[ বাংলারজমিন ] 10/11/2022
 
মুক্তিযোদ্ধার সন্তান সেজে ভাতা উত্তোলনের অভিযোগ তদন্ত কমিটি গঠন
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর ১, ২, ৩নং ওয়ার্ডের মহিলা কাউন্সিলর নিলুফা ইয়াসমিন-এর বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান সেজে ভাতা উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে বুধবার একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এর আগে গত সোমবার এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একরামুল ছিদ্দিক বরাবর লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন নারী উদ্যোক্তা ছাবিনা ইয়াসমিন পুতুল। নবীনগর সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপক জাকারিয়া পারভেজকে তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। কাউন্সিলর নিলুফা আসল পরিচয় গোপন করে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা ল্যান্স নায়েক মো. ওয়াহিদুজ্জামান (মুক্তিযোদ্ধা গেজেট নং-৩৭৯৮) এর সন্তান হিসেবে পরিচয় দেন।  অভিযোগে দাবি করা হয়, কাউন্সিলর নিলুফা ইয়াসমীন ২০১৮ সালের অক্টোবর মাস থেকে প্রতিমাসে ওই শহীদ মুক্তিযোদ্ধার ভাতা ৩০ হাজার এবং চাকরির পেনশন প্রতিমাসে ১২ হাজার টাকা করে উত্তোলন করে আসছেন। তার এসএসসি’র সার্টিফিকেটে প্রদত্ত প্রকৃত পিতার নাম গোপন করে স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে বড়িকান্দি ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ওই শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সন্তান পরিচয়ের জন্য ইউপি চেয়ারম্যানের সনদ ও প্রত্যয়ন সংগ্রহ করে অনৈতিকভাবে কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিয়ে শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সন্তান বনে যান। এছাড়াও মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের জন্য সরকারের ঘোষিত ঋণও নিয়েছেন। তিনি প্রতারণার মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় কোষাগারের বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। তার ওই এসএসসি পাসের সর্টিফিকেটে প্রকৃত বাবার নাম আবদুর রহিম।

মুক্তিযোদ্ধা ভাতা উত্তোলনের আবেদনপত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেট দাখিলের বিধান না থাকায় সুযোগটা নেন অভিযুক্ত কাউন্সিলর। কিন্তু তিনি যখন ২০১৫ সালে বয়স সংশোধনের জন্য নির্বাচন কমিশনে যে আবেদন করেন সেখানে তিনি বয়স প্রমাণের জন্য তার ওই এসএসসি’র সার্টিফিকেট দাখিল করেন।  এ ব্যাপারে বড়িকান্দি ইউনিয়নের বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ জাকির  হোসেন বলেন, ওয়াহিদুজ্জামানের কোনো সন্তান আছে কিনা আমি জানি না। শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেট তো যুক্তিতর্ক দিয়ে খণ্ড করা যাবে না, সেখানে যার নাম সেই প্রকৃত বাবা। এ ভাতা পাওয়ার আবেদনে আমার স্বাক্ষর নিতে আসছিল, আমি কিন্তু স্বাক্ষর দেইনি। পরে কে বা কারা করেছে আমি জানি না। মেয়েটা উনার কি না- দু্‌’চারজন এই ব্যাপারে সন্দেহ করছে।  এ বিষয়ে নারী উদ্যোক্তা সাবিনা ইয়াসমিন পুতুল বলেন, তার শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেটই প্রমাণ করে তিনি মুক্তিযোদ্ধার সন্তান নয়। রাষ্ট্রের সঙ্গে এই চরম প্রতারণার বিষয়টি আমাকে পীড়া দেয় বিধায় আমি সচেতন নাগরিক হিসেবে অভিযোগ দাখিল করি। তদন্ত সাপেক্ষে রাষ্ট্রীয় অর্থ আদায়সহ প্রতারক কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তিনি। এ ব্যাপারে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আজাহারুল ইসলাম লালু বলেন, উনি একবার মুক্তিযোদ্ধা সন্তানের সার্টিফিকেটের জন্য মুক্তিযোদ্ধা সংসদ অফিসে এসেছিলেন। আমি উনার এনআইডি কার্ড দেখলাম, তার জন্ম  ১৯৭৮ সালে। উনার বাবা যদি ১৯৭১ মৃত্যুবরণ করে থাকেন তাহলে তার জন্ম ১৯৭৮ সালে হয় কীভাবে? এ নিয়ে সন্দেহ হওয়ায় তিনি সে সময় সার্টিফিকেট দেননি। এরপর কি হয়েছে তিনি তা জানেন না। এ ব্যাপারে নবীনগর মুক্তিযোদ্ধ সংসদের দায়িত্বপাপ্ত কমান্ডার ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার একরামুল ছিদ্দিক অভিযোগ প্রাপ্তির বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, সুষ্ঠু তদন্তের জন্য সোনালী ব্যাংক ব্যবস্থাপককে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।   এ ব্যাাপারে সোনালী ব্যাংক এর ব্যবস্থাপক জাকারিয়া পারভেজ বলেন, নির্বাহী কর্মকর্তা মহোদয়ের ফরওর্য়াডিং পেয়েছি। শহীদ মুক্তিযোদ্ধা, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের সকল কার্যক্রম পরিচালনা করে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট। বিষয়টি ইউএনও মহোদয়ের মাধ্যমে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়ে দেয়া হবে।