[ অনলাইন ] 2025-07-08
 
ক্ষুদ্র ঋণে ধুঁকছে ১২শ তাঁতি
বেলকুচিতে দাদন মহাজনে আটকে আছে তাঁতশিল্প
 
বেলকুচিতে বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড থেকে নেওয়া ক্ষুদ্র ঋণ পরিশোধ করতে পারছে না ১২০০ তাঁতি। শুধু তাই নয়, এ অঞ্চলের বেশিরভাগ তাঁতিই এখন মহাজন ও দাদন ব্যবসায়ীদের সুদের জালে জড়িয়ে পড়ছে। জানা গেছে, বেলকুচিতে প্রায় ৮ হাজার তাঁতির দেখভাল ও ঋণ বিতরণের দায়িত্ব তাঁত বোর্ডের বেসিক সেন্টারের। তবে লোকবল কম থাকায় প্রতিষ্ঠানটি তাঁতিদের কাছ থেকে ঋণ আদায় ও নতুন ঋণ বিতরণে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে পারছে না। ২০১৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত উপজেলার আড়াই হাজার তাঁতিকে প্রায় সাড়ে ১৮ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এরমধ্যে ১২০০ তাঁতিই তাদের ঋণ পরিশোধ করতে পারেনি। ক্ষুদ্র তাঁতিরা জানান, গত কয়েক বছরে সুতা, রংসহ তাঁতসামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ায় বিনিয়োগ কয়েক গুণ বেড়েছে। এতে অনেক কাঠখড়ি পুড়িয়ে পাওয়া ঋণের টাকায় তাঁত চালু করতে না পেরে ক্ষতির মুখে পড়ছেন তাঁতিরা।

বেলকুচি বেসিক সেন্টার সূত্রে জানা যায়, নিয়ম অনুযায়ী তাঁতিদের ঋণ পেতে হলে পৌরসভা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডভিত্তিক পর্যায়ের প্রাথমিক তাঁতি সমিতির সদস্য হতে হয়। বেলকুচিতে ৩৮টি সমিতি রয়েছে। সমিতির আওতাভুক্ত কোনো তাঁতি ঋণ গ্রহণে ইচ্ছুক হলে তাকে সমিতির সভাপতি ও সম্পাদকের মাধ্যমে বেসিক সেন্টারে আবেদন করতে হয়। সেন্টারের কর্মকর্তারা সরেজমিনে তাঁতিদের অবস্থা দেখে ঋণ অনুমোদনের জন্য তাঁত বোর্ডে পাঠিয়ে দেন। অনুমোদন পাওয়া গেলে বেসিক সেন্টারের মাধ্যমে তাঁতিদের সেই ঋণ ৫ শতাংশ সুদে তিন বছরের মধ্যে মাসিক কিস্তিতে শোধ করতে হয়। তবে তাঁতিরা জানান, আবেদন করার পর ঋণ পেতে কতদিন লাগবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। অনেক সময় দু-এক বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরও তাঁত বোর্ড থেকে ঋণ প্রদানের অনুমোদন আসে না। এদিকে নিয়মানুযায়ী, কোনো সমিতির সদস্যদের মধ্যে বিতরণ করা ঋণের ৬০ ভাগ আদায় না হলে ওই সমিতির আর কোনো সদস্যকে নতুন করে ঋণ দেওয়া হয় না। সিংহভাগ সমিতির ৬০ ভাগ ঋণ আদায় না হওয়ায় বর্তমানে এই ঋণ দেওয়া বন্ধ রয়েছে। বেলকুচি পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ড প্রাথমিক তাঁতি সমিতির সভাপতি ইমরাম হোসেন বলেন, তাঁতিদের এখন খুবই দুঃসময় চলছে। আমার সমিতির ৪৫ জন সদস্য প্রায় এক কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিল। কিন্তু পরিশোধ করেছে মাত্র ৬ জন। বাকি ৩৯ জন সদস্য ঋণ পরিশোধ না করায় নতুন ঋণের আবেদন করা যাচ্ছে না। ৮ নম্বর ওয়ার্ড সমিতি সভাপতি আব্দুল কাদের বলেন, অনেকেই ঋণগ্রস্ত হয়ে দাদন ব্যবসায়ীদের সুদের জালে পড়ে তাঁত বিক্রি করেছেন। ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মামুন রশিদ বলেন, সমিতির অন্য সদস্যরা ৬০ ভাগ ঋণ পরিশোধ না করায় আমাকে ঋণ দেয়া হচ্ছে না। তাঁতের সুতা, শ্রমিকদের মজুরি ও রঙ কেনায় অনেক টাকার প্রয়োজন হয়। এসবের যোগান দিতে আমায় বাধ্য হয়ে চড়া সুদে দাদন নিতে হচ্ছে। বাংলাদেশ জাতীয় তাঁতি সমিতির সভাপতি আব্দুস ছামাদ খান বলেন, তাঁত শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে প্রত্যেক সদস্যকে নিয়মিতভাবে ঋণ দেয়া প্রয়োজন। সমিতির কিছু সদস্যের কারণে অন্য সদস্যরা ঋণ পাবে না। এটা এক ধরনের বৈষম্য। তাঁত বোর্ডের এমন সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি। বেলকুচি বেসিক সেন্টারের লিয়াজোঁ কর্মকর্তা তন্বী বলেন, বিতরণকৃত ঋণের প্রায় ৯ কোটি টাকা খেলাপি রয়েছে। জুনের শেষ সপ্তাহে তাদের নোটিশও করা হয়েছে। 
Print Close  
Print Close  
News Source
            Top
            Top
 
Home / About Us / Benifits /Invite a Friend / Policy
Copyright © Hawker 2009-2010, Allright Reserved