[ পাতা ১ ] 2025-07-09
 
বাংলাদেশী পণ্যে ৩৫% শুল্ক আরোপ নিয়ে আজ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বৈঠক
 
উচ্চহারের শুল্ক তিন মাস স্থগিতের মধ্যেই বাংলাদেশী পণ্যে ৩৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। নতুন শুল্কহার ঘোষণা করে তিনি বাংলাদেশসহ ১৪টি দেশকে সোমবার চিঠি দিয়েছেন।

উচ্চহারের শুল্ক তিন মাস স্থগিতের মধ্যেই বাংলাদেশী পণ্যে ৩৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। নতুন শুল্কহার ঘোষণা করে তিনি বাংলাদেশসহ ১৪টি দেশকে সোমবার চিঠি দিয়েছেন।

বাংলাদেশের পণ্যের ওপর এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কহার ছিল গড়ে ১৫ শতাংশ, এখন নতুন করে আরোপিত ৩৫ শতাংশ যুক্ত হলে এটি ৫০ শতাংশে দাঁড়াবে। আর তাতে সবচেয়ে বড় ধাক্কা খাবে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত। কেননা যুক্তরাষ্ট্রই বাংলাদেশী পোশাকের সবচেয়ে বড় বাজার।

নতুন করে আরোপিত শুল্কহারকে মাথায় নিয়েই আজ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বৈঠক করবে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি দল। বাংলাদেশের পক্ষে এ বৈঠকে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান নেতৃত্ব দেবেন। প্রতিনিধি দলটি এরই মধ্যে সেখানকার কর্মকর্তাদের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করেছে।

হোয়াটসঅ্যাপে গতকাল যোগাযোগ করা হলে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বণিক বার্তাকে বলেন, ‘চুক্তি নিয়ে দরকষাকষির আলোচনায় বিষয় শুধুই শুল্ক না। শুল্কের বিষয়টি সমাধানযোগ্য সমস্যা। ট্যারিফ বা শুল্কের বাইরে বাণিজ্যের বিষয়গুলো অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সব ইস্যু নিয়েই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বৈঠক রয়েছে। সেখানে ভালো কিছু আশা করছে বাংলাদেশ।’

ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় বসার পর গত ২ এপ্রিল শতাধিক দেশের ওপর উচ্চহারে পাল্টা শুল্ক (রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ) আরোপের ঘোষণা দেন। বাংলাদেশের ওপর বাড়তি ৩৭ শতাংশ শুল্কের ঘোষণা আসে। এ নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে সম্পূরক শুল্ক পুনর্বিবেচনা করতে ট্রাম্পকে গত ৭ এপ্রিল চিঠি পাঠান প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনতে পদক্ষেপ নেয়ার কথা তুলে ধরে শুল্কারোপের সিদ্ধান্ত তিন মাস স্থগিত রাখার অনুরোধ করেন তিনি।

বাংলাদেশের মতো অনেক দেশই শুল্ক কমাতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দেনদরবার শুরু করে। কোনো কোনো দেশ মার্কিন পণ্যের ওপর শুল্কহার শূন্যের ঘরে নামিয়ে আনার ঘোষণা দেয়। এর এক সপ্তাহের মাথায় গত ৯ এপ্রিল বাড়তি শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিতের ঘোষণা দেন ট্রাম্প, যার মেয়াদ শেষ হচ্ছে আজ। তবে তার দুইদিন আগেই গত সোমবার বাংলাদেশী পণ্যের ওপর নতুন শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। চিঠিতে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, আগামী ১ আগস্ট থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো বাংলাদেশী সব পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। আর এ শুল্ক বর্তমানে খাতভিত্তিক যে শুল্ক দেয়া হয়, তার অতিরিক্ত হিসেবে প্রযোজ্য হবে। ট্রান্সশিপমেন্টের মাধ্যমে পণ্য পাঠানো হলে সেখানেও এ শুল্ক প্রযোজ্য হবে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।

ডোনাল্ড ট্রাম্প লেখেন, ‘এ চিঠি পাঠানো আমার জন্য এক সম্মানের বিষয়। কারণ এটি আমাদের বাণিজ্যিক সম্পর্কের দৃঢ়তা এবং প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন। বাংলাদেশের সঙ্গে উল্লেখযোগ্য বাণিজ্য ঘাটতি থাকা সত্ত্বেও একসঙ্গে কাজ চালিয়ে যেতে আগ্রহী যুক্তরাষ্ট্র। তবে আমরা এখন আরো ভারসাম্যপূর্ণ ও ন্যায্য বাণিজ্যের ভিত্তিতে এগিয়ে যেতে চাই।’

বাংলাদেশের কোম্পানিগুলো যদি যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য উৎপাদন বা তৈরির সিদ্ধান্ত নেয়, সেক্ষেত্রে কোনো শুল্ক দিতে হবে না বলে চিঠিতে জানান ট্রাম্প। এ বিষয়ে তিনি লেখেন, ‘সেক্ষেত্রে দ্রুত, পেশাদারত্বের সঙ্গে তাদের অনুমোদন দিতে আমরা সবকিছু করব, যা হয়তো কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই করা হবে।’

বাংলাদেশ পাল্টা শুল্ক বাড়ালে অতিরিক্ত আরো শুল্ক আরোপের হুঁশিয়ারিও চিঠিতে দিয়েছেন ট্রাম্প। তিনি লিখেছেন, ‘কোনো কারণে বাংলাদেশ যদি শুল্কহার বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে আমরা একই হারে পাল্টা শুল্ক আরোপ করব।’

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যে বাণিজ্য ঘাটতি, বাংলাদেশের অনেক বছরের শুল্ক ও অশুল্ক নীতি এবং নানা রকমের বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতা এক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে বলে উল্লেখ করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। এ ঘাটতি তাদের অর্থনীতি এবং জাতীয় নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি বলে জানান।

এদিকে ৩৫ শতাংশ বাড়তি শুল্ক আরোপ নিয়ে ট্রাম্পের চিঠির বিষয়ে গতকাল সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান। সচিবালয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মার্কিন প্রেসিডেন্ট নতুন করে একটি চিঠি দিয়েছেন, যেখানে বাংলাদেশের ওপর ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। কিন্তু সেটির কার্যকারিতা দেয়া হয়েছে ১ আগস্ট থেকে। এর সঙ্গে তারা আগের ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্টের যে খসড়া পাঠিয়েছিল, তার ওপর আমাদের রেসপন্স পাঠিয়েছি। সেটার ওপর আমাদের কয়েক দফা মিটিং হয়েছে। ভার্চুয়ালি আমি সব মিটিংয়েই যুক্ত ছিলাম। আমাদের উপদেষ্টা ওখানে আছেন। আমাদের সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ছিলেন মিটিংগুলোয়।’

নতুন করে শুল্ক আরোপের বিষয়ে মূলত আজ ও আগামীকাল মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা হবে বলে জানান বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান। এসব বৈঠকে অংশ নিতে তিনিও যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন বলে গতকাল জানান। তিনি বলেন, ‘আলোচনার দরজা যেহেতু খোলা আছে, কাজেই কিছু একটা আউটকাম তো আমরা আশা করতেই পারি। আমরা তো চাই আমাদের ওপর রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ না থাকুক এবং অন্য যে শর্তগুলো দেয়া হয়েছে, সেগুলোও শিথিল করা হোক।’

শুল্ক হ্রাসের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সরকার বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর পরিকল্পনা করছে বলে জানান বাণিজ্য সচিব। এরই অংশ হিসেবে সরকারি খাতে ফ্রুট ড্রিংক কেনার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রাধান্য দেয়া হবে বলেও তিনি জানান। মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘উড়োজাহাজ ও সামরিক যন্ত্রপাতি কেনার ক্ষেত্রেও যুক্তরাষ্ট্রকে গুরুত্ব দেয়া হবে।’

আলোচনায় সরকারের কী কী যুক্তি থাকবে—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘প্রথমত শুল্ক কমানো এবং দ্বিতীয়ত আমাদের ট্রেড রিলেটেড যে ইস্যুগুলো আছে, সেগুলোয় যেন অসুবিধাজনক পরিস্থিতিতে না পড়ি। বাংলাদেশের জন্য প্রধান বিবেচ্য হলো আমাদের বাণিজ্য স্বার্থ সংরক্ষণ এবং যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের এক্সিস্টিং বাণিজ্য রক্ষা করা। আমাদের কাছে তারা কিছু জিনিস চেয়েছে, সেটা হলো শুল্ক কমানো। পর্যায়ক্রমে শুল্ক, ভ্যাট, সাপ্লিমেন্টারি ডিউটি, রেগুলেটরি ডিউটি—এগুলো যেন আমরা কমাই। সে ধরনের প্রস্তাব তারা করেছে। আমরা এনবিআরের সঙ্গে আলোচনা করার পর সরকারের অন্যান্য অংশীজনের সঙ্গে বসে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেব।’

কীভাবে, কোন কোন ক্ষেত্রে বাণিজ্য বাড়াবেন—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে বাণিজ্য সচিব বলেন, ‘বাণিজ্য বাড়ানোর জন্য তারা যদি কিছু শুল্ক ছাড় দেয়, তাহলে স্বাভাবিকভাবে বাণিজ্যিক ট্রেডের ব্যাপারে ব্যবসায়ীরা সিদ্ধান্ত নেবেন। কিন্তু সরকারি ট্রেড বাড়ানোর জন্য আমরা ফ্যাসিলিটি দেব। আপনারা জানেন, আমাদের বিমান বহরের প্রায় সব এয়ারক্রাফট বোয়িং। আমাদের বিমানের ইনফ্রাস্ট্রাকচার যা আছে সেটাও বোয়িং। কাজেই বোয়িং ফ্লাইট কেনার জন্য আমাদের কিছু আদেশ দেয়ার কথা রয়েছে শিগগিরই। আমরা সেভাবে নেগোসিয়েশন করেছি বোয়িংয়ের সঙ্গে। এছাড়া তুলা আমদানিকে আমরা প্রমোট করব। আপনারা জানেন যে তুলার ওপর এমনিতেই শূন্য শুল্ক। কিন্তু সেখানে আমেরিকান তুলা আমদানি যাতে বেশি হয় সে জন্য কিছু ফ্যাসিলিটি এখানে তৈরি করে দেব। আমাদের মিলিটারি ইকুইপমেন্টের একটা বড় অংশও আমেরিকা থেকে কেনা হয়। সেসব ক্ষেত্রও আমাদের বিবেচনায় আছে।’

মিলিটারি ইকুইপমেন্ট বলতে কী অস্ত্র বোঝাচ্ছেন—এমন প্রশ্নে মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘মিলিটারি হার্ডওয়্যার বলতে যেটা বুঝায়, সেটা হলো আমাদের ভিকেলগুলো, আর্মভিকেল, আদার্স‌…। আমাদের যা যা সংগ্রহ করা হয়, এর বেশির ভাগ আমেরিকা থেকে করা হয়। ওখানে তাদের দিক থেকে কোনো চাপ নেই। তারা বলেছে, যখন কেনা হবে, আমরা যেন তাদের গুরুত্ব দেই। অন্যান্য মেশিনারিজের ক্ষেত্রেও সে কথা তারা বলেছে। তাতে সম্মত হতে আমাদের অসুবিধা নেই।’

ভিয়েতনাম আলোচনার মাধ্যমে ২৬ শতাংশ শুল্ক কমিয়েছে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশকে খুব বেশি তৎপরতা দেখা যায়নি। সাংবাদিকের পক্ষ থেকে এমন কথা বলা হলে বাণিজ্য সচিব বলেন, ‘তৎপরতায় পার্থক্যটা আমরা মনে করি না। যেদিন থেকে পাল্টা শুল্ক এম্পো‌জ হয়েছে, তারপর আমাদের প্রধান উপদেষ্টা, বাণিজ্য উপদেষ্টাসহ আমি চিঠি দিয়েছি। আমরা প্রায় পাঁচ দফা মিটিং করেছি। এরপর তারা যে ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্ট খসড়া পাঠিয়েছে, সেগুলোর ওপর চার দফায় আমরা অ্যামেন্ডমেন্ট পাঠিয়েছি, সেগুলোর ওপর নেগোসিয়েশন করেছি। এছাড়া ই-মেইল যোগাযোগ বা টেলিফোন যোগাযোগে এগুলো চলছে। কাজেই আমরা একদম ফুলটাইম এনগেজড ছিলাম গত ২ এপ্রিল থেকে। আমরা যথেষ্ট তৎপর।’

নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে শুল্ক কমাতে না পারলে দেশের আমদানি-রফতা‌নির ওপর চাপ আসবে কিনা? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, ‘প্রেশার হবে, সেটা তো সবাই বোঝে। সেটা যাতে না হয় এজন্য আমরা যাচ্ছি আলোচনা করতে। আশা করছি ভালো কিছুই পাব। এক মাস হাতে রেখে আজ (মঙ্গলবার) ডকুমেন্ট হ্যান্ডওভার করা হয়েছে। নেগোসিয়েশনের ডেট দেয়া হয়েছে, যেটা তাদের পক্ষ থেকেই দেয়া। তার মানে নেগোসিয়েশনের দরজা খোলা রয়েছে।’

এদিকে সরকারের পক্ষ থেকে আশাবাদ ব্যক্ত করা হলেও ট্রাম্প ঘোষিত ৩৫ শতাংশ শুল্কের চিঠির পর মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন উৎপাদনমুখী শিল্প ও পোশাক খাতসংশ্লিষ্টরা। এ বিষয়ে বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আনোয়ার উল আলম চৌধুরী পারভেজ বণিক বার্তাকে বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে কোনো কিছুই শেয়ার করা হচ্ছে না। এখনো বলা হচ্ছে, আমরা আলোচনা করছি। এপ্রিলেই আমি বাণিজ্য উপদেষ্টা ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক উপদেষ্টার সঙ্গে বসেছিলাম। ওনাদেরকে এক্সপ্লেইন করা হয়, যে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে কোনো বিল বা ঘোষণা এলে লবিস্ট নিয়োগের চর্চা রয়েছে। কারণ আমরা কী চাই তা সেই লবিস্ট যেভাবে মার্কিন প্রশাসনকে বোঝাতে পারবে সেটা আমরা পারব না। যুক্তরাষ্ট্র এ ব্যবস্থাতেই কাজে অভ্যস্ত। দরকার হলে বিজিএমইএ-বিকেএমইএ অর্থায়ন করবে বলেও জানানো হয়। যা-ই হোক এ প্রক্রিয়ায় বাণিজ্য সচিব ইউএসটিআরের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রেখেছিলেন। এখন আমরা দেখছি, ফলাফল কিছুই নেই।’

ব্যবসায়ীরা এখনো আশাবাদী উল্লেখ করে আনোয়ার উল আলম চৌধুরী পারভেজ বলেন, ‘সরকারের দরকষাকষির পদ্ধতিতে নিশ্চয়ই শক্তিশালী কোনো ক্ষেত্র রয়েছে। দেশটিতে এ মুহূর্তে আমাদের উপদেষ্টারা অবস্থান করছেন। অন্যান্য দেশ কী করেছে সেদিকে দৃষ্টি দিলে দেখা যাবে, ইন্দোনেশিয়ার ১৬ জন ব্যবসায়ী নেতা যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন দরকষাকষির প্রক্রিয়ায়। আমাদেরকে এখন আরো শক্তিশালীভাবে কাজ করতে হবে। ভিয়েতনাম শুল্ক আরোপের আগেই কাজ শুরু করেছে। দেশটি ধারাবাহিকভাবে এ প্রক্রিয়ায় যুক্ত রেখেছিল নিজেদের। আমাদেরও আরো অনেক শক্তিশালী পারস্যুয়েশন প্রয়োজন ছিল। আমরা হয়তো ধরে নিয়েছিলাম, আমাদের কিছুই হবে না। এমন ভাবাটা ভুল হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র এখনো বলছে তারা দরকষাকষি করবে। সেটার জন্য আমাদের যে প্রস্তুতি থাকতে হবে, তা না হলে এ পরিস্থিতি থেকে বের হয়ে আসাটা কঠিন।’ এ কাজে সংশ্লিষ্ট সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানান এ ব্যবসায়ী নেতা।

অর্থমূল্য বিবেচনায় যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পণ্য রফতানির ৮৭ শতাংশই তৈরি পোশাক। এ খাতের উদ্যোক্তারাও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দরকষাকষিতে ইতিবাচক ফলাফল আশা করছেন। পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘নতুন ঘোষণার প্রভাব অবধারিতভাবে নেতিবাচক। পোশাক খাতের মোট রফতানির ২০ শতাংশের জন্য আমরা যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীল। ভারত, ভিয়েতনাম, পাকিস্তানের মতো দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা কমে গেলেই রফতানিতে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীলতায় প্রভাব পড়বে। প্রতিযোগিতা সক্ষমতা কমে গেলে ওই দেশগুলো থেকেই পোশাক কিনবে যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশ থেকে তারা সরে যাবে। পুরোটা না হলেও একটা বড় অংশ সরে যাবে। যে কারখানার অধিকাংশ উৎপাদন সক্ষমতা যুক্তরাষ্ট্রের ক্রয়াদেশের ওপর নির্ভরশীল তারা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সহনশীলতা ভেদে কারখানা বসে যাবে। কারখানা উদ্যোক্তা অন্য বাজারের দিকে ধাবিত হলে সেখানেও তীব্র প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হবে। এতে করে সরবরাহ শৃঙ্খল বিঘ্নিত হয়ে চাহিদার চেয়ে সরবরাহ বেড়ে যাবে আর পণ্যের দাম কমিয়ে দেবেন ক্রেতারা। এটাই হচ্ছে প্রভাব, যা আমাদের জন্য বড় ধরনের আঘাত বা ধাক্কা।’
Print Close  
Print Close  
News Source
            Top
            Top
 
Home / About Us / Benifits /Invite a Friend / Policy
Copyright © Hawker 2009-2010, Allright Reserved