[ অনলাইন ] 14/08/2022
 
অভিজ্ঞ ব্যাংকার সঙ্কটে পড়বে ব্যাংকিং খাত
অভিজ্ঞ ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সঙ্কটে পড়তে যাচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত তিন ব্যাংক। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের এমডি আতাউর রহমান প্রধান, রূপালীর এমডি ওবায়দুল্লাহ আল মাসুদ ও অগ্রণীর এমডি শামস-উল ইসলামের চুক্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে চলতি মাসে। তাদের কারও কারও বয়স ৬৫ বছর হতে আর অল্প কিছুদিন বাকি।

এসব ব্যাংকারদের প্রায় সবাই ৩৫-৪০ বছরের ব্যাংকিং অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ। এজন্য কোম্পানি আইন সংশোধন করে কিংবা নির্বাহী আদেশে সরকার তাদের পুনরায় কাজ করার সুযোগ দিতে পারে বলে আলোচনা চলছে ব্যাংকিং খাতে।

জানা গেছে, বিভিন্ন ব্যাংকের প্রায় ১৮০ অফিসার করোনায় নিহত হলেও তারা একদিনের জন্য ব্যাংক বন্ধ রাখেননি। করোনায় একাধিকবার আক্রান্ত হলেও এসব এমডিরা নিয়মিত অফিস করেছেন। দিন-রাত জুম মিটিং করে বা সরাসরি পরিদর্শন করে সারাদেশের সকল শাখাকে সচল রেখে বৈশ্বিক বিপর্যয় কেটে উঠতে সরকারের সহযোগী হয়েছেন।
ডিজিটাল বাংলাদেশ পুরস্কার ২০২২

ডিজিটাল বাংলাদেশ পুরস্কার ২০২২

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের প্রায় সবই এখন লাভজনক অবস্থানে রয়েছে। তাদের লোকসানি শাখা কমেছে। ঋণ বিতরণ ও ডিপোজিট অনেক বেড়েছে। করোনায় প্রণোদনা বিতরণ বা কৃষিঋণ বিতরণে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করেছে। বৈদেশিক রেমিটেন্স সংগ্রহ ও টার্গেট অতিক্রম করেছে। সকল সূচকের উন্নয়নের পেছনেই এসব অভিজ্ঞ ব্যাংকারদের দিন-রাত ঘাম ঝরানো পরিশ্রম রয়েছে।

করোনার বিপর্যয়কালীন দীর্ঘ প্রায় ২ বছর ঠিকভাবে পরিকল্পনা মোতাবেক কাজ করতে না পারলেও বয়সের কঠিন শর্তে তাদের চাকরি এখন শেষ পর্যায়ে। যদিও ভারত, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, পর্তুগালসহ বিশ্বের বহু দেশ চাকরিবিধি সংশোধন করে অভিজ্ঞ ব্যাংকারদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাচ্ছে রাষ্ট্রের প্রয়োজনে। প্রতিবেশী দেশ ভারতে এখন ব্যাংকের এমডির বয়স সীমা ৭০ বছর।

আর্থিক খাত বিশ্লেষকরা বলছেন, একজন ব্যাংক এমডি একদিনে তৈরি হয়নি। ব্যাংকারদের চাকরির যখন ৬৫ বছরের আইন করা হয়েছিল তখন বাংলাদেশের গড় আয়ু ছিল ৬০-এর মতো। এখন গড় আয়ু ৭৩ বছর। তাছাড়া গত প্রায় ২ বছর অভিজ্ঞ ব্যাংকাররা পরিকল্পনা মোতাবেক কাজ করতে পারেনি।

এসব দিক বিবেচনায় নিয়ে সরকার অভিজ্ঞ ব্যাংকারদের চাকরি মেয়াদ ৬৭ বছর করতে পারে। সরকারের হাতে এ ক্ষমতা থাকলে সরকার যাকে যোগ্য মনে করবে তাকেই নতুন করে নিয়োগ দিতে পারবে এবং প্রাইভেট ব্যাংকের বোর্ড যাকে যোগ্য ও প্রয়োজন মনে করবে তার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন চাইতে পারবে।

অনুমোদন দেয়া না দেয়া বা কাউকে রাখা না রাখার সকল ক্ষমতা থাকবে সরকারের হাতে কিন্তু শুধু বয়সের দোহাইতে কোন অভিজ্ঞ ও কর্মক্ষম ব্যাংকারের সেবা থেকে জাতি বঞ্চিত হবে না।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে এখন সারা বিশ্বের অর্থনীতিই ঝুঁকিতে। দিনদিন রিজার্ভ কমছে। এর মধ্যে যদি বাংলাদেশের সব বড় ব্যাংকে নতুন এমডি আসে তাহলে ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’র মতো নতুনদের রীতিমতো হাত-পা বেঁধে সমুদ্রে সাঁতার কাটতে দেয়ার মতো হবে। এটা বিপদগ্রস্ত অর্থনীতির জন্য বেশ ঝুঁকিপূর্ণ হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সদ্য সাবেক গবর্নর ৬৭ বছর পর্যন্ত কাজ করার সুযোগ পেয়ে বেশ ভালই করছেন।

তিনি বলেন, সরকার কোম্পানি আইন সংশোধন করে বা নির্বাহী আদেশ বলে অভিজ্ঞ ব্যাংকারদের ৩৫-৪০ বছরের অভিজ্ঞতা আরও অন্তত ২ বছর বৃদ্ধি তথা বয়স সীমা ৬৭ করে দেশের কাজে লাগাতে পারেন। করোনা উত্তর প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়ন করা এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ঝুঁকিতে থাকা অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে অভিজ্ঞ ব্যাংকারদের খুব প্রয়োজন।

নাম না প্রকাশ করার শর্তে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন শীর্ষ নির্বাহী বলেন, সরকার চাইলেই অভিজ্ঞ ব্যাংকারদের ২ বছর চাকরিকাল বৃদ্ধি করতে পারেন। এর জন্য কোম্পানি আইন সংশোধন বা নির্বাহী আদেশের কোন প্রয়োজন নেই। এটা একান্তই বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রবিধির বিষয়। সরকার চাইলেই গবর্নর এ প্রস্তাব বাংলাদেশ ব্যাংকের বোর্ডে তুলবেন অনুমোদনের জন্য।

বোর্ড অনুমোদন করলেই বাংলাদেশ ব্যাংক প্রজ্ঞাপন জারি করবে এবং সে মোতাবেক সরকার সিদ্ধান্ত নিবে কোন এমডির চাকরিকাল বাড়বে বা বাড়বে না। এটা সরকারকে ব্যাংক পরিচালনায় আরও গতিশীল করবে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে শুধু প্রধান বিচারপতি এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নরের চাকরিতে বয়স সীমা ৬৭ করা হয়েছে আইনী ভিত্তিতে। ব্যাংকারদের বেলায় এমন কোন আইনের প্রয়োজন নেই, সরকারের ইচ্ছাই যথেষ্ট এটার জন্য।