[ অনলাইন ] 17/04/2024
 
ক্ষমতার অপব্যবহার-টাকা আত্মসাৎ : বিশ্বনাথ পৌর মেয়রের বিরুদ্ধে অনাস্থা
ক্ষমতার অপব্যবহার, অসৌজন্যমূলক আচরণ, স্বজনপ্রীতিসহ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সিলেটের বিশ্বনাথ পৌরসভার মেয়রের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব করেছেন দুই প্যানেল মেয়রসহ সাত কাউন্সিলর।

মঙ্গলবার স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব বরাবরে ‘স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) আইন ২০০৯ এর ৩৮ ধারা মোতাবেক’ অনাস্থা প্রস্তাবটি দাখিল করেন কাউন্সিলররা।

বিশ্বনাথ পৌরসভার মেয়র মুহিবুর রহমানের বিরুদ্ধে এই অনাস্থা প্রস্তাবে স্বাক্ষর করেছেন বিশ্বনাথ পৌরসভার প্যানেল মেয়র-১ রফিক মিয়া, প্যানেল মেয়র-২ সাবিনা বেগম, ২নং সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রাসনা বেগম, ৩নং সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর লাকী বেগম, ১নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রাজুক মিয়া রাজ্জাক, ৭নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জহুর আলী ও ৯নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শামীম আহমদ।

এর আগে গত ৯ এপ্রিল দুপুরে পৌরসভা কার্যালয়ের কাউন্সিলর হল রুমে প্যানেল মেয়র-১ রফিক মিয়ার সভাপতিত্বে এক সভায় অনাস্থার প্রস্তাব গ্রহণ করেন কাউন্সিলররা। পরে ঈদ ও নববর্ষের ছুটি শেষে অনাস্থা প্রস্তাবটি দাখিল করেন তারা।

তবে এসব বিষয়ে বক্তব্য জানতে বিশ্বনাথ পৌরসভার মেয়র মুহিবুর রহমানের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

অনাস্থা প্রস্তাবে কাউন্সিলররা উল্লেখ করেন, “দুর্নীতি করার সুবিধার্থে পৌর মেয়র মুহিবুর রহমান পৌরসভার কার্যালয় থেকে সকল অফিসিয়াল কাগজপত্র তার বাসভবনে নিয়ে গেছেন। এমনকি পৌর কার্যালয় থেকে পৌরসভার ফার্ণিচার-ল্যাপটপ মেয়র তার নিজ বাসভবনে নিয়ে অফিসের সকল স্টাফ দিয়ে পৌর কার্যালয়ের পরিবর্তে বাসভবনে অফিসের কার্যক্রম চালাচ্ছেন।

“পৌরসভার প্রত্যেক মাসের সাধারণ সভা পৌর কার্যালয়ে না করে, মেয়র মুহিব তার বাসভবনে করেন। এতে জনগণ সঠিক সেবা থেকে বঞ্চিত ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন।

“মুহিবুর রহমান পৌর মেয়রের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে স্থায়ী কমিটি ও টিএলসিসির কমিটির কোনো সভা করেননি। পৌর মেয়র মুহিবুর রহমান পৌর পরিষদের সিদ্ধান্ত ছাড়া একক ক্ষমতা বলে মাস্টাররোলে নিজের আত্মীয়-স্বজনকে পৌরসভায় নিয়োগ দিয়ে জনপ্রতি ২-৩ লক্ষ টাকা করে ঘুষ নিয়েছেন।

“মেয়র মুহিব সরকারের রাজস্ব খ্যাত থেকে বাজেট অনুসরণ না করে বিভিন্ন নামে-বেনামে ভুয়া বিল-ভাউচার তৈরি করে, ডেঙ্গু মশক নিধন ও কোভিড-১৯ নামে সরকারি টাকা এবং বিশ্বনাথ পুরান বাজারের গরু-হাটের উন্নয়ন কাজ দেখি বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ করেছেন।”

অনাস্থা প্রস্তাবে আরও বলা হয়েছে, “মেয়র মুহিব রাজস্ব খাত থেকে ময়লা-আবর্জনা পরিস্কার করার ব্যয় দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। পৌরসভার টাকা অন্য ইউনিয়নে ও অন্য উপজেলায় স্বদর্পে বিতরণ করেন।

অথচ পৌরসভার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা (ল্যান্ড ফিল্ড) স্থাপনা না করেই পৌর এলাকার ময়লা-আবর্জনা শহরের প্রাণ কেন্দ্রে অবস্থিত প্রবাসী চত্ত্বর, হাজী মফিজ আলী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজ ও মাদানিয়া মাদ্রাসার পাশে ও বাসিয়া নদীতে ডাম্পিং করছেন।

পৌর মেয়র মুহিব পৌরসভার উন্নয়ন কাজের জন্য বিভিন্ন সময় দরপত্র আহ্বান ছাড়া, নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করে পরিষদের অগোচরে নিজের (মেয়রের) পছন্দের লোক দ্বারা পরিচালনা করে কাউন্সিলরগণের প্রত্যয়ন ছাড়াই লক্ষ লক্ষ টাকার বিল পরিশোধের ব্যবস্থা করে দীর্ঘদিন ধরে টাকা আত্মসাৎ করে আসছেন।

বিশ্বনাথ পৌরসভার নামে সোনালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, এজেন্ট ব্যাংকিং, ব্যাংক এশিয়ায় পরিষদের অজান্তে অনেক অ্যাকাউন্ট আছে এবং অ্যাকাউন্টগুলোতে লক্ষ লক্ষ টাকাও জমা ছিল। মেয়র মুহিব নিজের একক ক্ষমতা বলে এসব অ্যাকাউন্ট থেকে কিছু পৌর কর্মচারীর মাধ্যমে সেই টাকাগুলো উত্তোলন করে ভুয়া চালানের মাধ্যমে কোনো প্রকল্প না করেই লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। ”

অনাস্থা প্রস্তাবে আরও বলা হয়েছে, “মেয়র মুহিব পৌরসভার মাসিক সভায় সাদা কাগজে কাউন্সিলরদের স্বাক্ষর করিয়ে ও মাসিক রেজুলেশনের কপি না দিয়ে নিজের ইচ্ছে মাফিক কার্যবিবরণী লিখে পৌর পরিষদের সিদ্ধান্ত বলে চালিয়ে যাচ্ছেন।

“পৌর পরিষদ পৌরসভার বাৎসরিক আয়-ব্যয়ের হিসাব উপস্থাপন করার জন্য মেয়র মুহিবুর রহমানকে অনুরোধ করলেও, আজ পর্যন্ত তিনি তা করেননি।

“এছাড়া জনশ্রুতি রয়েছে মেয়র পৌরসভার সকল কার্যাদেশের বিলের জন্য গড়ে ৫% করে ঘুষ গ্রহণ করেন। এমনকি পৌর পরিষদের সভায় সবার সম্মুখে মেয়র নিজেও স্বীকার করেছে। যার একটি অডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

“মেয়র নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করে পৌরসভার নকশাকার আশরাফুজ্জামান চয়নকে অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়ে ‘সহকারী প্রকৌশলী’ পদে এবং আয়কর কর্মকর্তা সাজেদুল হককে অ্যাকাউন্টন্টেস পদে পদায়ন করে নিজের বাসায় বসিয়ে নামে, বেনামে ভুয়া বিল-ভাউচার বানিয়ে রাজস্ব খাত থেকে টাকা উত্তোলন করে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করছেন।

নিজের ব্যক্তিগত কাজে গাড়ি ব্যবহার করে সরকারি আইন উপেক্ষা করে রাজস্ব থেকে গাড়ির তেল ক্রয়, গাড়ির ড্রাইভারের বেতন পরিশোধ, গাড়ির মেরামত ব্যয় দেখিয়ে টাকা আত্মসাৎ করছেন।”