[ অনলাইন ] 2024-12-26 |
|
|
|
২০২৩-২৪ অর্থবছর |
বিমানের দায়-দেনা দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা
|
|
|
রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী আকাশ পরিবহন সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস সর্বশেষ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে যাত্রী ও পণ্য পরিবহন, গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংসহ বিভিন্ন পরিষেবা দিয়ে ২৮২ কোটি টাকা নিট মুনাফা করেছে। আগের অর্থবছরে নিট মুনাফা হয়েছিল ২২ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে মুনাফা বাড়লেও এখনো বিপুল পরিমাণ দায় ও দেনা রয়ে গেছে সংস্থাটির। গত অর্থবছরের নিরীক্ষা প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিমানের দায় ও দেনার পরিমাণ ১৪ হাজার ৯৩৬ কোটি টাকা। এর সিংহভাগই বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) ও পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের পাওনা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিয়মিত বিমানবন্দর ও আকাশসীমা ব্যবহার ফি পরিশোধ না করা এবং জ্বালানি তেলের মূল্য পরিশোধ না করায় বড় অংকের দায় ও দেনা থেকে বের হতে পারছে না বিমান। যদিও বিমানের কর্মকর্তারা দাবি করছেন, ২০২০ সালের পর থেকে নতুন করে কোনো ধরনের দায় ও দেনা নেই সংস্থাটির। পুরনোগুলো ২০২৭-২৮ অর্থবছরের মধ্যে শোধ করে দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।
বিমানের ২০২৩-২৪ হিসাব বছরের প্রকাশিত নিরীক্ষা প্রতিবেদনে বিস্তারিত নোট না থাকায় কোন প্রতিষ্ঠানের কাছে কী পরিমাণ দায় ও দেনা রয়েছে, সেটি জানা সম্ভব হয়নি। তবে পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের কাছ থেকে বিমানের বকেয়ার তথ্য পেয়েছে বণিক বার্তা। সংস্থাটির হিসাব বলছে, ২০২৪ সালের অক্টোবর পর্যন্ত বিমানের কাছে পদ্মা অয়েলের পাওনার পরিমাণ ১ হাজার ৮৩২ কোটি টাকা। এর আগে ২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৪ সালের অক্টোবর পর্যন্ত পদ্মা অয়েলকে বকেয়া বাবদ ২৭৬ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে বিমান। সর্বশেষ গত ৪ নভেম্বর বকেয়া বাবদ পরিশোধ করে প্রায় ১৫ কোটি টাকা।
অন্যদিকে বেবিচক বিমানের কাছে কী পরিমাণ অর্থ পাবে সে-সম্পর্কিত কোনো তথ্য তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া সম্ভব হয়নি। তবে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিমানের কাছে বেবিচকের পাওনার পরিমাণ ছিল ৫ হাজার ৬১৭ কোটি টাকা।
দায় ও দেনার বিষয়ে জানতে গতকাল একাধিকবার ফোন ও এসএমএস পাঠিয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরীর বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি। পরে সংস্থাটির চেয়ারম্যান ড. সাফিকুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি নিয়ে বিমানের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) বোসরা ইসলামের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। সে অনুযায়ী যোগাযোগ করা হলে বোসরা ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘সিভিল এভিয়েশন (বেবিচক) ও পদ্মা (পদ্মা অয়েল) আমাদের কাছে টাকা পায়। কিন্তু এদের সঙ্গে আমাদের অনেক বিষয়ে ডিসপিউট আছে। এ রকম একটি ডিসপিউট হলো সারচার্জ। প্রতিষ্ঠান দুটি বিপুল পরিমাণ সারচার্জ আরোপ করে রেখেছে। ২০২০ সালে এসে পদ্মার সঙ্গে আমাদের ডিসপিউট শেষ হয়েছে এবং প্রতিষ্ঠানটি আমাদের কাছে আর কিছু পায় না। যেগুলো বকেয়া আছে, সেগুলো চলতি দায়। সিভিল এভিয়েশনের সঙ্গে কিছু ডিসপিউট এখনো আছে। ২০২০ সালের আগে যেসব বকেয়া আছে, সেগুলোর বেশির ভাগই আমরা পরিশোধ করে আসছি। এখন যে পরিমাণ টাকা বকেয়া আছে, সেটা পুরনো হিসাব এবং ডিসপিউট থাকায় পরিশোধ করা হয়নি। ডিসপিউট শেষ না হওয়া সত্ত্বেও আমরা সিভিল এভিয়েশনকে টাকা পরিশোধ করছি। তবে সারচার্জ বাদ রেখে। আমরা প্রতি বছরই টাকা পরিশোধ করছি। ২০২৭-২৮ অর্থবছরে সিভিল এভিয়েশনের সব বকেয়া পরিশোধ হয়ে যাবে।’
২০২০ সালের পর থেকে সিভিল এভিয়েশনের কোনো বকেয়া নেই জানিয়ে তিনি আরো বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে সিভিল এভিয়েশনের সঙ্গে আমাদের কথাও হয়েছে। আমাদের নিরীক্ষকরাও বিষয়টি সম্পর্কে জানেন। ডিসপিউট থাকায় এসব দায়-দেনা নিরীক্ষা প্রতিবেদনে রাখা হয়নি।’
এর আগে ২১ ডিসেম্বর বিমানের বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন বিমান পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী। সভার পর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বিমান ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রেকর্ড পরিমাণ আয় করেছে, যার পরিমাণ ১০ হাজার ৫৭৫ কোটি টাকা। পূর্ববর্তী অর্থবছরের তুলনায় আয়ের পরিমাণ ৯ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি। একই সঙ্গে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বিমান ১ হাজার ৫৫৬ কোটি টাকা অপারেশনাল মুনাফা অর্জন করেছে। তবে এক্সচেঞ্জ লস ও ট্যাক্স-পরবর্তী নিট মুনাফা হয়েছে ২৮২ কোটি টাকা। ডলারের মূল্যবৃদ্ধি নিট মুনাফার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, নিজস্ব তহবিল থেকে ১৩টি নতুন উড়োজাহাজ কেনা বাবদ (লোন ও সুদসহ) নভেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত ১২ হাজার ৫৭৪ কোটি টাকার সমপরিমাণ (১০৪ দশমিক ৭৯ কোটি ডলার) পরিশোধ করা হয়েছে। এর মধ্যে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে পরিশোধ করা হয়েছে ১ হাজার ২৭৪ কোটি টাকা। একই অর্থবছরে ভ্যাট ও ট্যাক্স বাবদ ৯২৭ কোটি টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিয়েছে বিমান। থার্ড টার্মিনালকে ঘিরে নিজস্ব তহবিল থেকে কেনা হয়েছে সাড়ে ২৪ কোটি টাকার গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সরঞ্জাম।
বিমানের তথ্যানুযায়ী, গত অর্থবছরে ২১টি উড়োজাহাজ দিয়ে ৩৩ লাখ ৬৩ হাজার ৬৮৫ যাত্রী পরিবহন করেছে সংস্থাটি। একই সময়ে পরিবহন করা হয়েছে ৪৩ টনের বেশি কার্গো। বর্তমানে বিমান ৩২টি বিদেশী যাত্রীবাহী এয়ারলাইনস ও ১৭টি কার্গো এয়ারলাইনসকে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং পরিষেবা প্রদান করছে।
|