[ অনলাইন ] 2025-07-09
 
ট্রাম্পের শুল্কে ঝুঁকিতে এশিয়া অস্থিরতা বাড়বে বিশ্ববাণিজ্যে
 

মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প গত ২০ জানুয়ারি দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এর পর থেকেই বিশ্ব অর্থবাজারে যেমন অস্থিরতা বেড়েছে, তেমনি অনিশ্চয়তায় পড়েছে বিশ্ব অর্থনীতি। এরপর গত এপ্রিলে তিনি যখন বিশ্বের সব দেশের ওপর সর্বনিম্ন ১০ শতাংশ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করেন তখন আরেকটি ঝড় বয়ে যায় বিশ্ব অর্থনীতিতে। কয়েক ট্রিলিয়ন ডলার হারিয়ে যায় বিশ্ব শেয়ারবাজার থেকে।

সর্বশেষ গত সোমবার ট্রাম্প বাংলাদেশসহ ১৪ দেশের ওপর নতুন করে পাল্টা শুল্কের ঘোষণা দেন। এই দেশগুলোর বেশির ভাগই এশিয়ার। তাতে ধারণা করা হচ্ছে, ট্রাম্পের শুল্কযুদ্ধের প্রধান টার্গেটে পরিণত হয়েছে রপ্তানিমুখী এশিয়া। এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব সাউথ-ইস্ট এশিয়ান নেশনস (আসিয়ান)।
চলতি সপ্তাহে কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠেয় সংগঠনটির পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে পাল্টা শুল্কের বিষয়টি এজেন্ডায় থাকবে।

গতকাল মঙ্গলবার এক যৌথ বিবৃতিতে আসিয়ান পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা বলেন, ‘মার্কিন পাল্টা শুল্ক ঘিরে বিশ্বজুড়ে যে বাণিজ দ্বন্দ্ব ও বৈশ্বিক অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা বাড়ছে, তাতে আমরা উদ্বেগ প্রকাশ করছি, বিশেষ করে শুল্ক নিয়ে একতরফা সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে তার ব্যাপারে।’ এতে যুক্তরাষ্ট্রের নাম উল্লেখ না করে আরো বলা হয়, ‘শুল্ক আরোপ প্রতিকূল ফল বয়ে আনতে পারে এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক বিভাজনকে আরো তীব্র করে তুলতে পারে, যা আসিয়ানের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও প্রবৃদ্ধির জন্য জটিল চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করতে পারে।’

গত সোমবার ট্রাম্প ১৪টি দেশের ওপর উচ্চহারে যে আমদানি শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন, এতে সবচেয়ে বেশি ৪০ শতাংশ শুল্ক পড়েছে মিয়ানমার ও লাওসের ওপর।
বাংলাদেশকে ৩৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপের কথা জানানো হয়েছে।

ট্রাম্পের চিঠি অনুযায়ী, আগামী ১ আগস্ট থেকে এই নতুন শুল্কহার কার্যকর হবে। তবে প্রেসিডেন্ট নিজেই জানিয়েছেন, এই সময়সীমা ‘শতভাগ চূড়ান্ত নয়’। অর্থাৎ আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে কোনো সমঝোতা হলে শুল্কহারের পরিবর্তন হতে পারে। ট্রাম্পের নতুন শুল্কনীতিতে থাকা ১৪ দেশে শুল্কের হার হচ্ছে—লাওস, মিয়ানমার : ৪০ শতাংশ শুল্ক; থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া : ৩৬ শতাংশ; বাংলাদেশ, সার্বিয়া : ৩৫ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়া : ৩২ শতাংশ, দক্ষিণ আফ্রিকা, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা : ৩০ শতাংশ এবং মালয়েশিয়া, তিউনিশিয়া, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, কাজাখস্তান : ২৫ শতাংশ।

যুক্তরাজ্য ও ভিয়েতনামের সঙ্গে এরই মধ্যে চুক্তি হয়েছে বলে জানান ট্রাম্প। এ ছাড়া ভারতের সঙ্গে আলোচনা ‘প্রায় শেষ পর্যায়ে’ বলে উল্লেখ করেন তিনি। অন্যদিকে ট্রাম্পের শুল্ক কমানোকে ‘জয়’ হিসেবে দেখছে কম্বোডিয়া। ট্রাম্প কম্বোডিয়ার পণ্যের ওপর ঘোষিত ৪৯ শতাংশ শুল্ক কমিয়ে ৩৬ শতাংশ করেছেন। এই সিদ্ধান্তকে বড় জয় হিসেবে অভিহিত করেছেন কম্বোডিয়ার উপপ্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বাণিজ্য আলোচক সান চানথল।

এশিয়ার দেশগুলোর ওপর ট্রাম্পের শুল্ক আরোপে ব্রিটিশ গণমাধ্যম গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এশিয়ার দেশগুলোকে কঠোর শুল্কের সম্মুখীন হতে হয়েছে, কারণ ট্রাম্পের দাবি অনুযায়ী তাদের বাণিজ্য ঘাটতি অন্যায্য, অর্থাৎ তারা যুক্তরাষ্ট্রে যত রপ্তানি করে, তার চেয়ে অনেক কম আমদানি করে।

তবে বিশ্লেষকরা এই হিসাব ব্যবহারের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এবং ইঙ্গিত দিয়েছেন যে ট্রাম্প প্রকৃতপক্ষে চীনকে শাস্তি দিতে চাইছেন, যেসব দেশ চীনের মতো বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি থেকে উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ পায়, সেসব দেশকে লক্ষ্য করে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশ, যারা ২০২৪ সালে বৈশ্বিক জিডিপির ৭.২ শতাংশ প্রতিনিধিত্ব করেছিল, টেক্সটাইল ও জুতার মতো পণ্যের বড় উৎপাদনের ফলে—এ ধরনের শুল্কে তারা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রে এসব পণ্যের মূল্যও উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে।

এদিকে ব্রিকস জোটের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ছে, এমন দেশগুলোর ওপর আরও ১০ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তাঁর অভিযোগ, দেশগুলো তাঁর শুল্কনীতির সমালোচনা করে যুক্তিবহির্ভূতভাবে যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী নীতি অনুসরণ করছে।

তবে অনেক দেশ এখনো শেষ মুহূর্তে ট্রাম্পের শুল্ক পুরোপুরি এড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ইউরোপীয় কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গত রবিবার ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান উরসুলা ভন ডার লিয়েনের বাণিজ্য নিয়ে ‘গঠনমূলক আলোচনা’ হয়েছে। 
Print Close  
Print Close  
News Source
            Top
            Top
 
Home / About Us / Benifits /Invite a Friend / Policy
Copyright © Hawker 2009-2010, Allright Reserved