[ অনলাইন ] 2025-07-09
 
ট্রাম্পের শুল্ক: বড় ঝুঁকিতে ৮০১ রপ্তানি প্রতিষ্ঠান
 
বাংলাদেশের পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক ঘোষণায় বড় ধরনের ঝুঁকিতে পড়তে পারে দেশের আট শতাধিক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান। রপ্তানিকারকেরা বলছেন, আলোচনা করে বাড়তি শুল্ক কমানো না গেলে দেশটিতে রপ্তানি বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে।

গত সোমবার পাল্টা ৩৫ শতাংশ শুল্ক নির্ধারণ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আগামী ১ আগস্ট থেকে এই শুল্ক কার্যকর হওয়ার কথা। ট্রাম্পের এই ঘোষণায় বাংলাদেশের দুই হাজারের বেশি রপ্তানিকারক দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্রে যেসব প্রতিষ্ঠান পণ্য রপ্তানি করে, তাদের অনেকে আবার অন্য দেশেও রপ্তানি করে। কেউ কেউ শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই তাদের সব পণ্য রপ্তানি করছে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানভেদে ১ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করছে ২ হাজার ৩৭৭ প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে ৮০১টি প্রতিষ্ঠানের মোট রপ্তানির ৫০ শতাংশের বেশি রপ্তানি করেছে যুক্তরাষ্ট্রে। রপ্তানিকারকেরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ওপর বেশি নির্ভরশীলতার কারণে এ প্রতিষ্ঠানগুলো বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে।

এই ৮০১টি প্রতিষ্ঠান গত অর্থবছর যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মোট রপ্তানি করেছে ৬৬২ কোটি ডলার। এর মধ্যে শুধু যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করেছে ৫০৫ কোটি ডলার, যা যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের মোট রপ্তানির ৫৮ শতাংশ।

সব মিলিয়ে গত অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রে ৮৭৬ কোটি ডলার পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এর মধ্যে তৈরি পোশাকের রপ্তানি মূল্য প্রায় ৭৫৯ কোটি ডলার।
বড় ঝুঁকিতে পোশাক শিল্পপ্রতিষ্ঠান

চট্টগ্রামের নাসিরাবাদের তৈরি পোশাক প্রতিষ্ঠান ফরচুন অ্যাপারেলস গত অর্থবছরে ৩ কোটি ৩৭ লাখ ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে। পুরোটাই রপ্তানি হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। প্রতিষ্ঠানটি এশিয়ান ডাফ গ্রুপের।

জানতে চাইলে এশিয়ান ডাফ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবদুস সালাম প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিযোগী দেশের পণ্যের ওপর শুল্কহারের তুলনায় বাংলাদেশের শুল্কহার ১০–১৫ শতাংশ বেশি। এর মানে হলো, আমরা যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হারাতে যাচ্ছি। বিষয়টি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতারাও উদ্বিগ্ন। শুল্ক যদি না কমে তাহলে তারা এখন বাংলাদেশ থেকে ব্যবসা সরিয়ে নেবে।

ফরচুন অ্যাপারেলসের মতো ১৬৮টি প্রতিষ্ঠান শুধু যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া অন্য কোথাও পণ্য রপ্তানি করে না। বাড়তি শুল্ক কার্যকর হলে এসব প্রতিষ্ঠান বড় ধরনের ঝুঁকিতে পড়তে পারে বলে মনে করেন তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকেরা।

আবার যাদের রপ্তানির সিংহভাগ যুক্তরাষ্ট্রে, তারাও বড় ঝুঁকির মুখে আছে। এ রকম একটি প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রামের নাসিরাবাদে ইনডিপেনডেন্ট অ্যাপারেলস। গত অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটির মোট রপ্তানির ৮৯ শতাংশের গন্তব্য ছিল যুক্তরাষ্ট্র।

জানতে চাইলে ইনডিপেনডেন্ট অ্যাপারেলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম আবু তৈয়ব প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রায় তিন দশক ধরে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতাদের সঙ্গে ব্যবসা করে আসছি। ওয়ালমার্টসহ যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতারা আমাদের আস্থায় নিয়েছে। এখন যদি আগের ১৫ শতাংশের সঙ্গে বাড়তি ৩৫ শতাংশ অর্থাৎ ৫০ শতাংশ শুল্ক দিতে হয়, তাহলে ক্রেতাদের পোশাক নেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। ৯ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের বৈঠকের দিকে তাকিয়ে আছি আমরা।’

যুক্তরাষ্ট্রের বিকল্প বাজারেও বাংলাদেশের ঝুঁকি থাকবে বলে মনে করেন তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) প্রথম সহসভাপতি সেলিম রহমান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির ওপর বেশি নির্ভরশীল প্রতিষ্ঠানগুলো বড় ঝুঁকিতে পড়বে। কোনো কারণে দেশটিতে রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হলে বিকল্প বাজারে সবাই ঝুঁকবে। শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের সব দেশের রপ্তানিকারকেরা বিকল্প বাজার খুঁজবে। তাতে বিকল্প বাজারে তীব্র প্রতিযোগিতার মুখে পড়তে হবে। ন্যায্যমূল্যও পাওয়া যাবে না।
আরও যেসব প্রতিষ্ঠান বেশি ঝুঁকিতে

তৈরি পোশাক ছাড়া জুতা, টুপি, তাঁবু, ব্যাগ, আসবাব, খাদ্যপণ্য রপ্তানি হয় যুক্তরাষ্ট্রে। গত অর্থবছরে ১৭৬টি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান রপ্তানির জন্য শতভাগ দেশটির ওপর নির্ভরশীল ছিল। মোট ৭০৩টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এককভাবে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ৫০ শতাংশের বেশি রপ্তানি করেছে, এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৩১৯।

যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের একটি চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার মাসুদ অ্যাগ্রো প্রসেসিং ফুড প্রোডাক্টস লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশরাফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রায় ১৩ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে হিমায়িত খাদ্যপণ্যসহ বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে আসছি। তিন মাস আগে যখন প্রথমবার পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেওয়া হয়, তখন রপ্তানি সাময়িক স্থগিত রাখার কথা বলেছিল ক্রেতা প্রতিষ্ঠান। এখন নতুন করে ট্রাম্পের ঘোষণায় আবারও দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে।’

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানি ধারাবাহিকভাবে বাড়ছিল। এখন পাল্টা শুল্কের প্রভাবে দেশটিতে রপ্তানির প্রবৃদ্ধি কমে যেতে পারে বলে শঙ্কা অর্থনীতিবিদ ও গবেষকদের। তাঁরা বলছেন, পাল্টা শুল্ক কমানোর সুযোগ এখনো শেষ হয়ে যায়নি। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দর–কষাকষি করে যদি বাংলাদেশের প্রতিযোগী দেশের তুলনায় এই বাড়তি শুল্কহার কমিয়ে আনা যায়, তাহলে উল্টো বাজারটিতে রপ্তানির নতুন সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে। তবে প্রতিযোগী দেশের তুলনায় বাংলাদেশের শুল্কহার যদি বেশি হয়, তাহলে এই বাজার ধীরে ধীরে হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে। অর্থনীতিতে সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়তে পারে।
Print Close  
Print Close  
News Source
            Top
            Top
 
Home / About Us / Benifits /Invite a Friend / Policy
Copyright © Hawker 2009-2010, Allright Reserved