[ পাতা ১ ] 2025-07-08
 
৩৫ মাসের মধ্যে মূল্যস্ফীতি এখন সবচেয়ে কম
 
মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতি কিছুটা স্বস্তিতে এসেছে। টানা চার মাস ধরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমেছে। সর্বশেষ গত জুন মাসে দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে ৮ দশমিক ৪৮ শতাংশ হয়েছে, যা বিগত ৩৫ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন।

এর আগে ২০২২ সালের জুলাই মাসে ৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ মূল্যস্ফীতি হয়েছিল। এরপর গত জুন মাসের মতো এত কম মূল্যস্ফীতি আর হয়নি।

গতকাল সোমবার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) জুন মাসের মূল্যস্ফীতি চিত্র প্রকাশ করেছে। বিবিএস বলছে, গত জুন মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৭ দশমিক ৩৯ শতাংশ। আর খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি হয় ৯ দশমিক ৩৭ শতাংশ।

তিন বছর ধরে দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। টানা চার মাস ধরে মূল্যস্ফীতি কমায় সর্বনিম্ন মূল্যস্ফীতি গরিব ও সীমিত আয়ের মানুষের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি আসতে পারে। তবে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১০ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ।

মূল্যস্ফীতি একধরনের করের মতো। আপনার প্রতি মাসে আয়ের পুরোটাই সংসার চালাতে খরচ হয়ে যায়। কিন্তু হঠাৎ জিনিসপত্রের দাম বাড়লে এবং সে অনুযায়ী আপনার আয় না বাড়লে আপনাকে ধারদেনা করে সংসার চালাতে হবে কিংবা খাবার,

কাপড়চোপড়, যাতায়াতসহ বিভিন্ন খাতে কাটছাঁট করতে হবে। মূল্যস্ফীতির চেয়ে মজুরি বৃদ্ধি বা আয় বৃদ্ধি কম হলে সাধারণ মানুষের কষ্ট বাড়ে। প্রকৃত আয় কমে যায়।

তবে মূল্যস্ফীতির হার কমে যাওয়া মানে জিনিসপত্রের দাম কমে যাওয়া নয়। অন্যান্য মাসের তুলনায় ওই নির্দিষ্ট মাসে দাম বাড়ার গতি হয়তো কিছুটা কম হয়েছে, এটাই বোঝায়। উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে, ২০২৪ সালের বাজার থেকে পণ্য ও সেবা কিনতে যদি আপনার খরচ হয় ১০০ টাকা। গত জুন মাসে মূল্যস্ফীতি ৮ দশমিক ৪৮ শতাংশ হওয়ার মানে হলো ২০২৫ সালের জুন মাসে, অর্থাৎ এক বছর একই পণ্য ও সেবা কিনতে আপনাকে ১০৮ টাকা ৪৮ পয়সা খরচ করতে হয়েছে। প্রতি ১০০ টাকায় আপনার খরচ বেড়েছে ৮ টাকা ৪৮ পয়সা।

জুন মাসের মূল্যস্ফীতি প্রসঙ্গে বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান প্রথম আলোকে বলেন, মূল্যস্ফীতি কমে যাওয়ার সঙ্গে বাজার পরিস্থিতি মেলানো যাচ্ছে। জুন মাসে চালের দাম বেড়েছে, শাকসবজি ও মাছ–মাংসের দাম বেড়েছে। গরিব মানুষ চাপে আছেন। কিন্তু সরকারি হিসাবে দেখা গেল, মূল্যস্ফীতির হার কমেছে। এটি বেশ আশ্চর্যজনক। বাজারের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। বিবিএসের এ নিয়ে চিন্তা করা উচিত।

গত এক বছরের মধ্যে ২০২৪ সালের জুলাই মাসে ১৩ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ১৪ দশমিক ১০ শতাংশ খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে। পরের সাত মাস খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের বেশি ছিল। পরের পাঁচ মাসে তা ১০ শতাংশের নিচে নেমে আসে। এক বছরের মধ্যে যেসব পণ্যের দাম সাধারণ মানুষকে ভুগিয়েছে, এর মধ্যে অন্যতম চাল, তেল, ডিম, মাংস ইত্যাদি। একেক সময়ে একেকটির দাম বাজারে হঠাৎ করে বেড়েছে। সর্বশেষ এক মাস ধরে সব ধরনের চালের দাম বাড়তি। অন্যদিকে ১২ মাস ধরেই খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের ঘরে ছিল।

দু-তিন বছর ধরে অর্থনীতির অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায় মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর সুদের হার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হয়। এনবিআরও তেল, আলু, পেঁয়াজ, ডিমসহ বেশ কিছু নিত্যপণ্যে শুল্ক-কর কমিয়ে দেয়। বাজারে নিত্যপণ্যের আমদানিপ্রবাহ ঠিক রাখার চেষ্টা করা হয়।

এদিকে গতকাল দুপুরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাসের মাধ্যমে জুন মাসের মূল্যস্ফীতির তথ্য জানিয়েছেন। ফেসবুক স্ট্যাটাসে শফিকুল আলম বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের সুচিন্তিত নীতি-কৌশলের ফলে মূল্যস্ফীতি দ্রুত কমছে। জুন (২০২৫ সাল) মাসের উপাত্ত অনুযায়ী পয়েন্ট–টু–পয়েন্ট মূল্যস্ফীতি ৮ দশমিক ৪৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা গত ২০২৪ সালের আগস্ট মাসের তুলনায় ২ শতাংশ-বিন্দু কম।’

মজুরি বৃদ্ধির হার কম

বিবিএসের হিসাবে, গত জুন মাসে জাতীয় মজুরি হার কিছুটা কমে ৮ দশমিক ১৮ শতাংশ। এর মানে হলো, মজুরি যত বেড়েছে, তার চেয়ে বেশি বেড়েছে জিনিসপত্রের দাম। তাই মূল্যস্ফীতির হার মজুরি বৃদ্ধির চেয়ে বেশি।

মজুরিনির্ভর বিশাল জনগোষ্ঠীর ওপর মূল্যস্ফীতির চাপ বেশি পড়ে। গ্রাম-শহরনির্বিশেষে ১৪৫টি নিম্ন দক্ষতার পেশার মজুরির ওপর এ হিসাব করে থাকে বিবিএস। বিবিএস বলছে, দেশের প্রায় ৮৬ শতাংশ মানুষ অনানুষ্ঠানিক খাতে কাজ করেন। এমন কর্মজীবী মানুষের সংখ্যা ৬ কোটির মতো।
Print Close  
Print Close  
No link found
            Top
            Top
 
Home / About Us / Benifits /Invite a Friend / Policy
Copyright © Hawker 2009-2010, Allright Reserved