[ পাতা ৩ ] 05/08/2022
 
ক্রেডিট কার্ডে দেনা বেড়েছে মার্কিন নাগরিকদের
চলতি বছর বেশকিছু ঘটনা বিশ্ব অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে আক্রমণ চালায় রুশ বাহিনী। এর সূত্র ধরে রাশিয়াকে বয়কটের আহ্বান জানায় পশ্চিমা মহল। এছাড়া কভিড-১৯ মহামারীর কারণে বিধিনিষেধ জারি ছিল বিভিন্ন দেশে। এতে বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থা ব্যাহত হয়। লাফিয়ে বাড়ে মূল্যস্ফীতির হার। এর প্রভাব আছড়ে পড়েছে বিশ্বের শীর্ষ অর্থনীতি যুক্তরাষ্ট্রের ওপরও।

সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ঊর্ধ্বমুখী জীবনযাত্রার ব্যয় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে মার্কিন নিম্ন আয়ের পরিবার। এতে দেনার শরণাপন্ন হচ্ছেন মার্কিনরা। লেনদেন বেড়েছে ক্রেডিট কার্ডে।

নিউইয়র্ক ফেডারেল রিজার্ভ জানায়, এ বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) যুক্তরাষ্ট্রের পরিবারগুলোর দেনা প্রথমবারের মতো ১৬ লাখ কোটি ডলারের কোটা পার করেছে। দেশটিতে এরই মধ্যে বেড়েছে ঋণের ব্যয়। সুদহার বাড়িয়ে চলেছে মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ সত্ত্বেও দ্বিতীয় প্রান্তিকে ক্রেডিট কার্ডের ব্যালেন্স বেড়েছে ৪ হাজার ৬০০ কোটি ডলার। এক বছরে ক্রেডিট কার্ডে দেনা বেড়েছে ১৩ শতাংশ বা ১০ হাজার কোটি ডলার। দেনা বৃদ্ধির হার গত ২০ বছরের সর্বোচ্চ ছিল। ব্যালেন্স সম্পূর্ণ পরিশোধ না করা হলে ক্রেডিট কার্ডে সাধারণত উচ্চ সুদের হার চার্জ করা হয়।

ফেডারেল রিজার্ভ বলছে, ক্রেডিট কার্ডে লেনদেন বৃদ্ধির হারের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের অনিয়ন্ত্রিত মূল্যস্ফীতির হারের ছবি প্রতিফলিত হয়েছে। দেশটিতে বর্তমানে মূল্যস্ফীতির হার চার দশকের সর্বোচ্চে পৌঁছেছে। মূল্যস্ফীতির হার বাড়ার কারণে মার্কিনদের জীবনযাত্রার ব্যয় ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। নিউইয়র্ক ফেডারেলের গবেষকরা বলেন, ঋণের বোঝা বাড়ার মাধ্যমে এটা স্পষ্ট যে মার্কিনদের নিত্যদিনকার জীবনযাপনে মূল্যস্ফীতির হারের প্রভাব লক্ষণীয়।

এদিকে সুদহার বাড়িয়ে চলেছে মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সম্প্রতি বেঞ্চমার্ক সুদহার তিন প্রান্তিকের ৭৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়েছে ফেড। মূল্যস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণে আনতে সুদহার বাড়ানোর পক্ষে ভোট দিয়েছেন ফেডের সদস্যরা।

১৯৮০ সালের পর থেকে পণ্যদ্রব্যের দাম এত বাড়েনি। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জের ধরে বিশ্ববাজারে জ্বালানি সংকট দেখা দিয়েছে। খাদ্যের সঙ্গে রয়েছে জ্বালানির যোগ। পশ্চিমাদের সঙ্গে কোনো ধরনের লেনদেন করতে নারাজ রাশিয়া। উপরন্তু রাশিয়াকেও বয়কট করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্র দেশগুলো। এ ধারাবাহিকতায় দাম বেড়েছে জ্বালানি ও খাদ্যের।

এ বিষয়ে ফেডের কর্মকর্তারা বলেন, উৎপাদন ও ব্যয় কমেছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে কর্মসংস্থান বেড়েছে মার্কিনদের। বেকারত্বের হারও কম রয়েছে দেশটিতে। যদিও মূল্যস্ফীতির হার এখনো নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি। কভিড-১৯ মহামারীর কারণে সরবরাহ ও চাহিদায় অসামঞ্জস্য তৈরি হয়েছে। খাদ্য ও জ্বালানির দামের ঊর্ধ্বমুখিতার চাপ অব্যাহত রয়েছে।

ফেডের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে ২৩ কোটি ৩০ লাখ নতুন ক্রেডিট কার্ডের অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। ২০০৮ সালের পর এত বেশি ক্রেডিট কার্ডের অ্যাকাউন্ট আর খোলা হয়নি। উচ্চ মূল্যস্ফীতির হারের কারণে সঞ্চয় করতে পারছে না মার্কিনরা। ব্যুরো অব লেবার স্ট্যাটিসটিকসের তথ্যে বলা হয়, জুনে ব্যক্তিগত সঞ্চয়ের হার কমে দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ১ শতাংশ।