[ পাতা ১ ] 11/11/2022
 
অর্থ পাচারেও জড়িত চাটমোহরের অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান
পাবনার চাটমোহর ডিগ্রি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এতে জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ ৯৮ লাখ ১৬ হাজার টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গেছে। এছাড়া ১ কোটি ৫ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র ভাঙিয়ে গোপন করায় মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ আনা হয়েছে অভিযোগপত্রে। দুদকের পাবনার সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সাধন চন্দ্র সূত্রধর গত ৮ আগস্ট সংশ্লিষ্ট আদালতে এই অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ২৭ অক্টোবর ‘টাকার মেশিন চাটমোহর ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মিজানুর’ শিরোনামে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন যুগান্তরে ছাপা হয়। এরপর কলেজ ফান্ডের কোটি কোটি টাকা লুটপাটের প্রাথমিক তথ্যপ্রমাণ পেয়ে অধ্যক্ষকে সাময়িক বরখাস্ত করে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর। এই ধারাবাহিকতায় ২০২১ সালের ১১ এপ্রিল মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। দেড় বছর এই মামলা তদন্ত শেষে চার্জশিট দাখিল করে।

নথিপত্রে দেখা গেছে, সম্পদ বিবরণীতে তথ্য গোপন করায় দুদকের তদন্তকারী কর্মকর্তা অধ্যক্ষের ব্যয়বহুল বাড়িঘর তৈরিতে প্রকৃত খরচ নির্ধারণে গণপূর্তের প্রকৌশলীদের সহযোগিতাও নিয়েছেন। এ বিষয়ে অভিযোগপত্রে বলা হয়, ২০২০ সালের ২৪ আগস্ট অধ্যক্ষ মিজানুর রহমানের উপস্থিতিতে ঈশ্বরদীর কবি মকবুল হোসেন সড়কে ৫ তলা ভিতবিশিষ্ট ৪ তলা বাড়ি পরিমাপ করা হয়। পাবনা গণপূর্তের প্রকৌশলী টিম এই পরিমাপ সম্পন্ন করে। নির্বাহী প্রকৌশলীর প্রতিবেদনে দেখা গেছে, মিজানুর রহমান ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে ঠিকাদারি লভ্যাংশ ছাড়া বাড়িটি নির্মাণে এক কোটি ৯ লাখ ১৪ হাজার ২৮১ টাকা খরচের মতামত দিয়েছেন। আর মিজানুর রহমান দুদকে দেওয়া সম্পদ বিবরণীতে এই বাড়ি নির্মাণে খরচ দেখিয়েছেন ৫০ লাখ টাকা। এই হিসাবে শুধু এক বাড়ি নির্মাণেই ৫৯ লাখ টাকা গোপনের হিসাব বের করে দুদক। এক্ষেত্রে তিনি বাড়ি নির্মাণে ৫৪ লাখ টাকা অবৈধ পন্থায় আয় করেছেন বলে উল্লেখ করা হয় অভিযোগপত্রে।

সম্পদ বিবরণীতে ৬৮ লাখ টাকা দায়দেনার পরিমাণ উল্লেখ করলেও এর সপক্ষে প্রমাণ দিতে ব্যর্থ হন। এ বিষয়ে বলা হয়, মিজানুর রহমান সম্পদ বিবরণীতে ৫০ লাখ টাকা ঋণসহ আয়কর রিটার্ন অনুযায়ী আয়ের পরিমাণ উল্লেখ করেছেন এক কোটি ৩২ লাখ ৩৭ হাজার ৪৮২ টাকা। এখান থেকে পারিবারিক ব্যয় ১৬ লাখ ৩০ হাজার ৫৮৫ টাকা। ওই আয়ের বিপরীতে তার কেনা স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ১ কোটি ৮০ লাখ ২৭ হাজার ২০১ টাকা। সুতরাং তিনি জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে উৎসবহির্ভূত ৯৮ লাখ ১৬ হাজার ৫০৪ টাকা মূল্যের সম্পদ অর্জনপূর্বক ভোগদখলে রেখে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪-এর ২৭(১) ধারার শাস্তিযোগ্য অপরাধ করছেন। এছাড়া মানি লন্ডারিং বিষয়ে বলা হয়, মিজানুর রহমান মিথ্যা তথ্য প্রদান এবং ঘুস দুর্নীতির মাধ্যমে উপার্জিত অর্থ দিয়ে ১ কোটি ৫ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র কেনা এবং তা ভেঙে নিজ নামে বা অন্য নামে স্থানান্তর করার মাধ্যমে মানি লন্ডারিং অপরাধ করেছেন। এই অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪-এর (২৬)২ ও (২৭)১ এবং মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২-এর ৪৯(২) ও ৪(৩) ধারার অপরাধ প্রমাণে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়।