[ Online ] 23/04/2024
 
বেদখল জমিতে হচ্ছে লেক পার্ক
দুলাল হোসেন

সম্প্রসারিত মতিঝিল এলাকায় ১ হাজার ৭২ কাঠা জমি রয়েছে রাজধানী উন্নয়ন কর্র্তৃপক্ষের (রাজউক)। যার বেশিরভাগই দীর্ঘদিন ধরে বেদখল হয়ে আছে। সেই বেদখল হওয়া জমিতে একটি লেক পার্ক নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে রাজউক। গতকাল সোমবার প্রস্তাবিত এই লেক পার্কের জায়গা দখলমুক্ত করতে অভিযান চালিয়েছে সংস্থাটি। রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী (বাস্তবায়ন) উজ্জ্বল মল্লিক এসব তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, মতিঝিলের যে জায়গায় লেক পার্ক নির্মাণ করা হবে, সেই জায়গার বেশিরভাগই অবৈধ দখলে রয়েছে। অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করতে অভিযান চালানো হয়।

জানা গেছে, ঢাকা মহানগর বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) ২০২২-২০৩৫-এর প্রজ্ঞাপন ২০২২ সালের ২৩ আগস্ট প্রকাশ করা হয়েছে। প্রণীত ড্যাপে ১৫২৮ বর্গকিলোমিটার এলাকার ভূমির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে আবাসিক, বাণিজ্যিক ও শিল্প এলাকাসহ কৃষি, জলাশয়, বনাঞ্চল, উন্মুক্ত স্থান, পার্ক, স্কুল-কলেজ নির্মাণ, যোগাযোগ, বন্যা প্রবাহ এলাকাগুলো চিহ্নিত করার সুপারিশ করা হয়। প্রণীত ড্যাপে অনেক বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হয়, যার একটি হচ্ছে পার্ক নির্মাণ। ড্যাপের প্রস্তাব সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে মতিঝিলে পার্ক নির্মাণের উদ্যোগ নেয় রাজউক।

সম্প্রসারিত মতিঝিল এলাকায় বাংলাদেশ ব্যাংকের পেছনে রাজউকের জমিতে একটি লেক পার্ক করার উদ্যোগ নিয়েছে সংস্থাটি। প্রকল্পের নাম দেওয়া হয়েছে ‘জলাধার, পার্ক ও শিশুদের খেলার মাঠসহ বিভিন্ন নাগরিক সেবামূলক স্থাপনা নির্মাণ প্রকল্প’। গত বছর ৯ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে আয়োজিত সভায় রাজউকের প্রস্তাবিত মতিঝিল পার্কের থ্রি-ডি অ্যানিমেশনসহ পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপনা করা হয়। প্রধানমন্ত্রী লেক পার্ক করার অনুমতি দেন এবং এ বিষয়ে কিছু দিকনির্দেশনা প্রদান করেন। পরে প্রস্তাবিত প্রকল্প বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে প্রকল্পের নকশা ও প্রাক্কলন প্রস্তুতের জন্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ, ফিজিবিলি স্টাডি ও ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প পরিকল্পনা) তৈরি করা হয়।

রাজউকের তথ্য বলছে, প্রস্তাবিত মতিঝিল পার্ক প্রকল্পটি ১১ দশমিক ৮৮ একর জায়গা নিয়ে তৈরি হবে। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১৬২ কোটি ৬৯ লাখ ৫৭ হাজার টাকা। প্রকল্পে মধ্যে প্রায় সাড়ে ৮ একর আয়তনের লেক, ৪০ ফুট প্রস্তুত ১ দশমিক ১ কিলোমিটার সড়ক, ৮ ফুট প্রশস্ত ২ দশমিক ৩ কিলোমিটার ওয়াকওয়ে, ৬ হাজার ৫০০ বর্গমিটার আয়তনের শিশুদের খেলার মাঠ এবং আটতলা সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। এ ছাড়া ঢাকার প্রাচীনতম ঐতিহ্য সম্পর্কিত স্থির গ্যালারি এবং বৃক্ষরোপণ ও ল্যান্ডস্কেপিং করা হবে।

মতিঝিলে রাজউকের প্লট দখলের বিষয়টি উঠে আসে সরকারের কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেলের (সিএজি) সর্বশেষ হিসাবসংক্রান্ত কমপ্লায়েন্স অডিট রিপোর্টে। রিপোর্টটি ২০২২ সালের ২ জুন রাষ্ট্রপতির কার্যালয় ও সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়।

ওই অডিট রিপোর্টে বলা হয়েছে, রাজউকের সম্প্রসারিত মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকায় ৫৩টি বাণিজ্যিক প্লট রয়েছে। এর মধ্যে দুটি প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বাকি ৫১টি প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। এসব প্লটের আয়তন ৫৫৬ দশমিক ৮১ কাঠা। প্লটগুলো দীর্ঘদিন ধরে বেদখল হয়ে আছে।

দখলকারীরা এসব প্লটে দোকান, গাড়ির গ্যারেজ, গাড়ির কাউন্টারসহ বিভিন্ন ধরনের স্থাপনা নির্মাণ করে মাসে কোটি কোটি টাকা আয় করছেন।

অডিট রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, রাজউকের প্লটগুলোতে অবৈধভাবে যেসব দোকান নির্মাণ করা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে মামুন মোটরস, সোনালী অটোমোবাইলস, ফারুক অটোমোবাইলস, কবির অটোমোবাইল, আল-হোসেন অটোমোবাইলস, সালাম মোটর, শিহাব মোটর, হৃদয় মোটর ও স্বপ্ন মোটরসহ প্রায় দেড়শ প্রতিষ্ঠান।

রাজউকের কর্মকর্তারা বলেন, সম্প্রসারিত মতিঝিল এলাকায় প্রতি কাঠা জমির ভিত্তিমূল্য (রাজউকের ধার্যকৃত) ৩ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এসব প্লটের জমির মোট মূল্য ১ হাজার ৬৭০ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। তবে বাস্তবে প্লটগুলোর বাজারমূল্য রাজউকের ভিত্তিমূল্য থেকে আরও অনেক বেশি। সেখানকার প্রতি কাঠা জমির মূল্য প্রায় ১০ কোটি টাকা। সেই হিসাবে বেদখলে থাকার জমির মূল্য ৫ হাজার ৫৬৮ কোটি ১০ লাখ টাকা।

রাজউকের নগর পরিকল্পনা শাখার কর্মকর্তারা বলেছেন, দখলদারদের অনেকে আদালতে মামলা করে রেখেছেন। আইনি জটিলতার কারণে প্লট উদ্ধার করা যাচ্ছে না। ২০২২ সালে রাজউকের সাবেক একজন চেয়ারম্যান প্লটগুলো উদ্ধারের চেষ্টা করেছিলেন। তখন দখলদার চক্রের নানামুখী ষড়যন্ত্রের কারণে তিনি দখলমুক্ত করা থেকে পিছু হাঁটেন। প্রধানমন্ত্রী সেখানে লেক পার্ক করার অনুমোদন দিয়েছেন। এখন যেকোনো মূল্যেই এসব পার্ক উদ্ধার করা হবে।