[ অনলাইন ] 2025-02-05 |
|
|
|
|
সবজির দাম কমায় কিছুটা হ্রাস পেয়েছে খাদ্য মূল্যস্ফীতি
|
|
|
বাজার ভরপুর শীতের সবজিতে। নাগালের মধ্যে দাম। এর ফলে জানুয়ারিতে খাদ্য মূল্যস্ফীতি কমে হয়েছে ১০ দশমিক ৭২ শতাংশ। আগের মাস অর্থাৎ ডিসেম্বরে ছিল ১২ দশমিক ৯২ শতাংশ। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, চাঁদাবাজি ও মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য নিয়ন্ত্রণে সরকার সফল হলে মূল্যস্ফীতি আরো কমানো সম্ভব ছিল। তবে খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি জানুয়ারিতে সামান্য বেড়ে ৯ দশমিক ৩২ শতাংশে পৌঁছেছে, যা গত ডিসেম্বরে ছিল ৯ দশমিক ২৬ শতাংশ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) গতকাল প্রকাশিত ভোক্তা মূল্যসূচকের (সিপিআই) হালনাগাদ তথ্যে এমনটা উঠে এসেছে।
দেশে আড়াই বছরেরও বেশি সময় ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। প্রায় সময়েই সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ শতাংশের ওপর, কখনো তা দুই অংকও ছাড়িয়েছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সুদহার বাড়ানোর নীতি গ্রহণ করা হলেও তা খুব একটা কাজে আসেনি। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী থাকায় এ সময়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। বর্তমানে তা কিছুটা কমতে শুরু করেছে।
বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ১১ দশমিক ৬৬ শতাংশ। এর পরের মাস আগস্টে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ৪৯ শতাংশ। গত বছরের সেপ্টেম্বরে ৯ দশমিক ৯২ শতাংশ, অক্টোবরে ১০ দশমিক ৮৭ ও নভেম্বরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ১১ দশমিক ৩৮ শতাংশ। এর আগের দুই অর্থবছরেও দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি দেখা গেছে। এর মধ্যে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ ও ২০২২-২৩ অর্থবছরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক শূন্য ২ শতাংশে। সব মিলিয়ে টানা ৩১ মাস ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতির মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ।
খাদ্যপণ্যের দাম কমায় গত জানুয়ারিতে দেশের খাদ্য মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছে। তবে তা এখনো দুই অংকের ওপরেই রয়েছে। এ সময়ে দেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১০ দশমিক ৭২ শতাংশ, যা আগের মাস অর্থাৎ গত বছরের ডিসেম্বরে ছিল ১২ দশমিক ৯২ শতাংশ। মূলত বাজারে শীতকালীন সবজি, ডিমসহ বেশকিছু খাদ্যপণ্যের দাম কমার প্রভাব দেখা যাচ্ছে এক্ষেত্রে। চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইতে দেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১৪ দশমিক ১০ শতাংশ। এর পরের মাসগুলোয় খাদ্য মূল্যস্ফীতি দুই অংকের ওপরে ছিল। এর মধ্যে গত বছরের আগস্টে ১১ দশমিক ৩৬ শতাংশ, সেপ্টেম্বরে ১০ দশমিক ৪০, অক্টোবরে ১২ দশমিক ৬৬ ও নভেম্বরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১৩ দশমিক ৮০ শতাংশ।
গত মাসে দেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতি কমলেও বেড়ে গেছে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি। গত জানুয়ারিতে খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৩২ শতাংশে। আগের মাস অর্থাৎ গত বছরের ডিসেম্বরে দেশে খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ২৬ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি দুই অংকের নিচে। এর মধ্যে গত জুলাইতে ৯ দশমিক ৬৮ শতাংশ, আগস্টে ৯ দশমিক ৭৪, সেপ্টেম্বরে ৯ দশমিক ৫০, অক্টোবরে ৯ দশমিক ৩৪ ও নভেম্বরে খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৩৯ শতাংশে।
দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি গত মাসে এক অংকে নামলেও গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে এখনো দুই অংকের মূল্যস্ফীতির চাপ সহ্য করতে হচ্ছে। গত জানুয়ারিতে গ্রামীণ অঞ্চলের সার্বিক মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ১৮ শতাংশে, আগের মাস অর্থাৎ গত বছরের ডিসেম্বরে যা ছিল ১১ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে গ্রামের সার্বিক মূল্যস্ফীতি এখন পর্যন্ত দুই অংকের নিচে নামেনি। এদিকে গত জানুয়ারিতে শহরের সার্বিক মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৮৯ শতাংশে, আগের মাসে যা ছিল ১০ দশমিক ৮৪ শতাংশ।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বণিক বার্তাকে বলেন, ‘খাদ্য মূল্যস্ফীতি কমার কারণে সার্বিক মূল্যস্ফীতিও কমেছে। এর মানে হচ্ছে বাজারে সরবরাহ কিছুটা বেড়েছে। সরবরাহ বাড়লে পণ্যের মূল্যের ওপর চাপও কমে আসে। পাশাপাশি কঠোর মুদ্রানীতির কিছু প্রভাবও হয়তো এক্ষেত্রে কাজ করেছে। দুটো মিলেই সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমেছে। গ্রামে বরাবরই মূল্যস্ফীতি বেশি থাকে। এর কারণ হচ্ছে সেখান থেকে অধিকাংশ পণ্যই শহরে পাঠিয়ে দেয়া হয়, যার কারণে তাদের কাছে সবসময় নগদ অর্থ কম থাকে। কিন্তু মূল্যস্ফীতি আরো কমানো সম্ভব হতো যদি চাঁদাবাজি ও মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য কমানো যেত। মূল্যস্ফীতি আমাদের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী কমাতে হলে এবং সবসময় একটি স্থিতিশীল জায়গায় রাখতে হলে চাঁদাবাজি ও মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য কমানোটা গুরুত্বপূর্ণ।’
উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের কথা বলে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের শুরুতে সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি ঘোষণা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই সময় ব্যাংক ঋণের সুদহার বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়। এ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে বাড়ানো হয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি সুদহার (রেপো রেট)। এর পর থেকে ক্রমাগতভাবে ব্যাংক ঋণের সুদহার বাড়ছে। নীতি সুদহার ৫ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের মুদ্রানীতি প্রণয়নের কাজ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ১০ ফেব্রুয়ারি নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হবে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে নতুন মুদ্রানীতিতেও সুদহার আরো বাড়ানোর ঘোষণা আসতে পারে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে আভাস দেয়া হয়েছে।
যদিও বিশ্লেষকদের মতে, চাহিদা নিয়ন্ত্রণ বা শুধু সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির মাধ্যমে দেশের উচ্চ মূল্যস্ফীতি কমানো কোনোভাবেই সম্ভব নয়। সরবরাহ ঘাটতি ও বাজার অব্যবস্থাপনার কারণেই দেশে বিরাজমান উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হচ্ছে না। এজন্য উৎপাদন ও আমদানি বৃদ্ধিতে বাড়তি মনোযোগ দেয়ার মাধ্যমে জিনিসপত্রের দাম কমানোর দিকে মনোযোগ দিতে হবে। পাশাপাশি চাঁদাবাজ ও মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্যের রাশ টেনে ধরার মাধ্যমেই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। |