[ P-13 ] 01/11/2022
 
২০০ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে গ্রেপ্তার ৬
অনলাইনে জুয়ার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে উল্কা গেমস লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) জামিলুর রশিদসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)।

র‌্যাবের ভাষ্য, গ্রেপ্তারকৃতরা অনলাইন গেম বানানোর কথা বলে তিন পাত্তি গোল্ডসহ বিভিন্ন অনলাইন জুয়ার মাধ্যমে দেশ থেকে তিন বছরে অন্তত ২০০ কোটি টাকা বিভিন্ন সময়ে পাচার করেছেন।

গতকাল সোমবার সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

গত রবিবার রাতে র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-৪-এর অভিযানে রাজধানীর মহাখালী ও উত্তরা এলাকা থেকে এই ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

তাঁরা হলেন জামিলুর রশিদ (৩১), সায়মন হোসেন (২৯), রিদোয়ান আহমেদ (২৯), রাকিবুল আলম (২৯), মুনতাকিম আহমেদ (৩৭) ও কায়েস উদ্দিন আহম্মেদ (৩২)।

তাঁদের কাছ থেকে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ল্যাপটপ, সিপিইউ, সার্ভার স্টেশন, হার্ড ডিস্ক, স্ক্যানার, ডিভিডি ড্রাইভ, বিভিন্ন ব্যাংকের চেকবই, ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড, পাসপোর্ট, জাতীয় পরিচয়পত্র, নগদ টাকাসহ অন্যান্য সরঞ্জাম জব্দ করা হয়েছে।

র‌্যাবের মুখপাত্র বলেন, উল্কা গেমসের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও জামিলুর রশিদ শৈশব থেকে মোবাইল গেমে আসক্ত। ২০১৫ সাল থেকে গেমস তৈরির কাজ শুরু করেন। হিরোজ ৭১ ও মুক্তি ক্যাম্প নামের দুটি গেম নির্মাণের জন্য ২০১৭ সালে তিনি সরকারের কাছ থেকে ৩০ লাখ টাকা অনুদান পান। পরে ২০১৭ সালে মুনফ্রগ ল্যাবের সঙ্গে পরিচয় হয় তাঁর। ২০১৮ সালে ল্যাবের অনলাইন জুয়া অ্যাপ তিন পাত্তি গোল্ডের জনপ্রিয়তা বাড়ায় গেমটিকে আরো ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেন তিনি। দেশে বৈধতা প্রদানে ২০১৯ সালে তিনি উল্কা গেমস প্রাইভেট লিমিটেড নামের একটি গেমিং ডেভেলপমেন্ট প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন নেন। একই বছর মুনফ্রগের ০.০১ শতাংশ উল্কা গেমসকে প্রদানের মাধ্যমে দেশে গেমিং খাতের উন্নয়নে প্রায় দেড় কোটি টাকার চুক্তি করা হয়। ওই বছরই গেম ডিজাইন কনসালট্যান্ট ও বাংলাদেশে নিযুক্ত কর্মকর্তা হিসেবে মুনফ্রগ থেকে দেড় লাখের বেশি টাকা বেতনে যুক্ত হন তিনি। পরে উল্কা গেমস প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সিইও হিসেবে নিযুক্ত হয়ে তিনি মুনফ্রগ থেকে মাসিক প্রায় চার লাখ টাকা বেতন পেতেন। এ ছাড়া তিনি বার্ষিক আয়ের ৯০-১০০ শতাংশ বোনাস পেতেন। তাঁর বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে বেশ কিছু টাকা, একটি দামি গাড়ি এবং ঢাকা ও ঢাকার বাইরে ফ্ল্যাট ও জমি রয়েছে।   

র‌্যাব জানায়, গেম ডেভেলপমেন্টের উদ্দেশ্যে উল্কার যাত্রা শুরু হলেও গেম ডেভেলপমেন্ট না করে তিন পাত্তি গোল্ডসহ বিভিন্ন অনলাইন জুয়ার মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ দেশের বাইরে পাচার করছিলেন এই চক্রের সদস্যরা। আর এভাবেই তিন পাত্তি গোল্ড যাত্রা শুরু করে ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন জায়গায়।

র‌্যাব জানায়, তিন পাত্তি গোল্ডে প্রায় ৯ লাখ নিয়মিত গেমার প্রতিদিন প্রায় ৫০ হাজার কোটি চিপস বিক্রি করত।  

তাদের তথ্য মতে, প্রতি মাসে অনলাইনে এই জুয়া খেলার জন্য দু-তিন কোটি টাকার চিপস বিক্রি করত তারা। গত প্রায় তিন বছরে তিন পাত্তি গোল্ডের মাধ্যমে ২৯ কোটি টাকা বৈধভাবে এবং অবৈধভাবে আরো কয়েক গুণ টাকা পাচার করা হয়েছে।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈনের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে উল্কা গেমসের চারটি অ্যাকাউন্টে প্রায় ৮০ কোটি টাকা রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে দেশের বাইরে অনলাইন জুয়ার অর্থ পাঠাত।