[ পাতা-১২ ] 25/04/2024
 
৩২৯ কোটির প্রকল্পে কোটিপতি পিডি

বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) ৩২৯ কোটি টাকার একটি প্রকল্পে কাজ না করেই ৪১ লাখ ৬৫ হাজার টাকা বিল পরিশোধের অভিযোগ উঠেছে প্রকল্প পরিচালক (পিডি) শহিদুর রহমানের বিরুদ্ধে। শুধু তা-ই নয়, প্রকল্পের যেটুকু কাজ হয়েছে, তাতে নিম্নমানের সরঞ্জাম ব্যবহারের অভিযোগও উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে। খোদ বিএমডিএর অভ্যন্তরীণ তদন্তেই এসব দুর্নীতি ধরা পড়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলেছে, বিএমডিএর ‘ভূগর্ভস্থ সেচ নালা বর্ধিতকরণের মাধ্যমে সেচ এলাকার সম্প্রসারণ’ প্রকল্পের পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পান বিএমডিএর চলতি দায়িত্বের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শহিদুর রহমান। ইতিমধ্যে তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) লিখিত অভিযোগ জমা পড়েছে। অভিযোগমতে, প্রকল্পের কাজ না করেই ৪১ লাখ ৬৫ হাজার টাকা বিল পরিশোধ করেছেন পিডি শহিদুর রহমান। এ ঘটনায় বিএমডিএ অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী শামসুল হুদাকে প্রধান করে ১০ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটিও করে। কমিটি গত ৮ ফেব্রুয়ারি নির্বাহী পরিচালকের (ইডি) কাছে প্রতিবেদন জমা দেয়। এতে ২৫ লাখ ১৫ হাজার টাকা তছরুপের প্রমাণ পাওয়া গেছে উল্লেখ করে বলা হয়েছে, ঠিকাদার কাজ না করলেও এই বিল পরিশোধ করা হয়েছে।

তদন্ত কমিটির প্রধান শামসুল হুদা বলেন, ‘অনিয়মের তদন্ত প্রতিবেদন অনেক আগেই জমা দেওয়া হয়েছে।’ আর প্রকল্পের মনিটরিং কর্মকর্তা ও তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আব্দুল লতিফ অনিয়মের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘বিভিন্ন মালামাল কেনায় অনিয়ম এবং দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গেছে। আমরা ইতিমধ্যে নির্বাহী পরিচালকের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছি।’

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলেছে, পিডি শহিদুর রহমান প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রায় ১০০ কোটি টাকার ইউপিভিসি পাইপ ও গেট ভাল্‌ভ কিনেছেন। নিম্নমানের পাইপ ও গেট ভাল্‌ভ কেনার বিষয়টি প্রকল্পের মনিটরিং কর্মকর্তা আব্দুল লতিফের নজরে আসে।

 

 

এরপর আব্দুল লতিফ প্রকল্পের বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করে ১৮ ডিসেম্বর নির্বাহী পরিচালকের কাছে প্রতিবেদন জমা দেন। এতে বলা হয়, বেঙ্গল প্লাস্টিক পাইপ লিমিটেডের কাছ থেকে যে ৪১ হাজার ১০০ মিটার পাইপ ৩ কোটি ১১ লাখ ৬০ হাজার ২২ টাকায় কেনা হয়েছে, সেটি গুণগতভাবে অত্যন্ত নিম্নমানের। গোদাগাড়ী উপজেলার সাহাব্দিপুর, শিয়ালা, কিসমত গোবিন্দপুর এবং তানোর ও মোহনপুর, নওগাঁর মহাদেবপুর ও মান্দা, চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার বৈদ্যপুর, নিজামপুর, কুশমাডাঙ্গাসহ বিভিন্ন স্কিমে ব্যবহৃত এসব নিম্নমানের পাইপ ইতিমধ্যে ফেটে গেছে। এ কারণে বন্ধ হয়ে গেছে পানির সরবরাহ। অন্য স্কিমগুলোয়ও একই অবস্থা। এসব ফাটা পাইপ এখন বিএমডিএর উপজেলা কার্যালয়গুলোয় স্তূপাকারে পড়ে আছে।

এদিকে রাইজার ভাল্‌ভ কেনার ক্ষেত্রে ব্যাপক অনিয়ম করা হয়েছে। শিডিউলে ১৫ কেজি ওজনের ভাল্‌ভ কেনার কথা থাকলেও কেনা হয়েছে ১২ কেজি ওজনের। এ বিষয়টিও মনিটরিং কর্মকর্তা তাঁর প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন। প্রকল্পে গভীর নলকূপ স্থাপনের ক্ষেত্রে এমএস হাউজিং পাইপ এবং এসএস স্টেইনার ব্যবহারের বিষয়টি শিডিউলে উল্লেখ রয়েছে। এখানেও নিম্নমানের প্লাস্টিকের হাউজিং এবং স্টেইনার দিয়ে গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, পাইপ কেনায় অনিয়ম করে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পিডি শহিদুর রহমান রাজশাহী মহানগরীর অভিজাত আবাসিক এলাকা উপশহরে ২৭১/২ নম্বর ১০ তলা ভবনের তিনতলায় এ ও বি নম্বরের দুটি ফ্ল্যাট কিনেছেন। প্রতিটি ৩ হাজার বর্গফুটের এই ফ্ল্যাট দুটির একটি তিনি স্ত্রীর নামে করেছেন। ঢাকার উত্তরা এবং উত্তর বাড্ডায়ও তাঁর দুটি ফ্ল্যাট আছে। দেশের বাড়ি কুষ্টিয়ায় কিনেছেন বিপুল পরিমাণ জমি।

তবে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অস্বীকার করে প্রকৌশলী শহিদুর রহমান বলেন, ‘আমার শুধু রাজশাহীতে দুটি ফ্ল্যাট আছে। তাও একটি ফ্ল্যাট আমার স্ত্রীর। অন্য কোনো সম্পদ নেই।’ দুর্নীতির চিত্র তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে আসার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এসব বানোয়াট, ভুয়া। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এই রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে। হয়রানি করতে দুদকেও অভিযোগ করা হয়েছে।’ তাঁর দাবি, পাইপ উন্নতমানেরই কেনা হয়েছে। বরেন্দ্র অঞ্চলের কড়া মাটির কারণে পাইপ ফেটে গেছে। কাজ না করে বিল দেওয়ার অভিযোগও সত্য নয়।

বিএমডিএর নির্বাহী পরিচালক আবদুর রশিদ বলেন, ‘প্রকল্পে অনিয়মের বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদন এসেছে। এখন নিয়ম অনুযায়ী পিডির কাছে কৈফিয়ত তলব করা হবে। তিনি ব্যাখ্যা দেবেন। ব্যাখ্যা সন্তোষজনক না হলে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

 Ž  প্রকল্পের একাংশে কাজ না করিয়ে বিল পরিশোধ।

 Ž  নিম্নমানের সরঞ্জাম ব্যবহারের অভিযোগ।

 Ž  বিভাগীয় তদন্তে মিলেছে দুর্নীতির সত্যতা, তবু অভিযোগ অস্বীকার।