[ অনলাইন ] 18/04/2024
 
কাজ না করেই ১২ লাখ টাকা তুলে আত্মসাৎ
কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর উপজেলার ফরিদপুর ইউনিয়নে কাজ না করেই ৬টি প্রকল্পের ১২ লাখ টাকা অগ্রিম উত্তোলন করে আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে। সরকারি নীতিমালা অমান্য করে ব্যাপক অনিয়মের মাধ্যমে টাকা উত্তোলনে সহযোগিতা করেছেন ইউএনও ফারজানা আলম। এছাড়াও আরও কয়েকটি প্রকল্পে কয়েক লাখ টাকার দুর্নীতি, অনিয়ম, লুটপাটের অভিযোগ করা হয়েছে ইউএনও’র বিরুদ্ধে। কুলিয়ারচর উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ কায়কোবাদ গত ৮ এপ্রিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের কাছে লিখিতভাবে একাধিক অভিযোগ করেছেন।

জানতে চাইলে ইউএনও ফারজানা আলম ও ফরিদপুর ইউপি চেয়ারম্যান এসএম আজিজুল্লাহ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, অভিযোগগুলো মিথ্যা, বানোয়াট ও কাল্পনিক।

অভিযোগে জানা যায়, কুলিয়ারচরের ফরিদপুর ইউনিয়নে গত ১২ মার্চ উপজেলা প্রকৌশলী এসএম কিবরিয়া ৬টি উন্নয়ন প্রকল্পের প্রাক্কলন বাবদ ১২ লাখ টাকা দেওয়ার হিসাব দেন ইউএনওর কাছে। স্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তর করের ১ শতাংশ হিসাবে প্রাপ্ত রাজস্ব থেকে উন্নয়নের জন্য এ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র অনুযায়ী ফরিদপুর ইউনিয়নের জনসংখ্যা অনুযায়ী এখানে চার লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়ার কথা। সেখানে দেওয়া হয় ১২ লাখ টাকা।

১২ মার্চ ৬টি প্রকল্পের প্রাক্কলন দেওয়ার পর কাজ না করেই ১৪ মার্চ ইউএনও ফারজানা আলম ফরিদপুর ইউপি চেয়ারম্যান এসএম আজিজুল্লাকে ১২ লাখ টাকা উপজেলা অ্যাকাউন্টস থেকে উত্তোলন করে তাকে দেন। নীতিমালা অনুযায়ী কাজ করার পর টাকা প্রদান করার কথা। অভিযোগকারীর অভিযোগ, তারা দুজন ১২ লাখ টাকা ভাগাভাগি করে আত্মসাৎ করেছেন।

অভিযোগে আরও বলা হয়, কুলিয়ারচরের দোয়ারিয়া গ্রামের এক কিলোমিটার খাল টেন্ডার ছাড়াই খননের নামে ইউএনও স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তিকে মৌখিক অনুমতি দিয়ে কয়েক লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিতে মাসিক সভার একাধিক রেজুলেশনে চেয়ারম্যানের স্বাক্ষর ছাড়াই একাধিক প্রকল্পের টাকা উত্তোলন করে আংশিক কাজ করে কয়েক লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন ইউএনও।

উপজেলা পরিষদ হলরুমের জন্য ভুয়া টেন্ডার দেখিয়ে ২ লাখ টাকার চেয়ার কেনার কথা থাকলেও পুরো টাকার চেয়ার কেনা হয়নি। মৎস্যজীবীদের প্রশিক্ষণ, উপজেলা পরিষদের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মচারীদের দক্ষতা বৃদ্ধি সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ, নুরুন্নাহার পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ল্যাবে ৪০ জন শিক্ষার্থীর প্রশিক্ষণে মোট ৭ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলেও তার অর্ধেক টাকা ব্যয় করে বাকি টাকা ইউএনও আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগে বলা হয়।

আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত অসহায় পরিবারের জন্য উত্তোলিত এক লাখ টাকা নামমাত্র দুএকজনকে দিয়ে বাকি টাকা আত্মসাৎ করেছেন তিনি। ভূমি অফিসে কম্পিউটার ও আনুষঙ্গিক ক্রয় বাবদ ১ লাখ ৩১ হাজার ৪০০ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলেও এ টাকায় কম্পিউটার কেনা হয়নি বলে অভিযোগে বলা হয়। ইউএনও ফারজানা আলম কুলিয়ারচরে বদলি হয়েছেন সংসদ নির্বাচনের কয়েকদিন আগে। এর আগে তিনি টাঙ্গাইলের সখিপুর উপজেলায় কর্মরত অবস্থায় সেখানে অনেক অনিয়ম-দুর্নীতি করেছেন। এ সংক্রান্ত একাধিক খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।

অভিযোগের বিষয়ে ইউএনও ফারজানা আলমের সঙ্গে মঙ্গলবার দুপুরে তার অফিসে যুগান্তর প্রতিনিধির কথা হয়। এ সময় তিনি সব অভিযোগ অস্বীকার করেন। তবে পরিষদের মাসিক রেজুলেশনে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের স্বাক্ষর ছিল না বলে স্বীকার করেন। কারণ হিসাবে বলেন, তিনি দেশে নেই বা অসুস্থ ছিলেন। ১২ লাখ টাকা উত্তোলনের বিষয়ে তিনি বলেন, টাকা দেওয়ার পর চেয়ারম্যান কাজ করবেন যা পরে প্রকৌশল বিভাগ তদন্ত করবে। বর্তমানে কাজ চলমান আছে প্রকল্পগুলোতে। এছাড়া অন্যান্য প্রকল্পগুলোতে সব কাজই চলমান রয়েছে। কিছু কাজ হয়েছে, কিছু কাজ বাকি আছে বলে তার দাবি। বাকি কাজের টাকা হাতে রয়েছে বলে তিনি জানান। তিনি দাবি করেন, কিছু লোক তার সম্মানহানিসহ অফিসকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে এ ধরনের অভিযোগ করেছে। ফরিদপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এসএম আজিজুল্লাহ যুগান্তর প্রতিনিধিকে ফোনে বলেন, ১২ লাখ টাকার ৬টি প্রকল্পের মধ্যে দুএকটি কাজ শুরু হয়েছে। বাকি কাজ চলমান রয়েছে। দুর্নীতির অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেন।

উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান সৈয়দ নুরে আলম বলেন, চেয়ারম্যান ইয়াসির মিয়া দেশের বাইরে থাকায় আমি আর্থিক ক্ষমতা পেয়েছি কিছুদিনের জন্য। ইউএনও উপজেলার সবকিছু দেখভাল করে থাকেন। তিনি বললে আমি চেকে স্বাক্ষর করি।

উপজেলা প্রকৌশলী এসএম কিবরিয়া বলেন, ইউএনও যেভাবে বলেন সেভাবে আমি কাজ করি। উন্নয়ন কাজগুলো আমি দেখলেও অন্যান্য কিছু প্রকল্প আমার দেখার ক্ষমতা নেই। তিনি বলেন, নিয়মের ভেতরেই আমি কাজ করি। তারপরও কাজ করলে ভুলভ্রান্তি হতে পারে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বুধবার দুপুরে কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক আবুল কালাম আজাদ বলেন, অভিযোগকারীর অভিযোগ আমি এখন পায়নি। অভিযোগ পেলে ঘটনাটি তদন্ত করা হবে। সরকারি নিয়মনীতির বাইরে কাজ করলে কোনো কর্মকর্তা রেহাই পাবেন না।