলো জালিয়াতির মাধ্যমে খালাস করে নেন। পাশাপাশি এসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেমে মাঝেমধ্যে ত্রুটি দেখা দেয়। তাই এসব জালিয়াতি রোধ করতে হলে স্ক্যানার মেশিন বসানোর বিকল্প নেই। চট্টগ্রাম বন্দরে যে পরিমাণ স্ক্যানার মেশিন রয়েছে তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। নতুন স্ক্যানার মেশিন বসালে জালিয়াতি কমে আসবে বলে মনে করেন তারা।

চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের ডেপুটি কমিশনার (এআইআর শাখা) সাইফুল হক বলেন, মিথ্যা ঘোষণায় হঠাৎ বিদেশি মদের আমদানি কেন বাড়ল তা আমি সঠিকভাবে বলতে পারব না। আমার কাজ হলো পণ্য চালান আটক করা। অনেকে লোভের বশবর্তী হয়ে জালিয়াতির মাধ্যমে মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানি করে। আর আমরা সন্দেহ হলেই ওই চালানটি এসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেমে লক করে দিচ্ছি। কাউকেই আমরা ছাড় দিচ্ছি না। আমরা আশা করি, আর কোনো মদের চালান নেই। তবুও আমরা সতর্ক হয়ে পণ্য ছাড় দিচ্ছি।

কাস্টমসের তথ্যমতে, গত ২০ জুলাই কুমিল্লা ইপিজেডের হেসি টাইগার কোম্পানি লিমিটেড ও ঈশ^রদী ইপিজেডের বিএইচকে টেক্সটাইল লিমিটেডের নামে চীন থেকে দুই কন্টেইনারে আসা ৩১ হাজার ৬২৫ লিটার বিদেশি মদ জব্দ করেছে কাস্টমস। দুই চালানে ২৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা শুল্ক ফাঁকির চেষ্টা করা হয়েছে।

এরপর ২৪ জুলাই নীলফামারী জেলার উত্তরা ইপিজেডের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ডং জিন ইন্ডাস্ট্রিয়াল (বিডি) কোম্পানি লিমিটেডের আমদানি করা ১৫ হাজার ২০৪ লিটার বিদেশি মদ জব্দ করেছে কাস্টমসের এআইআর শাখা। এ জালিয়াতির মাধ্যমে ১২ কোটি ৪৫ লাখ টাকা রাজস্ব ফাঁকির চেষ্টা করা হয়। সর্বশেষ সোমবার দুই কন্টেইনার বিদেশি মদের চালান জব্দ করেছে কাস্টমস। এতে ২০ কোটি ৪৮ লাখ টাকার রাজস্ব ফাঁকির চেষ্টা করা হয়।