[ পাতা ৯ ] 2025-04-18 |
|
|
|
|
রপ্তানির বিকল্প বাজার খুঁজতে হবে
|
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কে বাংলাদেশে প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া নিয়ে সিপিডি আয়োজিত সংলাপে অংশ নেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহানসহ (ডান থেকে তৃতীয়) অন্য অতিথিরা। গতকাল রাজধানীর গুলশানের লেকশোর হোটেলে। |
|
ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কনীতির প্রধান লক্ষ্যবস্তু চীন। তাদের মধ্যকার সম্পর্ক কেমন হবে, তা এখনো নির্ধারিত হয়নি। এ জন্য আরও সময় লাগবে। বিশ্ব অর্থনীতিতে সেটাই হবে সবচেয়ে বড় বিষয়।
সংলাপে বক্তারা বলেন, এশিয়া মহাদেশ আগামী দিনে বিশ্ব অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক প্রবৃদ্ধির মূল কেন্দ্র হবে।
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
যুক্তরাষ্ট্রে অনিশ্চয়তা থাকলে পণ্য রপ্তানিতে বিকল্প খুঁজতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) চেয়ারম্যান রেহমান সোবহান। তিনি বলেন, ‘ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কনীতি নিয়ে বিশ্ব অর্থনীতিতে যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে, সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের রপ্তানির একক বৃহত্তম বাজার। সেখানে অনিশ্চয়তা থাকলে আমাদের পণ্য রপ্তানির জন্য বিকল্প বাজার খুঁজতে হবে।’
সিপিডির আয়োজনে ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কে বাংলাদেশে প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া নিয়ে আয়োজিত সংলাপে রেহমান সোবহান এ কথা বলেন। রাজধানীর গুলশানের লেকশোর হোটেলে অনুষ্ঠিত সংলাপে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান। সঞ্চালনা করেন সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন।
সিপিডির চেয়ারম্যান রেহমান সোবহান বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কনীতির প্রধান লক্ষ্যবস্তু চীন। তাদের মধ্যকার সম্পর্ক কেমন হবে, তা এখনো নির্ধারিত হয়নি। এ জন্য আরও সময় লাগবে। বিশ্ব অর্থনীতিতে সেটাই হবে সবচেয়ে বড় বিষয়। এই পরিস্থিতিতে আগামী পাঁচ বছর বাংলাদেশের উচিত হবে রপ্তানির বিকল্প বাজার খোঁজা।
নিজেদের যে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা আছে, তার মধ্য থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) আমাদের বাজার বড় করার চেষ্টা করা উচিত বলে মনে করেন রেহমান সোবহান। তিনি বলেন, ইইউতে আরও কয়েক বছর বাংলাদেশের জন্য শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা আছে। সেই সঙ্গে কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও জাপানের বাজার অনুসন্ধান করতে হবে। এশিয়ার বাজারও আছে; এই মহাদেশ আগামী দিনে বিশ্ব অর্থনীতি ও বাণিজ্যিক প্রবৃদ্ধির মূল কেন্দ্র হবে। আগামী ২৫ বছরের মধ্যে এশিয়াই হবে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সবচেয়ে বড় জায়গা।
রেহমান সোবহানের কথার সূত্র ধরে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এশিয়ায় বড় বাজার রয়েছে। চীন বছরে ২ হাজার ৮০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য আমদানি করে। ভারত আমদানি করে ৭৫০ কোটি ডলারের পণ্য। বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত চীনে ১ বিলিয়ন ও ভারতে ২ বিলিয়ন ডলারের কম রপ্তানি করে। এই জায়গায় মনোযোগ দেওয়া গেলে পণ্য ও বাজার বহুমুখীকরণ করার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশের ওপর নির্ভরশীলতা কমানো সম্ভব।
বাংলাদেশ ট্যারিফ অ্যান্ড ট্রেড কমিশনের সাবেক সদস্য মোস্তফা আবিদ খান বলেন, ‘কোনো পণ্যের শুল্ক কমালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে আমদানি বাড়বে, সেই নিশ্চয়তা নেই। তাই এ ক্ষেত্রে একটি উপায় হচ্ছে, মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) করা। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এফটিএ অত সহজ নয়। যতবারই আমরা এফটিএ করার ইচ্ছা পোষণ করেছি; যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, বাংলাদেশ এখনো প্রস্তুত নয়।’
নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সাবেক সভাপতি ফজলুল হক বলেন, ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক আরোপের বিষয়টি অনিশ্চিত অবস্থায় রয়েছে। সে জন্য আমাদের সতর্কভাবে চলা উচিত। ৯০ দিনে এটি সমাধান হবে, এমনটা মনে হয় না। তিনি আরও বলেন, মার্কিন ক্রেতারা ১০ শতাংশ পাল্টা শুল্কের অর্ধেকটা সরবরাহকারীদের সঙ্গে ভাগাভাগি করতে বলছেন। এই ধাক্কা বড় কারখানাগুলো সামলাতে পারলেও ছোট-মাঝারি কারখানা যাতে ঝামেলায় না পড়ে, তার জন্য নীতিসহায়তা দরকার।
ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কে ক্রয়াদেশ বাতিল হচ্ছে। ক্রেতারা মূল্যছাড় দাবি করছেন। এতে রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের নগদ প্রবাহে সমস্যা হচ্ছে এমন মন্তব্য করেন ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি শামস মাহমুদ। তিনি বলেন, বিডার বিনিয়োগ সম্মেলনে একজন বিদেশি বিনিয়োগকারীকে সম্মাননা দেওয়া হয়। বাংলাদেশে তাঁর অবদান অনেক। সেই বিদেশি বিনিয়োগকারীর জমির সমস্যা সাত দিনে সমাধান করে দিয়েছে সরকার। অথচ দেশের ব্যবসায়ীরা জমির সমস্যা নিয়ে বছরের পর বছর সাবরেজিস্ট্রি অফিসে দৌড়ান, কিছুই করা হয় না। একজন বিদেশি বিনিয়োগকারীর সমস্যা সমাধান করা হলো, তাঁর পাশে দেশের একজন ব্যবসায়ীর সমস্যাও সমাধান করা যেত। এই বৈষম্য খুবই দুঃখজনক। গ্যাসের দাম বাড়ানোর সমালোচনাও করেন শামস মাহমুদ।
বহুজাতিক ব্যাংক এইচএসবিসি বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক আরোপ বুঝিয়ে দিল কত দ্রুত অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে। কোন বাজারে আমরা প্রতিযোগী সক্ষম হব সেটির পথনকশা দরকার।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের পণ্য রপ্তানির ৫০ শতাংশের গন্তব্য ইইউ। এখন অন্য কোনো দেশ যদি এই বাজারে রপ্তানি শুরু করে টিকে যায়, তাহলে আমরা প্রতিযোগিতায় পড়ে যাব। সে জন্য গ্যাস-বিদ্যুৎসহ ব্যবসার খরচ কমানো দরকার।’
ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির জন্য সুযোগ করে দিয়েছে বলে মনে করেন মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আমরা এখন কীভাবে আমাদের রপ্তানিকে প্রতিযোগিতাপূর্ণ করতে পারি সেই চেষ্টা করা দরকার।’
যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্কের প্রভাব দেশটির ভোক্তা ও আমাদের তৈরি পোশাকশিল্পের শ্রমিকদের ওপর পড়বে বলে মনে করেন গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সভাপ্রধান তাসলিমা আখতার। তিনি বলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প ৯০ দিনের জন্য পাল্টা শুল্ক স্থগিত করেছেন। এই সময়কে কাজে লাগাতে হবে। আতঙ্ক না ছড়িয়ে সমস্যা সমাধানের পথ খুঁজে বের করতে হবে।
সংলাপে আরও বক্তব্য দেন বিডি জবসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহিম মাসরুর, শ্রমিকনেতা বাবুল আখতার প্রমুখ।
|