[ অনলাইন ] 2025-05-09 |
|
|
|
কমছে চার কারণে |
বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ তলানিতে
|
|
|
বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ প্রবৃদ্ধির হারে স্থবিরতা বিরাজ করছে। অর্থবছরের হিসাবে ঋণের প্রবাহ এখন তলানিতে পৌঁছেছে। চলতি অর্থবছরের শুরুর দিকে এ হার ছিল নেতিবাচক। সাম্প্রতিক সময়ে প্রবাহ কিছুটা বাড়লেও তা দুই শতাংশের ঘর অতিক্রম করতে পারেনি। গত জুলাই-ফেব্রুয়ারিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২ দশমিক ৬৩ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে বেড়েছিল ৫ দশমিক ৫৩ শতাংশ। গত অর্থবছরের ওই সময়ের তুলনায় এখন প্রবৃদ্ধির হার প্রায় ৩ শতাংশ কম। অর্থচ চলতি অর্থবছরের মুদ্রানীতিতে আগামী জুনের মধ্যে এ খাতে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৯ দশমিক ৮ শতাংশ। ফলে এ খাতে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন বেশ চ্যালেঞ্জিং।
তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেসরকারি খাতে অর্থবছরের শুরুর দিকে যে অনিশ্চয়তা ছিল, তা এখন অনেকটাই কেটে গেছে। রপ্তানি বাড়ছে। ডলার সংকট কেটে যাওয়ায় আমদানিও অবাধ করা হয়েছে। ফলে আমদানিও বাড়ছে। বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহও আগের চেয়ে বাড়তে শুরু করেছে। আগামীতে এ হার আরও বাড়বে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, মূলত চারটি কারণে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ প্রত্যাশিত হারে বাড়েনি। এগুলো হচ্ছে-বৈশ্বিক ও দেশে বিদ্যমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তাদের অনিশ্চয়তা, অর্থবছরের শুরুর দিকে ডলারের তীব্র সংকটে আমদানি বাধাগ্রস্ত, ব্যাংকগুলোর তারল্য সংকটের কারণে ঋণ বিতরণের সক্ষমতা হ্রাস ও সরকার পতনের পর দেশে সৃষ্ট রাজনৈতিক অস্থিরতা।
সূত্র জানায়, অর্থনৈতিক ও ডলার সংকটের কারণে অর্থবছরের শুরুর দিকে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ ছিল নেতিবাচক। ওই সময়ে দশমিক ৫৭ শতাংশ পর্যন্ত নেতিবাচক হয়েছে। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে অন্তর্বর্তী সরকার অর্থনৈতিক সংস্কার ও ডলার সংকট নিরসনে নানামুখী পদক্ষেপ নিলে সেপ্টেম্বর থেকে ঋণপ্রবাহ বাড়তে শুরু করে। গত জুলাই-সেপ্টেম্বরে ঋণপ্রবাহ বেড়েছিল দশমিক ৬৭ শতাংশ। জুলাই-অক্টোবরে তা আরও বেড়ে ১ শতাংশের নিচে ছিল। জুলাই-নভেম্বরে তা বেড়ে দেড় শতাংশে পৌঁছায়। এরপর থেকে বেড়ে চলতি অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারিতে ২ দশমিক ৬৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে বেড়েছিল ৫ দশমিক ৫৩ শতাংশ। গত অর্থবছরের ওই সময়ের তুলনায় চলতি অর্থবছরের একই সময়ে ঋণপ্রবাহ এখনো প্রায় ৩ শতাংশ কম।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানায়, মূল্যস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণ করতে কঠোর মুদ্রানীতি অনুসরণ করা হচ্ছে। ফলে টাকার প্রবাহ কমানো হচ্ছে। ঋণের সুদের হার বাড়ানো হচ্ছে। এ কারণে ইচ্ছে করলেও ঋণপ্রবাহ বাড়ানো যাচ্ছে না। মূল্যস্ফীতির হার সহনীয় মাত্রায় নেমে এলে টাকার প্রবাহ বাড়ানো হবে ও ঋণের সুদের হার কমানো হবে। তখন বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ বাড়বে। তাদের মতে, এখন ডলার সংকট কেটে গেছে। আমদানি অবাধ করা হয়েছে। ফলে আমদানি বাড়ছে। আগে যেখানে আমদানির প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক হতো, সেখানে গত জুলাই-মার্চে আমদানি বেড়েছে সাড়ে ৫ শতাংশ। নতুন এলসি খোলা বেড়েছে সাড়ে ৪ শতাংশ। রপ্তানির জন্য কাঁচামাল আমদানি বেড়েছে ২১ দশমকি ১১ শতাংশ এবং এলসি খোলা বেড়েছে সাড়ে ১৩ শতাংশ। এসব কারণে আগামীতে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ আরও বাড়বে। তবে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে সংশয় রয়েছে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনেকে মনে করেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, কৃষি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি কমেছে। শিল্প খাতে বাড়লেও মূল ঋণ বিতরণ বাড়েনি। আগের ঋণের ওপর আরোপিত সুদসহ মোট ঋণ বেড়েছে। ফলে নতুন ঋণ বিতরণ কমেছে। করোনার সময় বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ বেশিমাত্রায় কমেছিল। ওই সময়ে ২০২০-২১ অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারিতে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ কমে প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়ায় ৫ দশমিক ১৩ শতাংশ। এরপর ২০২১-২২ অর্থবছরের একই সময়ে এ হার বেড়ে ৭ দশমিক ৫৭ শতাংশে ওঠে। এরপর থেকে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের হার কমছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা আরও কমে ৬ দশমিক ১৩ শতাংশে নামে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা আরও কমে ৫ দশমিক ৫৩ শতাংশ হয়। চলতি অর্থবছরে এ হার আরও কমে ২ দশমিক ৬৩ শতাংশে নেমেছে। অর্থাৎ চলতি অর্থবছরসহ গত টানা তিন অর্থবছর ধরে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ কমছে।
প্রকৃত অর্থে বৈদেশিক বাণিজ্যে ঋণপ্রবাহ বাড়েনি, বরং কমেছে। কারণ বৈদেশিক বাণিজ্যের ঋণের বড় অংশই দেওয়া হয় বৈদেশিক মুদ্রায়। টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বাড়ায় বৈদেশিক মুদ্রার হিসাবে ঋণের প্রবৃদ্ধি কমেছে। কিন্তু টাকার হিসাবে বেড়েছে। এসব মিলে বেসরকারি খাতে মন্দা জেঁকে বসেছে। ফলে কর্মসংস্থান বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। শিল্প খাতে উৎপাদন কমছে। বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ কমার পাশাপাশি মোট অভ্যন্তরীণ ঋণপ্রবাহও কমেছে। ব্যাংক খাতে গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারিতে দেশের অভ্যন্তরীণ ঋণপ্রবাহ বেড়েছিল ৪ দশমিক ৫৮ শতাংশ। গত অর্থবছরে বেড়েছে ৪ দশমিক ৩১ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে বেড়েছে ২ দশমিক ২১ শতাংশ। এদিকে ক্ষুদ্রঋণ বিতরণও কমে গেছে। গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের ওই সময়ে ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণ বিতরণ বেড়েছিল ২৩ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে বেড়েছে ৯ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে বেড়েছে ২ দশমিক ০৯ শতাংশ। |