[ অনলাইন ] 2025-05-09 |
|
|
|
প্রথম প্রান্তিক ২০২৫ |
যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশী পোশাক আমদানি বেড়েছে ২৬.৬৬%
|
|
|
একক বাজার হিসেবে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় রফতানি গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র। অর্থমূল্য বিবেচনায় দেশটি চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) বাংলাদেশ থেকে ২২২ কোটি ডলারের বেশি পোশাকপণ্য আমদানি করেছে। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় আমদানি বেড়েছে ২৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ। ৬ মে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বিভাগের অফিস অব টেক্সটাইলস অ্যান্ড অ্যাপারেলসের (ওটিইএক্সএ) এক পরিসংখ্যানে এ তথ্য উঠে এসেছে।
ওটিইএক্সএর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে ২২২ কোটি ৩৮ লাখ ৭৫ হাজার ৯৬৯ ডলারের তৈরি পোশাক আমদানি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ২০২৪ সালের একই সময়ে আমদানির অর্থমূল্য ছিল ১৭৫ কোটি ৫৮ লাখ ৫১ হাজার ৬২৬ ডলার। এ হিসাবে জানুয়ারি-মার্চে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক আমদানি বেড়েছে ২৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ।
দেশভিত্তিক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বছরের প্রথম প্রান্তিকে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে মোট ২ হাজার ৪ কোটি ৮৩ লাখ ৭০ হাজার ডলারের পোশাক আমদানি করেছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১০ দশমিক ৯৫ শতাংশ বেশি। আলোচ্য তিন মাসে পোশাক আমদানির শীর্ষ উৎস চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক আমদানি বেড়েছে ৪ দশমিক ১৮ শতাংশ। আমদানি হয়েছে ৩৫৯ কোটি ৬১ লাখ ১০ হাজার ডলারের পোশাক।
একই সময় ভিয়েতনাম থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক আমদানি ১৩ দশমিক ৯৬ শতাংশ বেড়েছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটি থেকে যুক্তরাষ্ট্র আমদানি করেছে ১ হাজার ৩১৭ কোটি ডলারের পোশাক। এছাড়া ইন্দোনেশিয়া, ভারত, মেক্সিকো, কম্বোডিয়া, পাকিস্তান ও কোরিয়া থেকেও পোশাক আমদানি বেড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। পোশাক ক্রয়ের শীর্ষ ১০ উৎসের মধ্যে শুধু হন্ডুরাস থেকে আমদানি কমেছে যুক্তরাষ্ট্রের। আর এ ১০ দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আমদানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে বাংলাদেশ থেকে।
বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক আমদানির এ প্রবৃদ্ধি অব্যাহত থাকা নিয়ে অবশ্য সংশয় রয়েছে বাংলাদেশী পোশাক রফতানিকারকদের। তাদের দাবি, গত ২ এপ্রিল দেশভেদে ভিন্ন হারে রেসিপ্রোকাল বা পাল্টা শুল্কারোপের ঘোষণা দেয় ট্রাম্প প্রশাসন। কয়েক দিন পর তা ৯০ দিনের জন্য স্থগিতও করা হয়। তবে প্রত্যেক দেশের ওপর বহাল রাখা হয় ১০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক। এ ঘোষণার আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রফতানিতে গড়ে ১৫ শতাংশ শুল্ক আদায় করা হতো। এখন পাল্টা শুল্ক বাবদ অতিরিক্ত ১০ শতাংশের ভার এককভাবে ক্রেতারা নিতে চাচ্ছেন না। শুল্কের একটি অংশের ভার রফতানিকারককে বহন করতে বলছেন তারা। ক্ষেত্রবিশেষে অতিরিক্ত শুল্কের পুরোটাই রফতানিকারককে পরিশোধে চাপ দেয়া হচ্ছে। ফলে ট্যারিফের প্রভাবে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক আমদানি প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকবে কিনা এখনই বলা সম্ভব হচ্ছে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বণিক বার্তাকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক আমদানির মোট প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশের মতো, সেখানে বাংলাদেশ থেকে আমদানি প্রবৃদ্ধি ২৬ শতাংশের বেশি। পণ্যের দামের দিকে দৃষ্টি দিলে দেখা যাবে ভারত-পাকিস্তানের তুলনায় বাংলাদেশ কিছুটা ইতিবাচক অবস্থায় আছে। পণ্যের পরিমাণও সন্তোষজনক। সব মিলিয়ে আমরা ভালোই করেছি। ট্যারিফের প্রভাবে এ ধারা থাকবে কি থাকবে না সেটা এখনো বোঝা সম্ভব হয়নি। পরের মাসগুলোর পরিসংখ্যানে হয়তো সে প্রভাব প্রতিফলিত হবে।’
মহিউদ্দিন রুবেল আরো জানান, দেশভেদে ইউনিটপ্রতি পণ্যের দাম পর্যবেক্ষণে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ১ দশমিক ১২ শতাংশ বেড়েছে। ভিয়েতনামের বেড়েছে ৪ দশমিক ৪২ শতাংশ। চীনের বেড়েছে ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ। ভারত ও পাকিস্তানের কমেছে যথাক্রমে ২ দশমিক ৪৬ ও ২ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ।
বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ পোশাক রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান ডিবিএল গ্রুপ। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএ জব্বার বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে আমাদের মুনাফা করার সক্ষমতা কমবে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় উৎপাদন দক্ষতার উন্নয়ন ঘটাতে হবে। সেজন্য প্রয়োজন হবে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও গ্যাস। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের রিটেইলারদের স্টোরগুলোয় শুল্ক আরোপের প্রভাব পড়েছে ক্রেতার ক্রয়াভ্যাসে এবং তাতে পণ্য বিক্রিতে শ্লথগতির তথ্য জানতে পেরেছি। সবাই কিছুটা রক্ষণশীল হতে শুরু করেছে। এতে ভোগব্যয় কমে যাবে। বাংলাদেশের রফতানিকারকদের জন্য চাপ পড়বে পণ্যের দামে। তবে বছর শেষে পণ্যের ভলিউম আগের মতো থাকবে বলে আশা করছি। |