আসন্ন বাজেট সামনে রেখে বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠন ভ্যাট ও কর অব্যাহতির আবেদন জানিয়ে আসছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বরাবর। গতকাল এক আলোচনা সভায় এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, সবাই কর কম দিতে চাইলে দেশ চালানোর অর্থ কোথায় পাওয়া যাবে। তবে ভ্যাট আদায় স্বচ্ছতা আনতে এনবিআর এবার বেশ কিছু পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে বলে জানান তিনি।

বর্তমানে যাত্রীদের ভ্রমণ কর এয়ারলাইন্স কোম্পানিগুলো তাদের টিকিটের দামের সাথে যোগ করে নিয়ে নেয়। কিন্তু আগামীতে ভ্রমণ কর যাত্রী নিজেই দেবে। তারা কর দিয়ে চালান নেবে। সেই করের চালান দেখিয়ে ভ্রমণ করতে হবে। মিষ্টির দামের মধ্যেই ভ্যাট অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

গতকাল রাজধানীর আগারগাঁওয়ে রাজস্ব ভবনে প্রাক-বাজেট আলোচনায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো: আবদুর রহমান খান এসব কথা বলেন। আলোচনায় দেশের বেসরকারি এয়ারলাইনসগুলোর সংগঠন অ্যাভিয়েশন অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এওএবি) জেট ফুয়েলের ওপর আমদানি শুল্ক ও ভ্যাট অব্যাহতি, উড়োজাহাজের বিভিন্ন যন্ত্রপাতির ওপর করহার কমানোর দাবি করেছে।

আবদুর রহমান খান বলেন, এখন কর দেয়া বাচ্চাদের খেলনার মতো। অনেক সহজ। কোনো ঝামেলা নেই। তারপরও কাক্সিক্ষত কর পাচ্ছি না, যা খুবই দুঃখজনক। করহার কমানো দাবি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এমন দেশ নেই, যেখানে এত কম করহার। তারপরও করহার আরো কমানোর জন্য আপনারা বিভিন্ন দাবি তুল ধরছেন। তাদের জন্য বলছি, করের অর্থ দিয়ে দেশের ব্যয় চালানো হয়। কিন্তু রাজস্ব আদায় কমলে দেশ চালানোর অর্থ কোথায় পাবো? তবে যাদের কর ও ভ্যাট হার অনেক বেশি, তাদের বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। কিভাবে কর ও ভ্যাট হার সহনশীল জায়গায় আনা যায়।

করের বৈষম্য দূর হবে জানিয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, বিভিন্ন ভ্যাট আদায়ে তৈরি হচ্ছে বৈষম্য। বৈষম্য দূর করতে কাজ করছি। পরিকল্পনা করেছি, সিঙ্গেল ডিজিটের ভ্যাট হার ব্যবস্থা রাখতে। ভ্রমণ করের বিষয়ে তিনি বলেন, যাত্রীদের ভ্রমণ কর এয়ারলাইন্স কোম্পানিগুলো তাদের টিকিটের দামের সাথে যোগ করে নিয়ে নেয়। এই করের টাকা সরকারের, কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই এই টাকা সরকার পায় না। অনেক ক্ষেত্রেই এয়ারলাইন কোম্পানিগুলো সরকারি কোষাগারে এই রাজস্ব জমা দেয় না। দেখা যায়, কখনো কখনো কোম্পানি দেউলিয়া হয়ে যায়, তখন সেই ব্যবসা বন্ধ করে তারা চলে যায়। এতে সরকারের কোটি কোটি টাকা পাওনা থাকলেও সেই রাজস্ব আর পাওয়া যায় না। তাই আমরা চাচ্ছি, যাত্রীদের ভ্রমণ কর যাত্রী নিজে দেবে। তারা কর দিয়ে চালান নেবে। কর চালান দেখিয়ে চলে যাবে।

আলোচনায় বাংলাদেশ ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রান্সফরমার অ্যান্ড সুইচগিয়ার ৬৫ শতাংশ কাঁচামালের ওপর সম্পূর্ণ শুল্ক প্রত্যাহারের দাবি জানায়। আবার বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি উৎপাদনের কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক পাঁচ শতাংশ রাখাসহ ফিনিশড পণ্য আমদানিতে ২৫ শতাংশ শুল্ক রাখার দাবি সংগঠনটির। এ ছাড়া স্থানীয় সোলার প্যানেল উৎপাদকদের ৫০০ কোটি টাকা আর্থিক সহায়তার দাবি জানিয়েছে সোলার মডিউল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ। যাত্রীবাহী নৌযানের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষের ওপর ভ্যাট অব্যাহতির দাবি বাংলাদেশ ইংল্যান্ড ওয়াটারওয়ে অ্যাসোসিয়েশনের।

এ দিকে মিষ্টি ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগ তুলেছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, আমি নিজেও বহু মিষ্টির দোকান থেকে মিষ্টি কিনেছি। কোনো দোকানদার ভ্যাটের রিসিট দেন না। ইএফডি ব্যবহার করেন না।

এ সময় মিষ্টির ওপর ভ্যাট কমানোর প্রস্তাব দিয়ে বাংলাদেশ সুইটস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব শ্রী ননী গোপাল ঘোষ বলেন, মিষ্টির ওপর যখন সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট ছিল তখন অনেক বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে। জবাবে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, আপনি বলছেন ফ্রি করে দিলে রাজস্ব বাড়বে। এটা একটা আজগুবি কথা। আপনি ১৫ শতাংশের ওপর অঙ্ক করে দেখলেন রাজস্ব আদায় কম, সাড়ে ৭ শতাংশ বেশি হয় এ রকম জাদুকরি দেশে বাস করলে তো হবে না।

তিনি বলেন, আমি যত মিষ্টি কিনেছি এই জীবনে, সব জায়গায় ভ্যাট দিয়েছি, কিন্তু আমার ভ্যাট সরকারের কোষাগারে আসেনি। আমার তো বহু বয়স হয়েছে। এই পর্যন্ত দেখলাম না কোনো মিষ্টির দোকানি আমাকে ভ্যাটের রিসিট দিয়েছেন। এই টাকা প্রোপারলি জমা হয়েছে, এটা দেখিনি।

মিষ্টিতে সুপারশপের মতো ভ্যাট ইনক্লুসিভ করার পরিকল্পনার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা মিষ্টির দামে ভ্যাট অন্তর্ভুক্ত করব। ইনক্লুসিভ করব। ভ্যাট আলাদা করে ধরা হবে না। ক্রেতা ভ্যাট দেখে চমকে উঠবে না। এমন একটা আদেশ প্রস্তুত করছি। টোটাল ভ্যালুর ওপর ভ্যাট ধরব। ক্রেতার জানার দরকার নেই যে তিনি কত টাকা ভ্যাট দিয়েছেন। এই একই জিনিস আমরা সুপারশপে করেছি।

এনবিআর চেয়ারম্যান আরো বলেন, আমাদের এবারের বাজেটের মূল টার্গেট হচ্ছে আমরা ট্রেন্ড ফ্যাসিলিটেড করব। লুফহোলগুলো বন্ধ করব, আর বৈষম্য যত পারি কমাবো।