[ অনলাইন ] 24/04/2024
 
রংধনুর রফিকের দুর্নীতি অনুসন্ধানে দুদক
রংধনু গ্রুপের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামের লাগামহীন দুর্নীতি ও বিক্রীত জমি প্রতারণার মাধ্যমে বন্ধক রেখে ২৭০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাতের অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

গতকাল সংস্থাটির এ সিদ্ধান্তের নথি বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী ইবাদত হোসেনের হাই কোর্ট বেঞ্চে দাখিল করা হয়। আদালতে এ-সংক্রান্ত রিটের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. ইয়ামিন নেওয়াজ খান। দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী শাহীন আহমেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক। ‘লাগামহীন দুর্নীতি ও বিক্রীত জমি বন্ধক রেখে প্রতারণার মাধ্যমে ২৭০ কোটি টাকা ঋণ গ্রহণপূর্বক অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ’ শীর্ষক দুদকের নথিতে বলা হয়, অভিযোগটি ব্যাংক শাখার নথি (মানি লন্ডারিং ই/আর নম্বর ৬০/২০২৩)-এর সঙ্গে একীভূত করে অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য কমিশন কর্তৃক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’

এ সিদ্ধান্ত মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ১৮ এপ্রিল দুদকের পরিচালক (মানি লন্ডারিং) গোলাম শাহরিয়ার চৌধুরী অভিযোগের নথি উপপরিচালক মো. নুর-ই-আলমের কাছে পাঠিয়েছেন। দুদকের আইনজীবী শাহীন আহমেদ খান জানান, এখন অভিযোগটি অনুসন্ধানের জন্য কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হবে। তারপর অনুসন্ধান শুরু হবে। আইন ও মানবাধিকার সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের প্রধান উপদেষ্টা ড. সুফি সাগর শামস গত ২৬ নভেম্বর ‘রংধনু গ্রুপের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামের লাগামহীন দুর্নীতি, বিক্রীত জমির দলিল বন্ধক রেখে প্রতারণার মাধ্যমে ২৭০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে অর্থ আত্মসাৎ ও জাল-জালিয়াতির বিষয়ে তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ’ করতে দুদক চেয়ারম্যান বরাবর একটি আবেদন দেন। 

এ আবেদনের অনুলিপি বাংলাদেশ ব্যাংককেও দিয়েছেন তিনি। এতে সাড়া না পেয়ে ড. সুফি সাগর শামস হাই কোর্টে রিট করেন। রিটে রফিকুল ইসলামের দুর্নীতি নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদন যুক্ত করা হয়। পরে ১৯ মার্চ হাই কোর্টে দুদক জানায়, আবেদনটি দুর্নীতি দমন কমিশনের বিবেচনাধীন রয়েছে। এরপর আদালত শুনানি মুলতবি করেন। তার ধারাবাহিকতায় আবেদনটি গতকাল শুনানির জন্য ওঠে। এর আগে রিটের পক্ষের আইনজীবী একলাছ উদ্দিন ভূঁইয়া জানিয়েছিলেন, রংধনু গ্রুপের কর্ণধার রফিকুল ইসলাম বিভিন্ন সময়ে মানুষের সঙ্গে যে প্রতারণা করেছেন, অনিয়ম করেছেন, জাল-জালিয়াতি করেছেন-এ মর্মে একটি মানবাধিকার সংগঠনের চিফ অ্যাডভাইজর ড. সুফি সাগর শামস দুদকে একটি আবেদন দেন বিষয়গুলো তদন্তের জন্য। এ নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। তিনি সাড়া না পেয়ে হাই কোর্টে জনস্বার্থে রিট করেছেন। 

দুদকে জমা দেওয়া অভিযোগ থেকে জানা যায়, বিক্রি করে দেওয়া জমির দলিল বন্ধক রেখে প্রতারণার মাধ্যমে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড থেকে ২৭০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন রংধনু গ্রুপের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম। ২০২২ সালের শেষ দিকে এসব জমি বিক্রি করে দিলেও গত বছরের ২২ জুন রংধনু গ্রুপের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম, তার ছেলে মেহেদী হাসান দীপু, কাউসার আহমেদ অপু ও মালিহা হোসেন জোয়ারসাহারা, ভাটারা ও গুলশান মৌজার ৩৩৭ দশমিক ৫৯ শতাংশ জমি বন্ধক রেখে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের বসুন্ধরা শাখা থেকে ২৭০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন। 

এর মধ্যে ভাটারা মৌজার চারটি প্লটে রফিকুল ইসলামের বিক্রি করে দেওয়া ৯৩ দশমিক ৮৭ শতাংশ জমিও রয়েছে। দুদকসূত্র জানান, এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দুদকের মহাপরিচালক (মানি লন্ডারিং) বরাবর একটি চিঠি গত ২৫ ফেব্রুয়ারি দেন দৈনিক ও সাম্প্রতিক অভিযোগ সেলের পরিচালক উত্তম কুমার মণ্ডল। ওই চিঠিতে বলা হয়, অভিযোগটি মানি লন্ডারিং শাখার নম্বর ৪০৩.০৩.০০১.২২-এর সঙ্গে সংযুক্ত অনুসন্ধানের জন্য কমিশন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।