[ অনলাইন ] 2025-02-05
 
কুয়াশায় দণ্ড দিচ্ছে এয়ারলাইনস ভুগছে যাত্রীরা
 
ঘন কুয়াশার কারণে মাঝেমধ্যেই উড়োজাহাজ নামতে পারছে না হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। প্রতিবছর শীত এলেই ফ্লাইট অবতরণ নিয়ে বেকায়দায় পড়তে হয় এয়ারলাইনসগুলোকে। এ জন্য পাশের দেশগুলোতে অবতরণ করতে হয় দেশি-বিদেশি এয়ারলাইনসের কিছু ফ্লাইটকে।

ফ্লাইট অবতরণ করতে না পারায় অপ্রয়োজনে আকাশে উড়ে উড়ে জ্বালানি পুড়ছে।
বাড়তি ল্যান্ডিং-পার্কিং চার্জ বাবদ মোটা অঙ্কের আর্থিক ক্ষতির শিকার হচ্ছে এয়ারলাইনসগুলো। অন্যদিকে চরম ভোগান্তিতে পড়ছে যাত্রীরা। অনাকাঙ্ক্ষিত শিডিউল বিপর্যয়ের শিকার হয়ে ফিরতি ফ্লাইটের যাত্রীরাও পড়ছে অনিশ্চয়তায়।

সাধারণত নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশের আকাশ প্রায়ই কুয়াশাচ্ছন্ন থাকে।
সে সময় দৃষ্টিগোচরতা কম থাকায় রাতের বেলায় শাহজালালে উড়োজাহাজ অবতরণে সমস্যায় পড়তে হয় বৈমানিকদের। কুয়াশা বেড়ে গেলে কখনো কখনো রাত থেকে দুপুরের আগ পর্যন্ত উড়োজাহাজ অবতরণ বন্ধ রাখতে হয় বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে। এ সময়ে শিডিউলে থাকা অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইটগুলোও বিলম্বিত হয়ে পড়ে। এ ক্ষেত্রে শাহজালাল বিমানবন্দরে ইনস্ট্রুমেন্ট ল্যান্ডিং সিস্টেম (আইএলএস) থাকলেও সেটি এখনো সনাতনি ক্যাটাগরি-১-এর।
তবে ২০২২ সালে আইএলএস-২ স্থাপনের কাজ শুরু করেছিল বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক), যা এখনো শেষ হয়নি।

বিমান চলাচল বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আইএলএস হলো একটি রেডিও নেভিগেশন সিস্টেম, যা পাইলটদের কম দৃশ্যমানতায়, রাতে বা খারাপ আবহাওয়ায় নিরাপদে অবতরণে সাহায্য করে। বিশ্বের অনেক বিমানবন্দরেই আইএলএস ক্যাটাগরি-৩ স্থাপন করা রয়েছে। কিন্তু ১৯৮০ সালের দিকে শাহজালাল বিমানবন্দরে আইএলএস-১ স্থাপন করা হয়। তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছাড়া অন্য বিমানবন্দরগুলোতে আইএলএসের ব্যবস্থা নেই।
তাই এই দুর্ভোগ কমাতে সব বিমানবন্দরে দ্রুত উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহারের দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

বিমানবন্দর সূত্র জানায়, রানওয়েতে সাধারণত দৃশ্যমানতা ৬০০ থেকে ৮০০ মিটার থাকলে উড়োজাহাজ ওঠানামা করে। সাধারণত তা ৩০০ মিটার বা তার নিচে নামলেই আবহাওয়া অধিদপ্তর এভিয়েশন ওয়ার্নিং দেয়, সেটি ২০০ বা তার নিচে এলে তখন বিমান নামতেও পারে না। তখন পাইলটরা ইনস্টু্রমেন্ট ল্যান্ডিংয়ের সহায়তা নেন। কিন্তু শাহজালালে আইএলএস ক্যাটাগরি-১ হওয়ায় ঘন কুয়াশার মধ্যে নামা ঝুঁকিপূর্ণ। অথচ অনেক দেশই বিমানবন্দরে আইএলএস ক্যাটাগরি-৩ ব্যবহার করছে। সে ক্ষেত্রে কুয়াশা থাকলেও নামতে সমস্যা হয় না। এ কারণে ঢাকায় সমস্যা হলে কিছু ফ্লাইট কলকাতাসহ বিভিন্ন বিমানবন্দরে নামছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, অন্য দেশের বিমানবন্দরে অবতরণের (ফ্লাইট ডাইভার্ট) কারণে প্রতিটি ফ্লাইটের জন্য ১০ হাজার ডলার জরিমানা গুনতে হয় সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইনসকে। শীত মৌসুমে ফ্লাইট ডাইভার্ট বেশি হলে একটি এয়ারলাইনসের পাঁচ কোটি টাকা পর্যন্ত অপারেশনাল ব্যয় বেড়ে যায়।

ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) কামরুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘কুয়াশার কারণে আমাদের শিডিউল ঠিক রাখা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে যেমন আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছি, তেমনি আমাদের ব্র্যান্ড ইমেজও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আইএলএস সিস্টেম আপগ্রেডেশনের কাজ শেষ হলে এয়ারলাইনস এবং যাত্রী—উভয়েই এই ভোগান্তি থেকে মুক্তি পেত।’

তিনি বলেন, এ বছর যদিও কুয়াশার প্রকোপ কম। কিন্তু বছরের পর বছর আমাদের এই সমস্যা মোকাবেলা করতে হচ্ছে।

গত রবিবার মধ্যরাত আড়াইটা থেকে গত সোমবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ঘন কুয়াশার কারণে শাহজালাল বিমানবন্দরে নামতে পারেনি ছয়টি ফ্লাইট। এর তিনটি ফ্লাইট কলকাতা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। আর বাকি তিনটি নামে সিলেট বিমানবন্দরে।

হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম জানান, কুয়াশার কারণে মোট ১৬টি ফ্লাইট নির্ধারিত সময়ে উড্ডয়ন ও অবতরণ করতে পারেনি।

বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, মধ্যরাতে কুয়েত সিটি থেকে আসা কুয়েত এয়ারওয়েজের দুটি ফ্লাইট এবং ওমানের মাস্কাট থেকে আসা সালাম এয়ারের ফ্লাইটটি ঢাকায় অবতরণ করতে না পেরে কলকাতায় চলে যায়। পরে সকাল ৯টার পর ফ্লাইট তিনটি ঢাকা বিমানবন্দরে অবতরণ করে। ফ্লাইট উড্ডয়ন ও অবতরণের অপেক্ষায় থাকায় বিমানবন্দরের রানওয়েতে কিছুটা চাপ তৈরি হয়।

বেবিচক সূত্র জানায়, এত দিন আইএলএস-১ দিয়ে কাজ চালানো হচ্ছিল, যা ঘন কুয়াশায় অল্প পরিসরে কাজ করে। এই সমস্যার সমাধানে শাহজালালে স্থাপন করা হয়েছে উন্নত প্রযুক্তির আইএলএস-২। আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (আইকাও) একটি বিদেশি ফ্লাইট শাহজালালে পরীক্ষামূলক উড্ডয়ন-অবতরণ করবে। এর পরই বেবিচককে আইএলএস-২ ক্যাটাগরির সনদ দেওয়া হবে।

বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আইএলএস-২ আপগ্রেডেশনের সব কাজ প্রায় শেষ। এখন শুধু একটি বিদেশি অবজারভেশন ফ্লাইট লাগে। অবজারভেশন শেষ হলে আইএলএসের কাজ আমরা পুরোপুরি শুরু করতে পারব। এই প্রক্রিয়া আমরা শিগগিরই শেষ করতে পারব। আমরা আগামী দিনে আইএলএস-৩ স্থাপন করার ব্যাপারেও পরিকল্পনা করছি।’

এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহিদুল আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘প্রতিবছরই বেবিচক শীত এলে বলে এবার আইএলএস আপগ্রেড হয়ে যাবে। এবারও বলেছিল, কিন্তু এখনো হয়নি। কুয়াশার কারণে এয়ারলাইনসগুলো ভোগান্তিতে পড়ছে। যারা কানেক্টিং ফ্লাইট ধরবে তারা বেশি ভোগান্তিতে পড়ছে। আইএলএস আপগ্রেড হয়ে গেলেই সমস্যার ৯০ শতাংশ সমাধান হয়ে যাবে।’

এভিয়েশন খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ভিজিবিলিটি বা দৃশ্যমানতা ৫০ মিটার থেকে একদম শূন্যের কোঠায় নেমে গেলে আইএলএস-২-এও উড়োজাহাজ অবতরণ করতে পারবে না। জিরো ভিজিবিলিটি হলে ল্যান্ড করার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পাইলটই নেবেন।

এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ এ টি এম নজরুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আইএলএস-১ থেকে ক্যাটাগরি-২ চালু হলে ২৫০ মিটার পর্যন্ত ভিজিবিলিটিতেও ফ্লাইট নামানো যাবে। তবে এখন সবাই আইএলএস ক্যাটাগরি-৩ পদ্ধতি ব্যবহার করছে। আমাদের আইএলএস ক্যাটাগরি-৩ করা উচিত ছিল।’
Print Close  
Print Close  
News Source
            Top
            Top
 
Home / About Us / Benifits /Invite a Friend / Policy
Copyright © Hawker 2009-2010, Allright Reserved