[ পাতা ১৬ ] 2025-02-05 |
|
|
|
পাসপোর্ট সেবায় ভোগান্তি রোধ |
গণভেরিফিকেশন তুলে দেওয়ার উদ্যোগ
|
|
|
পাসপোর্ট সেবায় ভোগান্তি লাঘবে বিদ্যমান গণপুলিশ ভেরিফিকেশন ব্যবস্থা উঠে যেতে পারে। এক্ষেত্রে সম্ভাব্য বাধা চিহ্নিত করে তা সমাধানের জন্য পাসপোর্ট সেবা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরের সঙ্গে বৈঠক করছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মঙ্গলবার সকালে সিনিয়র সচিব ড. নাসিমুল গণির সভাপতিত্বে সচিবালয়ে এ সংক্রান্ত এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে পাসপোর্ট, পুলিশের বিশেষ শাখা, এনআইডি এবং প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
সূত্র জানায়, সভায় পুলিশের পক্ষ থেকে ভেরিফিকেশন তুলে দিলে সম্ভাব্য ঝুঁকির বিষয়টি তুলে ধরা হয়। বলা হয় পুলিশি যাচাই ছাড়া গণহারে পাসপোর্ট দেওয়া হলে দাগী অপরাধী থেকে শুরু করে বড় ধরনের অর্থ পাচারকারীদের সুবিধা হবে। পাসপোর্ট নিয়ে তারা যে কোনো সময় বিদেশে চলে যাওয়ার সুযোগ পাবেন। বিদ্যমান ব্যবস্থায় পাসপোর্ট আবেদন করলেও পুলিশ ভেরিফিকেশনে তারা আটকা পড়েন।
তবে পাসপোর্ট অধিদপ্তর পুলিশের এমন যুক্তি খণ্ডন করে বলছে, মোট পাসপোর্ট আবেদনকারীর মধ্যে অপরাধীর সংখ্যা নগণ্য। সংখ্যায় ১ শতাংশেরও কম। কিন্তু এর জন্য গণহারে সব আবেদনের পুলিশি যাচাই বৈষম্যমূলক। এছাড়া পাসপোর্ট পাওয়ার পর আরও কেউ অপরাধে জড়াবে না এমন গ্যারান্টি নেই। আবার পুলিশি যাচাইয়ের বিদ্যমান ব্যবস্থাতেও অপরাধীদের অনেকে পাসপোর্ট পেতে সক্ষম হয়েছেন। শুধু তাই নয়-ইমিগ্রেশনেও তাদের আটকানো যায়নি।
পাসপোর্ট কর্মকর্তারা বলছেন, বাস্তবে অপরাধের সঙ্গে পাসপোর্টের কোনো সম্পর্ক নেই। তবে কাউকে দেশত্যাগে বিরত রাখতে হলে ইমিগ্রেশন চেক পয়েন্টে ঠেকাতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। এ সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে নিয়মিত আবেদনের কত শতাংশের ক্ষেত্রে পুলিশের নেতিবাচক রিপোর্ট আসছে তার তথ্য জানাতে বলা হয়। কমিটির পরবর্তী সভায় পুলিশ এবং ই-পাসপোর্ট প্রকল্প থেকে এ সংক্রান্ত তথ্য উপস্থাপন করা হতে পারে।
পাসপোর্ট কর্মকর্তারা জানান, ২০০৭ সালে আলোচিত ‘এক-এগারো’ সরকারের সময় মাত্র ২৪ ঘণ্টায় পাসপোর্ট দেওয়ার রেওয়াজ চালু হয়। তখন আগে নয়, পাসপোর্ট দেওয়ার পরে পুলিশ ভেরিফিকেশন পদ্ধতি চালু ছিল। এ সময় বাস্তব অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, তেমন কোনো বড় অপরাধী পাসপোর্ট নিয়ে বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেনি। শুধু অপরাধীরা পাসপোর্ট নিয়ে পালিয়ে যাবেন এমন ভয় দেখিয়ে পুলিশ ভেরিফিকেশনের নামে গণহয়রানির কোনো যুক্তি নেই।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিদ্যমান ব্যবস্থায় শুধু পুলিশ ভেরিফিকেশনের কারণে পাসপোর্ট সেবায় ভোগান্তির মাত্রা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। দিনের পর দিন পুলিশের বিশেষ শাখায় হাজারো আবেদন আটকে থাকে। এসব নিয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে তেমন কোনো ব্যখ্যাও দেওয়া হয় না। এছাড়া পুলিশের এসআই এবং এএসআই পদমর্যাদার লোকজন মাঠ পর্যায়ে ভেরিফিকেশনের কাজ করে থাকে। তাদের একেকজনের ঘাড়ে দুই থেকে তিনশ পাসপোর্ট যাচাইয়ের দায়িত্ব পড়ে। ফলে তারাও ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করতে পারে না। এছাড়া ভেরিফিকেশনের নামে কতিপয় পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ঘুস বাণিজ্যের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আছে। যার দায়ভার দিনশেষে পুরোটাই পাসপোর্ট অধিদপ্তরকে বহন করতে হয়।
সূত্র জানায়, এর আগেও ২০১৪-১৫ সালের দিকে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বিদ্যমান বাধ্যতামূলক পুলিশ ভেরিফিকেশন তুলে দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তৎকালীন এসবি প্রধান জাবেদ পাটোয়ারীর বাধায় তা বাস্তবায়ন করা যায়নি। অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়, সব রাজনৈতিক সরকারের আমলে পুলিশ বাহিনীর লোকজন প্রভাবশালীর ভূমিকায় থাকে। তখন প্রশাসনিক কাঠামোয় তাদের কর্তৃত্ব খর্ব হতে পারে-এমন কোনো উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা যায়নি। এমনকি জনকল্যাণের পক্ষে হলেও পুলিশের পক্ষ থেকে বাধা দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত সভায় উপস্থিত কর্মকর্তাদের একজন যুগান্তরকে বলেন, ভেরিফিকেশন পুরোপুরি তুলে না দিয়ে সীমিত করার পক্ষেও মতামত আসে। এক্ষেত্রে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের তথ্যভান্ডারের সঙ্গে পুলিশের অপরাধী তথ্যভান্ডারের (সিডিএমএস) আন্তঃসংযোগ, জাতীয় পরিচয়পত্র এবং জন্মনিবন্ধন সার্ভারের তথ্য যাচাইসহ আরও একাধিক উদ্যোগের কথা বলা হয়। এতে ভেরিফিকেশন তুলে দেওয়া হলেও অপরাধীদের পাসপোর্ট প্রাপ্তি হার কমবে।
সূত্র জানায়, বিদ্যমান বাস্তবতায় জোরপূর্বক বাস্তচ্যুত মিয়ানমারের (রোহিঙ্গা) জনগোষ্ঠী পাসপোর্ট সেবায় অন্যতম ঝুঁকি হিসাবে বিবেচিত। এজন্য জাতিসংঘের উদ্ধাস্তু বিষয়ক সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) হাতে থাকা রোহিঙ্গা তথ্যভান্ডারের সঙ্গে পাসপোর্টের সার্ভার যুক্ত করা প্রয়োজন। এতে রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট প্রাপ্তির ঝুঁকি উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কমবে। তবে এক্ষেত্রে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে।
তবে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তথ্যভান্ডারে যুক্ত হলেও রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট প্রাপ্তিতে বড় ধরনের ঝুঁকি থেকে যায়। কারণ ইতোমধ্যে রোহিঙ্গাদের অনেকে বাংলাদেশি পরিচয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করে নিয়েছেন। ফলে পুলিশ ভেরিফিকেশন না থাকলে তারা সহজেই এনআইডি দেখিয়ে পাসপোর্ট নিয়ে যাবেন। পরে এসব নিয়ে প্রশ্ন উঠলে এনআইডি যার পাসপোর্ট তার-এমন কথা বলে সংশ্লিষ্টদের অনেকে দায় এড়িয়ে যেতে চাইবেন। যা কারও জন্যই ইতিবাচক হবে না।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সভায় আলোচনার সারাংশ নিয়ে কমিটির সদস্যরা সুপারিশ প্রণয়ন করবে। সুপারিশের আলোকে পরে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে পুলিশ ভেরিফিকেশন তুলে দেওয়ার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।
|