[ অনলাইন ] 2025-02-05 |
|
|
|
|
কর ছাড়সহ স্বল্প সুদের ঋণ দেওয়ার পরিকল্পনা
|
ওষুধ শিল্পের কাঁচামাল উৎপাদন |
|
ওষুধ
শিল্পের মূল কাঁচামাল অ্যাকটিভ ফার্মাসিউটিক্যালস ইনগ্রিডিয়েন্ট (এপিআই)
উৎপাদনে বিনিয়োগ বাড়াতে কর ও ভ্যাটে ছাড়, নগদ প্রণোদনা ও স্বল্প সুদের ঋণ
দেয়ার কথা ভাবছে অন্তর্র্বতী সরকার। এপিআই উৎপাদনের জন্য নির্দিষ্ট করা
একটি শিল্প পার্কে উদ্যোক্তাদের আকৃষ্ট করতে সমস্যার সম্মুখীন হওয়ার পরে
সরকারের এই উদ্যোগের কথা জানা গেল।
এই উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে, তা
হবে এই খাতের জন্য গেম-চেঞ্জার। শিল্প সংশ্লিষ্টদের হিসাবে, আমদানিকৃত
এপিআইয়ের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে পারলে বছরে ১০০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ
বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করতে পারবে বাংলাদেশ। এতে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা
রিজার্ভের ওপর চাপ যেমন কমবে, তেমনি ভোক্তাদের কাছে সুলভমূল্যে ওষুধ বিক্রি
করা সম্ভব হবে।
অর্থমন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো বলছে, প্রস্তাবিত
প্রণোদনাগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত চেয়ে গত ২ জানুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংককে একটি
চিঠি দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার পরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবিষয়ে
আরও আলোচনার জন্য বাংলাদেশ এপিআই অ্যান্ড ইন্টারমিডিয়ারিস
ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে গত বৃহস্পতিবার একটি সভা করেছে।
বর্তমানে
চাহিদার প্রায় ৯০ শতাংশ এপিআই আমদানি করে বাংলাদেশ, যা আমদানি-বাবদ বছরে
১০০ কোটি ডলারের বেশি বিদেশে চলে যাচ্ছে। কিন্তু, দেশেই একটি শক্তিশালী
এপিআই শিল্প গড়ে তোলা গেলে এই নির্ভরতা কাটিয়ে ওঠা যাবে। একইসঙ্গে তা ওষুধ
খাতে কম মূল্যের কাঁচামাল সরবরাহের মাধ্যমে এই খাতকে আরও টেকসই করবে।
স্থানীয়ভাবে
পর্যাপ্ত এপিআই উৎপাদন করা গেল্তে ওষুধ শিল্প বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খল
ব্যাহত হওয়া বা দামের ওঠানামার মতো প্রভাবগুলো থেকে অনেকটাই সুরক্ষিত
থাকবে। ওষুধের দাম স্থিতিশীল পর্যায়ে রাখা ও দেশের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত
করতে যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
গত বছরের নভেম্বরে অর্থমন্ত্রণালয় ও
বাংলাদেশ এপিআই অ্যান্ড ইন্টারমিডিয়ারিস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের
এক বৈঠকে এই উদ্যোগের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা হয়। অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন
আহমেদের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে দেশে এপিআই উৎপাদনের সম্ভাবনাগুলোর
পাশাপাশি এইখাতে বিনিয়োগ বাড়াতে দরকারি নীতি সহায়তার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রণালয়ের
সিনিয়র সহকারী সচিব ফারজানা জাহান বলেন, সভার সিদ্ধান্তের আলোকে আমরা
বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দিয়েছি। তারা বিষয়টি যাছাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত
নেবেন। বাংলাদেশ এপিআই অ্যান্ড ইন্টারমিডিয়ারিস ম্যানুফ্যাকচারার্স
অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এস এম সাইফুর রহমান বলেন, এপিআই খাতে টেকসই
প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে এবং এখাতে বৈশ্বিক নেতৃত্বদানকারী চীন ও ভারতের
সঙ্গে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা অর্জনের জন্য আমরা ২০১৮ সালের এপিআই নীতির
বাস্তবায়ন চাই।
এস এম সাইফুর রহমান বলেন, মূল কাঁচামাল ভারত কিংবা
চীন থেকে আমদানি করতে হয় বিধায় আমাদের উদ্যোক্তারা বিনিয়োগ করলেও্ত তাদের
ব্যয় বেশি হবে। ফলে ২০২৮ সালে এলডিসি পরবর্তী সময়ে ওষুধের দাম বেড়ে যাবে।
ফলে বিনিয়োগকারীদের ৪ শতাংশ সুদে ঋণ প্রদানের পাশাপাশি কর ও ভ্যাটে
অব্যাহতি দেয়ার দাবি করেছি আমরা। পাশাপাশি শিল্প পার্কে নিরবিচ্ছিন্ন
বিদু্যতের দাবি করেছি।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০১৮ সালে সরকার
এপিআই সংক্রান্ত একটি নীতিমালা করে। এতে ওষুধ তৈরিতে ব্যবহৃত কাঁচামাল
উৎপাদনকারীকে ২০৩২ সাল পর্যন্ত আয়কর রেয়াত সুবিধা দেয়া হয়। তবে এই সুবিধা
নিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) নানা শর্ত জুড়ে দেয়। শর্তের জালে আটকে
যায় প্রণোদনা সুবিধা। ২০১৮ নীতিমালা হলেও এনবিআর প্রজ্ঞাপন জারি করে ২০২১
সালের শেষে।
এনবিআর বলছে, যেসব প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে এপিআই ও
গবেষণাগারের রি-এজেন্ট উৎপাদন করছে, তাদের জন্যও ২০১৬ সালের ১ জুলাই থেকে
কর রেয়াত প্রযোজ্য হবে। এনবিআর জানায়, ২০২২ সালের জুলাই থেকে ২০৩২ পর্যন্ত
কর অবকাশ সুবিধা উপভোগ করার জন্য উৎপাদনকারীকে প্রতি বছর অন্তত ৫টি এপিআই ও
গবেষণাগার রি-এজেন্ট উৎপাদন করতে হবে। ৫টির কম এপিআই বা রিএজেন্ট উৎপাদন
হলে সুবিধা মিলবে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের সাবেক
অধ্যাপক ড. চৌধুরী মাহমুদ হাসান বলেন, বাংলাদেশ এখন ওষুধ তৈরির জন্য বছরে
প্রায় ১০-১২ হাজার কোটি টাকার ফিনিশড ফার্মাসিউটিক্যাল প্রোডাক্ট আমদানি
করে। দেশেই যদি এপিআই সেক্টর ডেভলভ করতো তাহলে এই টাকা দেশেই থাকতো,
পাশাপাশি ভারত বা চীনের ওপর আমাদের নির্ভরশীল থাকতে হতো না। এখন সাবসিডি
দিয়ে বা ৫ বছরের জন্য কোম্পানিগুলোকে সুদমুক্ত ঋণ দিয়ে যদি এপিআই খাতের
উন্নয়ন করা যায় দীর্ঘমেয়াদে দেশের ওষুধ শিল্পের জন্য তা ভালো হবে। এতে করে
ওষুধের দামও কমবে।
ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক ড. মো. আকতার
হোসেন বলেন, এপিআই খাতের উন্নয়নে সহায়তা করলে দেশের জন্যই ভালো হবে। দেশেই
ওষুধের কাঁচামাল তৈরি হলে ওষুধের দাম কমবে। |