রাজধানীর পল্লবীর বাউনিয়া বাঁধ এলাকায় চাঁদাবাজি ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে মাদক কারবারি দুটি গ্রুপের গোলাগুলিতে আয়েশা আক্তার (২৬) নামে এক নারীর মৃত্যুর ঘটনায় মামলা হয়েছে।
নিহতের স্বামী মিরাজুল ইসলাম বাদী হয়ে ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে বুধবার রাতে পল্লবী থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার পর ওই রাতেই সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় মামলার ১১ নং আসামি আল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
মামলার আসামিরা হলেন— মমিন (৩৫), শাবু (২৮), সম্রাট (২৩), শামিম (৪৫), জয়নাল (৩২), পাতা সোহেল, কালা মোতালেব (৪০), ভাগ্নে মামুন (৩৮), জাহাঙ্গীর (৩৩), ভেজাল মামুন (৪২), আল-ইসলাম (৪৫), ইউনুস ওরফে ডিস্কু (৪০), রুবেল (৩৮), মজনু (৫০), কালন (৩৫), কামাল (৩৫) ও জয় (২৭)।
মামলা ও গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম।
পল্লবী থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বুধবার বেলা সাড়ে ৩টার দিকে পল্লবী থানাধীন মিরপুর সেকশন-১১ এর বাউনিয়া বাঁধ বি ব্লকে চিহ্নিত অস্ত্রধারী মাদক ব্যবসায়ী সন্ত্রাসী মমিন, শাবু, সম্রাট, শামিম, জয়নাল, ইদ্রিস, কালা মোতালেব, কামাল, জাহাঙ্গীর, আল ইসলাম, ভেজাল মামুন, জয়, ইউনুস, রুবেলসহ অজ্ঞাতনামা ১৪-১৫ জন এলাকার শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী ফতের ভাই মামুনের কাছে চাঁদা চায়। এ নিয়ে কথা কাটাকাটি ও তর্কের মধ্যে থেকে একপর্যায়ে গোলাগুলি হয়। তাতে বাউনিয়া বাঁধ বি ব্লকের ১৭/১৮ বাসার দ্বিতীয় তলার সিঁড়ি করিডোরে দাঁড়ানো আয়েশা আক্তার গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান।
নিহত আয়েশার স্বামী মিরাজ পেশায় বাসচালক। তৃতীয় তলায় একটি রুম নিয়ে ১০ বছর ধরে ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করে আসছিলেন তারা।
এ ঘটনায় অভিযুক্ত ও মামলার আসামিরা পল্লবী থানা এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী মফিজুর রহমান মামুনের (ভারতে অবস্থানরত) অস্ত্রধারী ক্যাডার। তাদের মধ্যে ১নং আসামি মমিন চাচাতো ভাই এবং রুবেলের বোন জামাই। গ্রেপ্তারকৃত ১১ নং আসামি আল ইসলাম ও ৯ নং আসামি জাহাঙ্গীর নেপথ্যে থেকে দখল ও মাদক ব্যবসার আধিপত্যের লড়াই জিইয়ে রেখে চাঁদাবাজি করে আসছিলেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ডিএমপির মিরপুর বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ মাকছেদুর রহমান বলেন, “গ্রেপ্তারকৃত আল ইসলামের বিরুদ্ধে অনেক মামলা রয়েছে। গুলিতে নারী মৃত্যুর ঘটনায় তার সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। তিনি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন, হাইড (নেপথ্যে) থেকে ঘটনার নেতৃত্ব দিয়েছেন। আল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “মামলার অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে। এ ঘটনায় জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে অন্য জড়িতদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।”
কে এই আল ইসলাম রাজধানীর পল্লবীতে চাঁদাবাজি, মাদক কারবার আর দখল মানেই আল ইসলাম। নিরীহ কারো জমি কেনার তথ্য পেলেই হাজির হতো আল ইসলাম ও তার ভাই জাহাঙ্গীরের লোকজন। নগদ চাঁদাবাজিতে সিদ্ধহস্ত দুই ভাই চাঁদা না পেলে হামলা করতেন, কখনো সাঙ্গোপাঙ্গর মাধ্যমে মিথ্যা মামলা দিয়ে করতেন দিনের পর দিন হয়রানি। বাধ্য হয়ে অনেকে জমি ছেড়ে যেতে বাধ্য হতেন।
মাদক কারবারে জড়িত আল ইসলামের বিরুদ্ধে রয়েছে হত্যা, হামলা, চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগে অন্তত ডজনখানেক মামলা। ৫ আগস্টের পর রাতারাতি ভোল পাল্টে পল্লবীর আতঙ্কের নাম হয়েছেন দুই সহোদর।
সর্বশেষ রাজধানীর পল্লবী থানাধীন বাউনিয়াবাদ এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দুই গ্রুপের মধ্যে গোলাগুলিতে গৃহবধূ আয়শা নিহত হয়। বেলা সাড়ে ৩টার দিকে সংঘটিত ওই গোলাগুলির ঘটনায় ঘটনাস্থল থেকেই নেতৃত্ব দেন আল ইসলাম।