[ পাতা ১ ] 2025-04-18 |
|
|
|
যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কনীতি নিয়ে সিপিডির সংলাপ |
বাজার ও পণ্যের বহুমুখীকরণ জরুরি
|
নজর দিতে হবে এশিয়া ও ইউরোপের বাজারে |
|
যুক্তরাষ্ট্রের পালটা শুল্কনীতি বাংলাদেশের জন্য নানা অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে। ফলে পরিস্থিতি মোকাবিলায় দেশটির সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে। এর ওপর নির্ভর করবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে কী সুবিধা পাওয়া যেতে পারে। এছাড়াও দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্যে বাজার ও পণ্যের বহুমুখীকরণ জরুরি। এক্ষেত্রে ইউরোপ ও এশিয়ার বাজারকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত সংলাপে বক্তারা এসব কথা বলেন। সংলাপের বিষয় ছিল-‘ট্রাম্প রেসিপ্রোকাল ট্যারিফস অ্যান্ড বাংলাদেশ কমপ্লিকেশনস অ্যান্ড রেসপন্স’। বক্তাদের মতে, চীনের ওপর অধিক শুল্ক আরোপের কারণে বাংলাদেশ খুব বেশি উপকৃত হবে, বিষয়টি এমন নয়। এই সমস্যা সমাধানে আঞ্চলিক সহযোগিতার ওপর জোর দিতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিতেও (এফটিএ) জোর দিতে হবে। এছাড়াও বাংলাদেশের রপ্তানি শুধু তৈরি পোশাকের ওপর নির্ভরশীল। এই নির্ভরশীলতা কমাতে হবে। সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুনের সঞ্চালনায় এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির বিশেষ ফেলো ড. অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সিপিডির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান, বাংলাদেশ ট্যারিফ অ্যান্ড ট্রেড কমিশনের সাবেক সদস্য মোস্তফা আবিদ খান, এইচএসবিসির চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার মাহবুব উর রহমান, বিকেএমইএর সাবেক সভাপতি ফজলুল হক, ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি শামস মাহমুদ প্রমুখ।
সাম্প্রতিক সময়ে ১৮০টি দেশের ওপর নতুন শুল্ক আরোপ করে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন। এক্ষেত্রে দেশটির বাজারে রপ্তানির বিপরীতে ১০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করা হয়। আর বাংলাদেশের শুল্ক ছিল ৩৭ শতাংশ। তবে ইস্যুটি নিয়ে বিশ্বব্যাপাী ব্যাপক সমালোচনার মুখে শেষ পর্যন্ত তা ৩ মাসের জন্য স্থগিত করা হয়। তবে চীনের ওপর ১৪৫ শতাংশ শুল্ক স্থগিত করা হয়নি। চীনের ওপর অধিক শুল্ক আরোপের কারণে বাংলাদেশ খুব বেশি উপকৃত হবে, বিষয়টি এমন নয়। এই সমস্যা সমাধানে আঞ্চলিক সহযোগিতার ওপর জোর দিতে হবে।
বৃহস্পতিবারের সংলাপে অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রধান লক্ষ্য চীন। তাদের সম্পর্ক এখনো নির্ধারিত হয়নি। ফলে আমেরিকা নিয়ে বাংলাদেশের করণীয় এখনো নির্ধারিত নয়। তিনি বলেন, বাংলাদেশের উচিত হবে আগামী ৫ বছর বিকল্প বাজার খোঁজা। তিনি বলেন, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের রপ্তানির একক বৃহত্তম বাজার। তবে সেখানে এত অনিশ্চয়তা থাকলে আমাদের বিকল্প খুঁজতে হবে।’ নিজেদের যে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা আছে, তার মধ্যে থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নে আমাদের বাজার বড় করার চেষ্টা করা উচিত। সেখানে আরও কয়েক বছর বাংলাদেশের জন্য শুল্কমুক্ত বাজারের সুবিধা আছে। সেই সঙ্গে কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও জাপানের বাজার অনুসন্ধান করতে হবে। এছাড়াও আগামী ২৫ বছরের মধ্যে বিশ্বের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক প্রবৃদ্ধির মূল কেন্দ্র হবে এশিয়া। সবকিছু মিলে ‘ট্রাম্পের শুল্ক নীতি নিয়ে বিশ্ব অর্থনীতিতে যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে, সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। মূল প্রবন্ধে ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে পণ্য আমদানির বিপরীতে বাংলাদেশ ১৮ কোটি ডলার শুল্ক আদায় করেছে। এর বিপরীতে, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হওয়া পণ্যের ওপর ১২৭ কোটি ডলার শুল্ক আদায় করেছে। তিনি বলেন, ট্যারিফের প্রভাব একেক দেশের ক্ষেত্রে একেক রকম হবে। যারা মনে করেন, চীনের ওপর বেশি হারে ট্যারিফ আরোপ করায় বাংলাদেশ বেশি উপকৃত হবে, বিষয়টি ঠিক নয়। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রে চীন যে পোশাক রপ্তানি করে, তা হলো ‘ম্যান-মেড ফাইবার’। আর বাংলাদেশের রপ্তানির ৭০ ভাগ কটন বা তুলায় উৎপাদিত পণ্য। ফলে চীনের ওপর উচ্চ শুল্কে বাংলাদেশ খুব বেশি উপকৃত হবে না। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ কোনো একটি আইটেমে যদি যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড় দেয়, অন্য দেশকেও সেই সুবিধা দিতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করতে হবে। মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এই সমস্যা কাটিয়ে উঠতে আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়াতে হবে। আর ট্রাম্পের এই ট্যারিফ পলিসি আমাদের এলডিসি থেকে বের হওয়াতে সহায়তা করবে। ৯০ দিন পর কি হয়, সেটার ওপর নির্ভর করে ব্যবস্থা নিতে হবে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র থেকে যে পরিমাণ পণ্য আমদানি হয়, তা যদি আরও ২০০ শতাংশ বাড়ানো হয় এবং দেশটিতে রপ্তানি ৫০ শতাংশ বাড়ানো হলে শুল্ক শূন্য হতে পারে। বাস্তবে এটি আসলে সম্ভব নয়। ড. মোস্তাফিজুর রহমান আরও বলেন, এখন আমাদের অপেক্ষা করতে হবে, দেখতে হবে ও পদক্ষেপ নিতে হবে।
ট্রাম্প প্রশাসনকে রোগের সঙ্গে তুলনা করে বিকেএমইএর সাবেক সভাপতি মো. ফজলুল হক বলেন, ট্রাম্পের শুল্কনীতি পুরোটা অনিশ্চিত প্রক্রিয়া। তবে মোটা দাগে ধরা যেতে পারে এই শুল্কনীতিতে চীন তাদের মূল টার্গেট। তিনি আরও বলেন, নির্ধারিত সময় শেষে বাংলাদেশর মতো দরিদ্র দেশগুলোর ওপর শুল্ক কিছুটা কমাতে পারে। কিন্তু আমাদের মার্কেটের অবস্থার ওপর ভিত্তি করে বিদেশি ক্রেতাদের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের ৫০ শতাংশ দর কষাকষি (নেগোশিয়েশন) করতে হবে। এর জন্য কারখানাগুলোকে ব্যাংকের সাপোর্ট দিতে হবে। তবে এই প্রক্রিয়াটা শুধু একটা পদ্ধতির মধ্য দিয়ে যাওয়া জরুরি। যা আগামী ৯০ দিনের জন্য কার্যকর হবে। আগামীতে আমাদের রপ্তানি কিছুটা কমতে পারে। এতে ঘাবড়ানোর কিছু নেই। তবে ৯০ দিন পরে পরিস্থিতি যাই হোক, তাতে যেন সরকারের সহযোগিতা থাকে।
মোস্তফা আবিদ খান বলেন, ‘প্রথমেই বুঝতে হবে, এটা পারস্পরিক শুল্ক নয়। ফলে আমরা যতই সাড়া দিই না কেন, লাভ নেই। আমাদের বুঝতে হবে, যুক্তরাষ্ট্র কী চায়। সেজন্য আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘কোন পণ্যে শুল্ক কমালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে আমদানি বাড়বে, তা নিশ্চিত নয়। আরেকটি উপায় হলো, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মুক্ত এফটিএ করা যায়। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এফটিএ করা সহজ নয়। কারণ যতবারই আমরা এফটিএ করতে চেয়েছি, যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, বাংলাদেশ এখনো প্রস্তুত নয়।’
|
|