Hawkerbd.com     SINCE
 
 
 
 
সেকেন্ড হোমের লোভেই এত অর্থ পাচার [ অনলাইন ] 28/09/2024
সেকেন্ড হোমের লোভেই এত অর্থ পাচার
দেশের বিভিন্ন দলের রাজনীতিক, ব্যবসায়ী, আমলা ও প্রভাবশালীদের বড় একটি অংশের রয়েছে দ্বৈত নাগরিকত্ব। দেশের পাশাপাশি তাদের অনেকেই শক্ত খুঁটি গেড়েছেন দেশের বাইরেও। সেখানে গড়েছেন সম্পদের পাহাড়। বিদেশে বসত গড়ার শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও আরব আমিরাত। বিভিন্ন সময় বিদেশে শীর্ষ ধনীদের তালিকায় বাংলাদেশিদের নামও শোনা যায়। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর নতুন করে আলোচনায় এসেছে অর্থ পাচার। আওয়ামী লীগের শাসনামলে দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে বিদেশে ২ লাখ কোটি পাচার হওয়ার অভিযোগের তদন্ত শুরু করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। আর বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির তথ্য বলছে, গত ৫০ বছরে দেশ থেকে মোট আনুমানিক ১১ লাখ ৯২ হাজার ৮১৫ কোটি টাকা পাচার হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মূলত ‘সেকেন্ড হোম’ (দ্বৈত নাগরিকত্ব) প্রবণতার কারণে দেশ থেকে বিভিন্ন দেশে অর্থ পাচার হয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের যারা অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে সম্পদ গড়েন তারা দল ক্ষমতা থেকে সরে গেলে কেমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হবেন, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা ও নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন। যে কারণে দ্বৈত নাগরিকত্ব থাকা প্রভাবশালীরা তাদের দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত সম্পদ নিজ দেশের চেয়ে অন্য দেশে রাখতে নিরাপদ বোধ করেন। অর্থ পাচার প্রতিরোধের যে ব্যবস্থাগুলো দেশে আছে সেগুলোর প্রয়োগ না হওয়ার সুযোগ নেন তারা। আর দীর্ঘ ১৫ বছর একটি দল টানা রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকায় ক্ষমতাকেন্দ্রে থাকা সুবিধাভোগীরা ধরেই নিয়েছিলেন যে, দল ক্ষমতা হারালে তারাও আর দেশে টিকতে পারবেন না। এ নিরাপত্তাহীনতাবোধ বাড়িয়েছে অর্থ পাচারের প্রবণতা। যারই ধারাবাহিকতায় আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর কানাডার ‘বেগমপাড়া’খ্যাত সেকেন্ড হোমে দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া রাজনীতিবিদ, আমলা ও ব্যবসায়ীর ভিড় বেড়েছে বলে তথ্য মিলেছে।

এ বিষয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অর্থ পাচার সম্ভব হয়েছে বলেই সেকেন্ড হোম গড়ে উঠেছে। যারা অনিয়ম-দুর্নীতি করে তারা দেশে থাকতে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। অনেক দেশ আছে যারা তাদের দেশে অবৈধ অর্থ নিয়ে গেলে স্বাগত জানায়। তাই তারা দেশের বাইরে খুঁটি গাড়ে। অর্থ পাচার নিয়ন্ত্রণ বা প্রতিরোধের যে ব্যবস্থাগুলো আছে সেগুলো প্রয়োগ হয় না। যার সুযোগটা নেন বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যবসায়ী, আমলা, রাজনীতিবিদ। তারা তাদের ত্রিমুখী চক্র ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে অর্থ পাচার করে থাকে। তারা বিভিন্ন মাধ্যমে টাকা পাচার করে থাকে। তার মধ্যে অন্যতম মিস ইনভয়েসিং, চালান জালিয়াতি এবং আন্তর্জাতিক ব্যবসা-বাণিজ্যে জালিয়াতি। অনেকে আবার হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ পাচার করে। অথচ এগুলো নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট যে আইন আছে, তা যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে অর্থ পাচার রোধ করা যায়।’

সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদের যুক্তরাজ্য-যুক্তরাষ্ট্র-সংযুক্ত আরব আমিরাতে বিপুল সম্পদের খবর পাওয়া গেছে। এসব দেশে তার ৬৭ কোটি ৫০ লাখ ডলার বা ৮ হাজার ১০০ কোটি টাকার সমপরিমাণ সম্পদ রয়েছে বলে উঠে এসেছে কাতারভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে। যুক্তরাজ্যে বাড়ি কেনার জন্য সাইফুজ্জামান বিভিন্ন কোম্পানি তৈরি করেছেন। ২০১৬ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে তিনি দেশটিতে ২৬৫টি বাড়ি কিনেছিলেন। ২০২২ সালে তিনি সেখানে কিনেছেন ৮৯টি বাড়ি। সবমিলিয়ে যুক্তরাজ্যে তার বাড়ি রয়েছে ৩৬০টি, যার দাম ২৫ কোটি ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা)। এ ছাড়া চলতি বছরের শুরুতে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল ইউকে জানায়, যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর মালিকানাধীন কোম্পানির সম্পত্তি আছে। সাইফুজ্জামান চৌধুরীর নিয়ন্ত্রণাধীন প্রতিষ্ঠানগুলো ১৫ কোটি পাউন্ডের বেশি মূল্যের অন্তত ২৮০টি সম্পত্তি কিনেছে। এসব সম্পদ ২০১৬ সালের পর থেকে কেনা হয়েছে। যুক্তরাজ্যের ভূমি কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বেশিরভাগ সম্পদ কেনা হয়েছে ২০১৯ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে।

ব্যাংক খাতে আধিপত্য প্রতিষ্ঠার পর সপরিবারে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করেছিলেন বহুল আলোচিত এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম। ২০২২ সালের ১০ অক্টোবর বাংলাদেশি পাসপোর্ট প্রত্যাহার করেন এস আলম, তার স্ত্রী ফারজানা পারভীন এবং তাদের তিন ছেলে আহসানুল আলম, আশরাফুল আলম ও আসাদুল আলম মাহির। একই দিন বিদেশি নাগরিক হিসেবে বাংলাদেশে স্থায়ী বসবাসের (পার্মানেন্ট রেসিডেন্সিয়াল) অনুমোদন পায় পরিবারটি। সরকারের উচ্চপর্যায়ের নির্দেশে এসব সুবিধা দিয়েছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সম্প্রতি এস আলম ও তার সহযোগী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ১ লাখ ১৩ হাজার ২৪৫ কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট। সিআইডি বলছে, এস আলম গ্রুপের মালিক এস আলম ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ অপরাধ, প্রতারণা, জালিয়াতি এবং হুন্ডি কার্যক্রম পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে।

রপ্তানি বাণিজ্যের আড়ালে মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগে বেক্সিমকো গ্রুপের স্বত্বাধিকারী সালমান এফ রহমানসহ ২৮ জনের বিরুদ্ধে ১৭টি মামলা করেছে সিআইডি। মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ও বিধি অনুযায়ী সিআইডির পরিচালিত অনুসন্ধানে সালমান এফ রহমান (বেক্সিমকো গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ভাইস চেয়ারম্যান) ও তার ভাই এএসএফ রহমানের (বেক্সিমকো গ্রুপের চেয়ারম্যান) স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বেক্সিমকো গ্রুপের মালিকানাধীন ১৭টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। এসব প্রতিষ্ঠানের নামে ২০২১ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময় জনতা ব্যাংকের লোকাল অফিস শাখা, দিলকুশা, মতিঝিল থেকে ৯৩টি এলসি/সেলস কন্ট্রাক্টের (বিক্রয় চুক্তি) বিপরীতে পণ্য রপ্তানি করে নির্ধারিত সময় পার হওয়ার পরও রপ্তানিমূল্য প্রায় ৮৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা) বাংলাদেশে না এনে বিদেশে পাচার করা হয়েছে।

সিঙ্গাপুরের ৫০ ধনী ব্যক্তির তালিকা প্রকাশ করেছে মার্কিন সাময়িকী ফোর্বস। সেই তালিকার ৪১তম অবস্থানে আছেন সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আজিজ খান। সেখানে তার মোট সম্পদের পরিমাণ ১.১২ বিলিয়ন ডলার। ‘ফোর্বসে’র ২০২২ সালের সিঙ্গাপুরের শীর্ষ ধনীর তালিকায় আজিজ খানের অবস্থান ছিল ৪২ নম্বরে। সেবার তার সম্পদের পরিমাণ দেখানো হয় ১০০ কোটি মার্কিন ডলার। সেই হিসাবে চলতি বছর ধনীদের তালিকায় আজিজ খান একধাপ এগিয়েছেন এবং তার সম্পদ বেড়েছে ১২ কোটি ডলার। সিঙ্গাপুরের জন্য করা তালিকায় মুহাম্মদ আজিজ খানের অবস্থান ৪১তম হলেও ‘ফোর্বস’-এর করা বিশ্বের শতকোটিপতিদের তালিকায় তার স্থান দেখানো হয়েছে ২ হাজার ৫৪০তম। এ অবস্থানে তিনি অবশ্য আরও বেশ কয়েকজনের সঙ্গে আছেন। ২০২১ সালে আজিজ খানের সম্পদের পরিমাণ ছিল ৯৯ কোটি মার্কিন ডলার। ২০১৯ সাল থেকে তার সম্পদের পরিমাণ ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। এরপর ২০২২ সালে তার সম্পদের পরিমাণ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়। ফলে তিনি ‘ফোর্বস’-এর বিলিয়নিয়ার বা শতকোটিপতিদের তালিকায়ও স্থান পান। বাংলাদেশের নাগরিক ৬৮ বছর বয়সী আজিজ খান এক যুগের বেশি সময় ধরে সিঙ্গাপুরের স্থায়ী বাসিন্দা।

গত ৫০ বছরে বাংলাদেশ থেকে ১১ লাখ ৯২ হাজার ৮১৫ কোটি টাকা পাচার হয়ে গেছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি। গত জুন মাসে এক সংবাদ সম্মেলনে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বিকল্প বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপনকালে সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো. আইনুল ইসলাম বলেন, ১৯৭২-৭৩ অর্থবছর থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত ৫০ বছরে বাংলাদেশ থেকে মোট অর্থ পাচার হয়েছে আনুমানিক ১১ লাখ ৯২ হাজার ৮১৫ কোটি টাকা। তবে ওয়াশিংটনভিত্তিক সংস্থা গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটি (জিএফআই) বলছে, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর গড়ে ৭৫৩ কোটি ৩৭ লাখ ডলার পাচার হয়। টাকার অঙ্কে তা প্রায় ৮০ হাজার কোটি টাকা।

পাচারের টাকায় ‘বেগমপাড়া’ : উত্তর আমেরিকার দেশ কানাডার টরন্টোতে কয়েকশ বাংলাদেশি বিলাসবহুল বাড়ি করেছেন। এসব বাড়ির অধিকাংশ সংশ্লিষ্ট পরিবারের নারী সদস্যের নামে। এজন্য এটি ‘বেগমপাড়া’ নামে পরিচিত। সে দেশে অর্থ পাচারকারীদের বেশিরভাগই আমলা, রাজনীতিক ও ব্যবসায়ী। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর কানাডার ‘বেগমপাড়া’ বা সেকেন্ড হোমে দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া রাজনীতিবিদ, আমলা আর ব্যবসায়ীর ভিড় বেড়েছে বলে জানা গেছে।

কীভাবে হচ্ছে টাকা পাচার : সাধারণত তিন উপায়ে বেশি অর্থ পাচার হয়ে থাকে। এর মধ্যে বাণিজ্য কারসাজি অর্থ পাচারের বড় একটি মাধ্যম। আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্যের মাধ্যমে অর্থ পাচার হয়। আরেকটি হলো হুন্ডি। দেশীয় আইন দ্বারা স্বীকৃত নয় এমন অপ্রাতিষ্ঠানিক পন্থায় এক দেশ থেকে অন্য দেশে অর্থ পাঠানোর পদ্ধতি মূলত হুন্ডি নামে পরিচিত। আরেকটি হচ্ছে চোরাচালান। অর্থ পাচারের এটিও একটি মাধ্যম। এ ছাড়া আরও বিভিন্ন পদ্ধতিতে অর্থ পাচার হচ্ছে।

কী করছে সরকার : বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাজ্যে পাচার হওয়া অর্থ-সম্পদের হদিস পেতে সে দেশের সরকারের দ্বারস্থ হয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের সহযোগীদের সম্পদ যুক্তরাজ্যে পাচার করা হয়েছে কি না, তা তদন্ত করতে অন্তর্বর্তী সরকার এ উদ্যোগ নিয়েছে। শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী সরকারের সদস্যদের ওপর নতুন সরকার যে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে, তার অংশ হিসেবে যুক্তরাজ্য সরকারের সহায়তা চেয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর সম্প্রতি বিদেশি গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, শেখ হাসিনার সরকার বাংলাদেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে ১৩ বিলিয়ন বা ১ হাজার ৩০০ কোটি পাউন্ডের সমপরিমাণ ২ লাখ কোটি টাকা বিদেশে সরানো হয়েছে কি না, নতুন প্রশাসন তদন্ত করছে। যুক্তরাজ্যসহ বেশ কয়েকটি দেশে বাংলাদেশের সাবেক সরকারের সহযোগীরা সম্পদ গড়েছেন বলে কর্র্তৃপক্ষ ধারণা করছে। যুক্তরাজ্য ছাড়াও সিঙ্গাপুর, যুক্তরাষ্ট্র ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে সম্পদ গড়ে তোলা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্য সরকার ‘বেশ সহায়তা’ করছে। বাংলাদেশে যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার বাংলাদেশ ব্যাংকে এসেছিলেন; তারা অনেক কারিগরি সহযোগিতার প্রস্তাব দিয়েছেন। বিশেষ করে শেখ হাসিনা সরকারের সাবেক ভূমিমন্ত্রীর কেনা ১৫০ মিলিয়ন বা ১৫ কোটি পাউন্ডের সম্পত্তির অর্থের উৎস সম্পর্কে বাংলাদেশ জানতে চেয়েছে। এ বিপুল পরিমাণ অর্থ প্রধানমন্ত্রীর অজ্ঞাতসারে দেশ থেকে নিয়ে যাওয়া সম্ভব ছিল না, এসব সম্পদ বাংলাদেশ পুনরুদ্ধার করতে চায়; সে লক্ষ্যে যুক্তরাজ্য সরকারের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।

অর্থ পাচারকারীরা শান্তিতে থাকতে পারবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আহসান এইচ মনসুর বলেন, তাদের এখন আর টাকার বালিশে ঘুমাতে দেওয়া হবে না। তিনি বলেন, যারা টাকা পাচার করে দেশ থেকে চলে গেছেন, আন্তর্জাতিকভাবে তাদের বিরুদ্ধে এমন ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কারা টাকা পাচার করেছে, কারা এর সঙ্গে জড়িত, সুনির্দিষ্ট অনুসন্ধানের মাধ্যমে তাদের বের করতে হবে। এ ছাড়া তাদের অনিয়মে কারা সহায়তা করেছে, তাদেরও (আইনের) আওতায় আনতে হবে।

শুধু বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর নন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ও নোবেল পুরস্কারজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসও ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে এক সাক্ষাতে পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনার বিষয়ে সহায়তা চেয়েছেন। ড. ইউনূসের প্রেস সচিব শফিকুল আলম বিদেশি গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, বাংলাদেশের কর্র্তৃপক্ষ দেশটি থেকে চুরি হওয়া ও বিদেশে পাচার করা অর্থ ফিরিয়ে আনবে। সরকারের যেসব অগ্রাধিকার রয়েছে, এটি তার মধ্যে অন্যতম।

পাচারের অর্থ ফেরাতে বিএফআইইউর ভূমিকা : অর্থ পাচার ও সন্ত্রাসী অর্থায়ন প্রতিরোধে কাজ করে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। সংস্থাটি সন্দেহজনক লেনদেন প্রতিবেদন (এসটিআর), নগদ লেনদেনের প্রতিবেদন (সিটিআর), মানি লন্ডারিং (এমএল) এবং সন্ত্রাসের অর্থায়ন (টিএফ) সম্পর্কিত তথ্য বিশ্লেষণ করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে প্রদান করে। সংস্থাটির মূল লক্ষ্য হচ্ছে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ, সন্ত্রাসের অর্থায়ন প্রতিরোধ এবং গণধ্বংসের অস্ত্র বিস্তার প্রতিরোধের জন্য কার্যকর ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু পাচার হওয়া টাকা ফেরতের খুব একটা নজির নেই দেশে। চলতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএফআইইউ জানায়, প্রতিষ্ঠার পর থেকে শুধু একজনের ২০ লাখ ৪১ হাজার টাকা ফেরত আনা হয়েছিল। এ ছাড়া আর কোনো টাকা ফেরত আসেনি।

অর্থ পাচার রোধে আইন : বাংলাদেশে অর্থের অবৈধ ব্যবহার নিয়ে প্রথম আইনটির নাম ছিল মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০০২ (২০০২ সালের ৭ নম্বর আইন)। এ আইনের বিধানাবলি অপর্যাপ্ত থাকায় ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার এ লক্ষ্যে একটি অধ্যাদেশ জারি করে (অধ্যাদেশ নম্বর ১২, ২০০৮) কিছু বিষয় যুক্ত করে। পরে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার অধ্যাদেশটি সংবিধানের অনুশাসন অনুযায়ী পরীক্ষা করে ২০০৯ সালে আইনে রূপান্তরিত করে। আইনটির শিরোনাম ছিল মানি লন্ডারিং আইন-২০০৯ (২০০৯ সালের ৮ নম্বর আইন)। ২০০৯ সালের আইনটিও পরে বাতিল করে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ অধ্যাদেশ ২০১২ জারি করা হয়, যা পরবর্তী সময়ে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০১২ নামেই পরিচিত। তবে এসব আইনের খুব একটা বাস্তবায়ন নেই বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. আইনুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অর্থ পাচারের প্রধান কারণ হচ্ছে দুর্নীতি। দেশে দুর্নীতির মাধ্যমে যে টাকা জেনারেশন হয় (তৈরি হয়), সেটা রাখার তো একটা নিরাপদ জায়গা লাগবে। এখন এটার নিরাপদ জায়গা হচ্ছে বিদেশ। বিদেশে তাদের টাকার বিষয়ে কেউ খোঁজখবর নেয় না। কালো না সাদা সেটাও দেখানো হয় না। আবার অনেকেই নিরাপত্তাহীনতার কথা চিন্তা করেও টাকা পাচার করে। অনেক প্রভাবশালীর দ্বৈত নাগরিকত্ব আছে। তারা নিজ দেশের থেকে অন্য দেশেই নিজেকে নিরাপদ মনে করে। দেশের টাকা বিদেশে নিয়ে যায়।’

পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনতে অর্থ পাচারের পদ্ধতিগুলো চিহ্নিতের ওপর জোর দেন বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ আবাসিক মিশনের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘একটা অর্থ যখন পাচার হয় সেটা কীভাবে কোন পথ দিয়ে গেছে সেটা খুঁজে বের করতে হবে। এখন যেসব টাকা পাচার হয়, তা বিভিন্ন খোলসের মধ্য দিয়ে যায়, আগে সেগুলো চিহ্নিত করতে হবে। এসব চিহ্নিত হওয়ার পরে যদি দেখা যায় সে অন্য দেশের নাগরিক, তখন সেই দেশের সঙ্গে নেগোশিয়েট (দেন-দরবার) করতে হবে।’
News Source
 
 
 
 
Today's Other News
• সাবেক ৯ এমপি-মন্ত্রীর ব্যাংক হিসাবের তথ্য চেয়েছে বিএফআইইউ
• বাংলাদেশে পণ্য পরিবহনে ভাড়া বৃদ্ধির ঘোষণা ডিএইচএলের
• আজ রাতে ৪ ঘণ্টা বিঘ্নিত হতে পারে ইন্টারনেট সেবা
More
Related Stories
 
Forward to Friend Print Close Add to Archive Personal Archive  
Forward to Friend Print Close Add to Archive Personal Archive  
 
 
Home / About Us / Benifits / Invite a Friend / Policy
Copyright © Hawker 2013-2012, Allright Reserved