[ অনলাইন ] 2025-02-05 |
|
|
|
|
অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ আসছে!
|
|
|
আগামী অর্থবছরে সীমিত সময়ের জন্য অপ্রদর্শিত অর্থ দেশে বিনিয়োগের বিশেষ সুবিধা দেওয়া যায় কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বিশেষ সুবিধার আওতায় সীমিত সময় হিসেবে অর্থবছরের তিন মাস বা ছয় মাস করা যায় কি না, তা নিয়েও আলোচনা করা হচ্ছে। তবে সরকারের নীতিনির্ধারকদের অনেকে অপ্রদর্শিত অর্থ ঢালাওভাবে বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়ার ঘোর বিরোধী। তারা মনে করছেন, এতে সৎ ও নিয়মিত করদাতাদের সঙ্গে ন্যায়বিচার হবে না। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে এসব জানা যায়।
বুধবার (৪ জানুয়ারি) প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করার কথা আছে। এ সময় এনবিআরের রাজস্ব বাজেটের আরও অনেক বিষয় নিয়েও আলোচনার কথা রয়েছে। এসব বিষয়ের মধ্যে আছে আগামী অর্থবছরের জন্য করমুক্ত আয়সীমা, করপোরেট করহার ও ন্যূনতম করের পরিমাণ কত হবে। ভ্যাটের একক হার ধার্য করা সম্ভব হবে কি না। বেশি ব্যবহৃত হয় এমন কাঁচামালের আমদানি শুল্ক নতুনভাবে নির্ধারণের বিষয়েও আলোচনা হওয়ার কথা আছে। নতুন বিনিয়োগ আকর্ষণে শিল্প-কারখানা স্থাপনে উৎসাহিত করতে কারখানা নির্মাণের যন্ত্রপাতিতে শুল্ক ছাড় দেওয়া হবে কি না, তা নিয়েও প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনা করা হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনবিআরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা খবরের কাগজকে বলেন, বিগত কয়েক বছরে তৎকালীন সরকারসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগসাজশে কিছু অসাধু আমদানিকারক কোনো রকম রাখঢাক ছাড়াই আমদানি-রপ্তানিতে মিথ্যা তথ্য দিয়ে দেদার অর্থ পাচার করেছেন। এদের কাছে দেশের মধ্যেও কর ফাঁকি দেওয়া অর্থ আছে। বিদেশেও এরা অর্থ জমা রেখেছেন। গত কয়েক মাসে আইনের কঠোর শাসন থাকায় এসব আমদানিকারকের কারখানা প্রায় বন্ধ। এদের বাইরেও যারা মিথ্যা ঘোষণায় আমদানি-রপ্তানি করেছেন তারাও এখন বাধ্য হয়েই এসব দুর্নীতি কমিয়ে দিয়েছেন। এসব ব্যক্তির কাছে থাকা অপ্রদর্শিত অর্থ বা কালোটাকা কীভাবে সরকারের কোষাগারে আনা যায় তা নিয়ে আলোচনা চলছে।
এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান খবরের কাগজকে বলেন, আগামী অর্থবছরের বাজেটে বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য রাজস্ব বাজেট সাজানো হবে। পাচার করা অর্থ উদ্ধারেও পদক্ষেপ থাকবে। খুব গুরুত্ব দিয়ে চিন্তা করা হচ্ছে যে কর ফাঁকির অর্থ কীভাবে উদ্ধার করা যায়। এসব বিষয় নিয়ে সরকারের ঊর্ধ্বতন পর্যায়ের কাছ থেকে পরামর্শ নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) থেকে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়, এনবিআরসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে সারসংক্ষেপ পাঠিয়ে আগামী অর্থবছরের জন্য ১৯টি শিল্প খাতকে সর্বোচ্চ সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে চিহ্নিত করে বিনিয়োগ বাড়াতে বিভিন্ন ছাড় দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এসব খাতের মধ্যে আছে মৌলিক পোশাক, ফার্মাসিউটিক্যালস (এপিআই ছাড়া), কৃষি প্রক্রিয়াকরণ, আইটি-সক্ষম সেবা, উন্নত টেক্সটাইল এবং নবায়নযোগ্য শক্তি। আরও আছে অটোমোটিভ পার্টস, ফুটওয়্যার, হালকা প্রকৌশল ও চামড়া। ইভি ব্যাটারি, মেডিকেল ডিভাইস, টেকনিক্যাল টেক্সটাইল, খেলনা, অ্যাকটিভ ফার্মাসিউটিক্যাল ইনগ্রেডিয়েন্টস, সেমিকন্ডাক্টর ও প্লাস্টিক খাতসহ অন্যান্য খাত। এসব খাতকে অধিক সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে উল্লেখ করে সব ধরনের রাজস্ব ছাড় দেওয়ার কথাও বিডা থেকে বলা হয়েছে। আজকে প্রধান উপদষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠেয় বৈঠকে এসব বিষয় নিয়েও আলোচনা হবে।
বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী খবরের কাগজকে বলেন, বিডা থেকে হিটম্যাপ করা হয়েছে। এই হিটম্যাপে ১৯টি খাতকে অধিক সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব খাতে আগামী অর্থবছরে কীভাবে বিনিয়োগ বাড়ানো যায় তার সব ধরনের বন্দোবস্ত করতে করতে সরকারসংশ্লিষ্টদের জানানো হয়েছে। এখন দেখা যাক সরকার কী করে। তবে সরকারও চাইছে যে আগামীতে দেশে বিনিয়োগ বাড়ুক।
আগামী অর্থবছরের রাজস্ব বাজেট নিয়ে এনবিআরের প্রণীত সারসংক্ষেপে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেশ থেকে প্রতিবছর ১৬ বিলিয়ন ডলারের বেশি পাচার হয়েছে। এই অর্থ দেশে ফেরত আনা জরুরি হয়ে পড়েছে। শুধু রাজস্ব আদায়ের ওপর নির্ভর হয়ে সরকারের জাতীয় বাজেটের বড় অংশ বাস্তবায়ন কঠিন হয়ে পড়েছে। সরকারের অর্থ জোগাড়ে পাচার করা অর্থ ফেরত আনতে হবে। এ ছাড়া রাজস্ব খেলাপিদের কাছ থেকে পাওনা আদায়েও সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।
সারসংক্ষেপে আরও বলা হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর মিথ্যা ঘোষণায় আমদানি-রপ্তানি কমেছে। বড় মাপের অসাধু রপ্তানিকারকদের অনেকে গত কয়েক মাসে আমদানি-রপ্তানি কমিয়ে দিয়েছেন। অনেকে প্রায় বন্ধ করে দিয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে পাচার করা অর্থ উদ্ধারে সরকারকে নতুন কৌশল গ্রহণ করতে হবে।
এরই মধ্যে বিডা থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো প্রস্তাবে আগামী বাজেটে করপোরেট করহার সমন্বয় করার কথা বলা হয়েছে। বিশেষভাবে ১৯টি অগ্রাধিকার খাতের বিনিয়োগ বাড়াতে করপোরেট করহার ছাড় দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে গুরুত্ব দিয়ে ভেবে দেখতে বলা হয়েছে। |