[ অনলাইন ] 2025-02-05 |
|
|
|
|
চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত, কমেছে বাণিজ্য ঘাটতি
|
|
|
গত ৫ আগস্টে পট পরিবর্তনের পরপরই গতি বেড়েছে রেমিট্যান্সের। আগস্ট থেকে প্রতিমাসে টানা দুই বিলিয়ন ডলারের বেশি করে রেমিট্যান্স আসছে দেশে। পাশাপাশি বাড়ছে রপ্তানি আয়। বিপরীতে আগের মতো আমদানি (শিল্পের কাঁচামাল ও মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি) হচ্ছে না। এসব কারণে চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত দেখা দিয়েছে। কমেছে বাণিজ্য ঘাটতিও।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডলার সংকট এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কড়াকড়িতে দেশে মূলধনি যন্ত্রপাতিসহ সার্বিকভাবে আমদানি কমে গেছে। এ কারণে নতুন করে বিনিয়োগে যাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা। আমদানি ঋণপত্র খোলায় বেশ সাবধানী ব্যাংক। এসব কারণে সার্বিকভাবে বাণিজ্য ঘাটতি কমে গেছে, যা দেশের অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক।
মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন বলছে, বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যে ৬ দশমিক ৫১ বিলিয়ন ডলারের বড় ঘাটতি নিয়ে শেষ হয়েছিল বিগত ২০২৩-২৪ অর্থবছর। তবে সুখবর বয়ে এনেছে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছর। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাস (জুলাই-ডিসেম্বর) শেষে চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত দাঁড়িয়েছে ৩ কোটি ৩০ লাখ ডলার। অথচ এক মাস আগেও চলতি হিসাবে ১৯ কেটি ১০ লাখ ডলার ঘাটতি ছিল। আগের অর্থবছরে (২০২৩-২৪) চলতি হিসাবে ঘাটতি ছিল প্রায় ৩৪৬ কোটি ৫০ লাখ ডলার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, নভেম্বরের তুলনায় ডিসেম্বরে চলতি হিসাবে ঘাটতি কমেছে ১১৭ দশমিক ২৭ শতাংশ।
চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলই-ডিসেম্বর) ২ হাজার ২৩২ কোটি ৪ লাখ ডলারের পণ্য ও সেবা রপ্তানি হয়েছে। একই সময়ে আমদানি হয়েছে ৩ হাজার ২০৮ কোটি ৮ লাখ ডলারের পণ্য। এর ফলে ৯৭৬ কোটি ডলারের বাণিজ্য ঘাটতি তৈরি হয়েছে। এক মাস আগে এই ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৭৯৩ কোটি ডলার। সে হিসাবে এক মাসের ব্যবধানে ১৮২ কোটি ডলারের বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েছে। তবে আগের অর্থবছরের একই সময়ে বাণিজ্য ঘাটতি ছিল এক হাজার ৮৭ কোটি ডলার। সেই হিসাবে এক মাসের ব্যবধানে বাড়লেও গত বছরের একই সময়ের তুলনায় বাণিজ্য ঘাটতি ১০ দশমিক ২২ শতাংশ কমেছে।
গত জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসে মোট ১৩ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন বিভিন্ন দেশে বসবারত প্রবাসী বাংলাদেশিরা। যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৭ দশমিক ৬ শতাংশ বেশি। আগের বছরের একই সময়ে (জুলাই-ডিসেম্বর) মোট রেমিট্যান্সের পরিমাণ ছিল ১০ দশকি ৮০ বিলিয়ন ডলার।
ঘাটতি কমেছে সামগ্রিক লেনদেন ভারসাম্যে (ওভারঅল ব্যালান্স)। গত ডিসেম্বর মাস শেষে এ ঘাটতির পরিমাণ ছিল ২৪৭ কোটি ৩০ লাখ ডলার। এর আগের অর্থবছরের ডিসেম্বর শেষে সামগ্রিক লেনদেন ভারসাম্যে (ওভারঅল ব্যালান্স) ঘাটতি ছিল ৩৪৫ কোটি ১০ লাখ ডলার।
গত ২০২৩-২৪ অর্থবছর শেষে আর্থিক হিসাবে (ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্ট) উদ্বৃত্তের পরিমাণ ছিল ৪ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলার। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছর ঘাটতি নিয়ে শুরু হলেও এখন আর্থিক হিসাব উদ্বৃত্ত। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে আর্থিক হিসাবে ১৩৭ কোটি ৯০ লাখ ডলার উদ্বৃত্ত রয়েছে। যদিও এক মাস আগে অর্থাৎ নভেম্বর ঘাটতি ছিল ৫৬ কোটি ডলার।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী মুখপাত্র এবং ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগের পরিচালক শাহরিয়ার সিদ্দিক বলেন, চলতি হিসাবে ঘাটতি কমা বা উদ্বৃত্ত হওয়া অর্থনীতির জন্য পজিটিভ। গত ছয় মাসে রেমিট্যান্স ২৭ দশমিক ৭ শতাংশ ও রপ্তানিতে ১১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। তবে এ সময়ে আমদানি প্রবৃদ্ধি ছিল ৩ দশমিক ৫ শতাংশ। এ সময়ে বিদেশি মুদ্রা বাইরে যাওয়ার তুলানায় দেশে প্রবেশের গতি বেশি ছিল। এ কারণে চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত দেখা দিয়েছে। যদিও মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি কমেছে। নতুন বিনিয়োগ থমকে আছে। তবে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি কমলেও অন্যান্য ভোগ্যপণ্যের আমদানি ঠিক আছে। এ সূচক আমাদের অর্থনীতির জন্য ভালো সংবাদ। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণেও সহায়ক হবে এটি। |