[ অনলাইন ] 2025-05-09 |
|
|
|
চট্টগ্রামে বিডা চেয়ারম্যান |
গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকটে হাতছাড়া হচ্ছে বিনিয়োগের সুযোগ
|
|
|
বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগের বিপুল আগ্রহ থাকলেও গ্যাস ও বিদ্যুৎ অবকাঠামোর অভাবের কারণে সেই সুযোগ কাজে লাগানো যাচ্ছে না বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে চট্টগ্রাম নগরীর র্যাডিসন ব্লু বে ভিউ হোটেলে ব্যবসায়ী, শিল্পপতি ও সুধীসমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান। অনুষ্ঠানে ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিরা তাঁদের বিভিন্ন সমস্যা ও চ্যালেঞ্জের কথা বিডা চেয়ারম্যানের সামনে তুলে ধরেন।
আশিক চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশে যাঁরা ব্যবসা করেন, তাঁরা অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে ব্যবসা করছেন। আমরা সমস্যাগুলো সমাধানের চেষ্টা করছি। দুর্ভাগ্যজনকভাবে গ্যাস একটি বড় সমস্যা। সরবরাহে ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে। এই গ্যাস সরবরাহ নিয়ে অনেক আলোচনা চলছে। গত বুধবার জ্বালানি উপদেষ্টা জানিয়েছেন, বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাস সরবরাহ কমিয়ে শিল্পে বাড়ানো হবে। আমার মনে হয়, এটি যথেষ্ট নয়, আমাদের আরো অনেক কিছু করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘বুধবারও আমার কাছে চীনা বিনিয়োগকারীরা এসেছিলেন। তাঁদের প্রত্যাশা হলো, ছয় থেকে বারো মাসের মধ্যে তাঁরা কারখানা চালু করবেন। কিন্তু গ্যাস, বিদ্যুৎ ও রাস্তার মতো সুবিধাগুলো এত অল্প সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা করে দেওয়ার সুযোগ আমার কাছে নেই। আমাদের যত দ্রুত সম্ভব এই সমস্যাগুলো কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করতে হবে।’
বিডা চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমার শেষ কথা হলো বিনিয়োগ। আমি চট্টগ্রাম বন্দরের লালদিয়ার চরে গিয়েছিলাম, সেখানে প্রায় ৬০০ থেকে ৮০০ মিলিয়ন ডলার বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ (এফডিআই) আসার সম্ভাবনা রয়েছে। এরপর আমরা বে টার্মিনালের ওখানে গেলাম। সেখানে দুটি অপারেটরের কথা বলা হচ্ছে। তাদের প্রত্যেকের এক বিলিয়ন ডলার করে বিনিয়োগ করার পরিকল্পনা আছে। এরপর নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালে (এনসিটি) গিয়েছিলাম, সেখানেও প্রায় ২০০ মিলিয়ন ডলারের মতো আলোচনা হচ্ছে।’
চট্টগ্রামের বিশাল সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করে বিডা চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা এখন যে উৎপাদন করি, তা আমাদের সক্ষমতা বা যোগ্যতার তুলনায় কিছুই না। চট্টগ্রামে আমরা চীনের একটি অর্থনৈতিক অঞ্চলের ঘোষণা দিয়েছি। আনোয়ারায় একটি কোরিয়ান ইপিজেড রয়েছে। মিরসরাইয়ে আমাদের জাতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চলটি রয়েছে। বাংলাদেশে যত অর্থনৈতিক অঞ্চল আছে, তার মধ্যে এটিই প্রধান। শিল্পায়নের দীর্ঘমেয়াদি যে লক্ষ্য আমাদের, সেটি পুরোটাই চট্টগ্রামকে কেন্দ্র করে।’
অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দর ঘিরে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের স্বপ্ন ও মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে দেশে প্রতিবছর মাল্টিবিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ আসবে। অধ্যাপক ইউনূস যতগুলো মিটিং করেছেন, অন্তত দুই ডজন মিটিংয়ে উনাকে সবাই বলেছেন, আপনার চট্টগ্রাম বন্দরের দক্ষতা বাড়াতে হবে, না হলে বড় ইনভেস্টমেন্ট আসবে না।’
গতকাল দুপুরে ব্যবসায়ী, শিল্পপতি ও সুধীসমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে বিকেলে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউস সম্মেলনকক্ষে সংবাদ সম্মেলন করেন বিডার চেয়ারম্যান। এ সময় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ও চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন। এর আগে গতকাল সকালে চট্টগ্রাম বন্দরের লালদিয়ার চর, বে টার্মিনাল ও নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল পরিদর্শন করেন বিডা চেয়ারম্যান।
এ সময় তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দরের লালদিয়ার চরে প্রস্তাবিত নতুন কনটেইনার টার্মিনালে নেদারল্যান্ডসের বিশ্বখ্যাত পোর্ট অপারেটর এপিএম (এপি মুলার-মার্সেক) প্রায় ৮০০ মিলিয়ন ডলার (প্রায় সাত হাজার কোটি টাকা) বিনিয়োগ করবে। এই বিনিয়োগ দেশের অর্থনীতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বন্দর পরিদর্শনের সময় উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব মোহাম্মদ শফিকুল আলম, উপপ্রেস সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ মজুমদার, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান, সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুকসহ চট্টগ্রাম বন্দরের কর্মকর্তারা। |