Hawkerbd.com     SINCE
 
 
 
 
ক্ষত-বিক্ষত ব্যাংক খাত, উত্তরণ কোন পথে [ অনলাইন ] 13/05/2025
ক্ষত-বিক্ষত ব্যাংক খাত, উত্তরণ কোন পথে
মো. মাঈন উদ্দীন

দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা ও আস্থার সংকটে জর্জরিত ব্যাংকিং খাত। যার ফলশ্রুতিতে এ খাত ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ মূলধন সংকটে পড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০২৪ সালের ডিসেম্বর প্রান্তিকে দেশের শীর্ষ ২০টি ব্যাংকের সম্মিলিত মূলধন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৭১ হাজার ৭৮৯ কোটি টাকা—যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রেকর্ড। আগের সেপ্টেম্বর প্রান্তিকের তুলনায় মাত্র তিন মাসে এই ঘাটতি বেড়েছে ১ লাখ ১৮ হাজার ৫৩৪ কোটি টাকা। মূলধন ঘাটতির প্রভাবে ব্যাংকগুলো নতুন করে বড় অঙ্কের ঋণ বিতরণে অক্ষম হয়ে পড়েছে, যা ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের (এসএমই) জন্য একটি বড় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে। একইসঙ্গে প্রভিশন ঘাটতির কারণে এসব ব্যাংকের ক্রেডিট রেটিং অবনমিত হচ্ছে। ব্যাংকিং খাতের বর্তমান এই অস্থিরতার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে থাকা শরিয়াহভিত্তিক বেশ কয়েকটি ব্যাংক। এই কয়েকটি ব্যাংকের ঋণ অনিয়ম আর জালিয়াতি প্রকাশ্যে এলে পুরো ব্যাংকিং খাতই আস্থার সংকটে পড়ে।

শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামলে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ও ত্রুটিপূর্ণ নীতির কারণে দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থার প্রকৃত অবস্থা অস্পষ্ট ছিল। গত ৫ আগস্ট তার পলায়নের পর ব্যাংক খাতের আসল চিত্র বের হতে শুরু করে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্ত প্রতিবেদনে দেখা যায়, এস আলম গ্রুপের অধীনে থাকা বিভিন্ন কোম্পানি ও ব্যক্তিরা মিলিয়ে যে ঋণ নিয়েছেন, তা দেশের ব্যাংকিং খাতে দীর্ঘমেয়াদি ঝুঁকি তৈরি করেছে। এই ঋণের বিপুল অংশের কোনো কার্যকর জামানত ছিল না, আবার অনেক ঋণ ব্যবহার করা হয়েছে অন্য খাতে, যা পুরোপুরি অবৈধ। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অর্থ পাচার সম্পর্কে নিউইয়র্ক টাইমস লিখেছে, একটি দেশের অর্থনীতিকে শুকিয়ে ফেলা হয়েছে। পাচার হওয়া টাকার প্রকৃত পরিমাণ কেউই নিশ্চিত করে বলতে পারছেন। অর্থনৈতিক পরিস্থিতি–বিষয়ক শ্বেতপত্র কমিটি বলেছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলে গত ১৫ বছরে বাংলাদেশ থেকে সার্বিকভাবে প্রতি বছর গড়ে প্রায় ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অবৈধভাবে পাচার হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের তথ্য অনুযায়ী, শেখ হাসিনার শাসনের ১৫ বছরে কেবল বাংলাদেশের আর্থিক ব্যবস্থা থেকেই ১৭ বিলিয়ন বা ১ হাজার ৭০০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ অর্থ পাচার হয়েছে। তবে অন্য অর্থনীতিবিদরা বলছেন, শেখ হাসিনার আমলে পাচার অর্থের পরিমাণ ৩০ বিলিয়ন বা ৩ হাজার কোটি ডলারেরও বেশি।

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে জনগণের প্রত্যাশার শেষ নেই। সম্ভবত স্বৈরাচারী সরকারের সময়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাংলাদেশের ব্যাংক ও অন্যান্য আর্থিক খাত। দুর্নীতির প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়ে বিগত স্বৈরাচারী সরকার ব্যাংক লুটে মরিয়া হয়ে ওঠে। ব্যাংক থেকে অর্থ লুট করেই তারা ক্ষান্ত হয়নি, লুটকৃত অর্থ বিদেশে পাচারে তারা নানা কৌশল অবলম্বন করে এবং নতুন নতুন পদ্ধতি বের করে। কখনো বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইট হ্যাক করে কয়েক বিলিয়ন ডলার বিদেশের ব্যাংকে পাচার করে, কখনো নামে-বেনামে ঋণ নিয়ে ব্যাংকের কোষাগার খালি করে আমানতকারীদের পথে বসিয়ে দেয় ।  ফলে ব্যাংকের প্রতি গ্রাহকদের আস্থার ভাটা পড়ে। আমানতকারীদের  অর্থের সুরক্ষায় সরকার জনগণের অর্থ ব্যাংকে কখনো মূলধন হিসেবে আবার কখনো তারল্য সহায়তা হিসেবে সরবরাহ করে। এ অবস্থায় যারা অর্থ পাচারের পেছনে রয়েছে, তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা জরুরি।

দেশের অর্থনীতি নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির দেওয়া প্রতিবেদনের একটি তথ্য উল্লেখ করে বিশ্বব্যাংক বলেছে, ২০২৩ সালে আটটি ব্যাংকের পরিচালকদের মধ্যে পারস্পরিক ঋণের পরিমাণ ছিল ৩৭০ কোটি মার্কিন ডলার। এই তথ্য প্রমাণ করে কীভাবে ব্যাংকগুলো পারস্পরিক সম্পর্কের ভিত্তিতে ঋণ অনিয়মের ঘটনা ঘটিয়েছে। বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের অনুমোদনের বিষয়টি রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। এর ফলে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের আলাদা আলাদা কার্যক্রমের বিষয়টি গুরুত্ব হারিয়েছিল। ২০১৭ সালে একটি গোষ্ঠী এককভাবে সাতটি ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছিল। অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুরকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে নিয়োগ নেওয়ার পর নতুন গভর্নর ১১ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করেন। এর মধ্যে ছয় ব্যাংকে বিতর্কিত এস আলম গ্রুপের আধিপত্য ছিল।

বাংলাদেশ ব্যাংক সংস্কার অব্যাহত ও দ্রুত করতে খেলাপি ঋণ ব্যবস্থাপনা, প্রকল্প শক্তিশালীকরণ ও আইনি কাঠামো নিয়ে তিনটি টাস্কফোর্স গঠন করেন তিনি।অন্তর্বর্তী সরকার অর্থনীতির অবস্থা নিয়ে প্রতিবেদন করতে বিশেষজ্ঞদের নিয়োগ দেয়। বিশেষজ্ঞ দলটি গত ডিসেম্বরে ২০২৪ এ  প্রধান উপদেষ্টার কাছে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে শ্বেতপত্র জমা দেয়। সেখানে 'ডিপ ইনটু অ্যা ব্ল্যাক হোল' নামে একটি অধ্যায় ছিল। যেখানে ব্যাংক খাতের অনিয়মের গভীরতা উল্লেখ করা হয়। এদিকে সংকটে পড়া ব্যাংকগুলোয় ফরেনসিক অডিট, পাচার হওয়া টাকা ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ এবং বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের সহায়তায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এস আলম গ্রুপ, বেক্সিমকো গ্রুপ, সামিট গ্রুপ, বসুন্ধরা গ্রুপ, জেমকন গ্রুপ, ওরিয়ন গ্রুপ, নাবিল গ্রুপ, নাসা গ্রুপ, সিকদার গ্রুপ ও আরামিট গ্রুপের বিরুদ্ধে অর্থপাচার ও অন্যান্য আর্থিক জালিয়াতি তদন্তে সরকারি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়।

 ব্যাংকিং খাত সংকটের মধ্যে বিশেষ করে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোর তারল্য ঘাটতি, মুদ্রাবাজারে অস্থিতিশীলতা, ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি, অপরিকল্পিত একীভূতকরণ ও খেলাপি রেকর্ড বেড়ে যায়।   আমরা জানি বাংলাদেশের অর্থনীতি অনেকটাই ব্যাংক খাতনির্ভর। ২০২৪ সালের জুন শেষে ব্যাংক খাতের মোট সম্পদমূল্য ২১ হাজার ২০০ কোটি মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশের আর্থিক খাতের মোট সম্পদের ৮৮ শতাংশ এবং মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির ৫০ শতাংশ। ব্যাংকিং খাতের মোট সম্পদের মধ্যে ৭০ শতাংশ বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের, ২৫ শতাংশ রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকের এবং ৪ শতাংশ বহুজাতিক বিদেশি ব্যাংকগুলোর।

বিশ্বব্যাংক বলছে, এ দেশের ব্যাংকিং খাত দীর্ঘদিন ধরে অদক্ষতা ও কাঠামোগত দুর্বলতা, দুর্বল সুশাসন, নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা কুক্ষিগত করা ও রাজনৈতিক বিবেচনায় ঋণ বিতরণের সমস্যায় ভুগছে। আইনি ফাঁকফোকরের মাধ্যমে পারিবারিক সম্পর্ককে ব্যবহার করে নানা ধরনের ঋণ অনিয়মের ঘটনা ঘটানো হয়েছে। ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের যোগসাজশে ঋণের নামে ব্যাংকের অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে। পতিত  স্বৈরাচারী সরকার  অর্থনীতির যে ভয়াবহ বিপর্যয় এনেছে তার উত্তরণের জন্য সরকারকে স্বল্প ও মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনা নিতে হবে।  

খেলাপি ঋণ: ব্যাংক খাতে অনিয়ম, দুর্নীতি ও ইচ্ছাকৃত খেলাপি গ্রাহকের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং বড় বড় ব্যবসায়ী গ্রুপদের অনেকই সময় মতো ব্যাংক ঋণ পরিশোধ না করায় খেলাপি ঋণ বেড়েই চলেছে। এটি বিগত  সরকারের আমল থেকেই চলে আসছে । আইনের সময়োপযোগী প্রয়োগ না হওয়া, দীর্ঘসূত্রিতা, প্রভাবশালীদের দৌরাত্ম্যের  বিষয়টি তো রয়েছে।  ফলশ্রুতিতে ২০২৪ সালের  জুন শেষে খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে দুই লাখ ১১ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা, যা বিতরণ করা ঋণের ১৬ লাখ ৮৩ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকার ১২ দশমিক ৫৬ শতাংশ।  এভাবে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি এখনো অব্যাহত রয়েছে। বস্তুত ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ঋণের নামে ব্যাংক লুট ও লুটের টাকা পাচারের ফলে সেগুলো এখন খেলাপি হচ্ছে।

একইসঙ্গে বেড়ে চলেছে আদায় অযোগ্য কু-ঋণ। জামানত না থাকায় কিছু ঋণ সরাসরি কু-ঋণে পরিণত হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ডিসেম্বর ২৪ পর্যন্ত ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে তিন লাখ ৪৫ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকায়; যা বিতরণকৃত ঋণের ২০ দশমিক ২০ শতাংশ। শুধু তাই নয় গত ১৬ বছরের মধ্যে বিতরণ করা ঋণ ও খেলাপি ঋণের সর্বোচ্চ অনুপাত এটি। রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালীদের লুটপাটের ঋণ খেলাপি হয়ে পড়ছে বলেই এখন তা বাড়ছে। এসব লুটেরা আগেও ঋণখেলাপি ছিল। কিন্তু প্রভাবশালী হওয়ায় ব্যাংকগুলো তাদের ঋণখেলাপি দেখাতে পারত না। কৌশলে আড়াল করে রাখা হতো। ৫ আগস্টের পরে এক এক করে তথ্য বেরিয়ে আসছে।

বিশ্বব্যাংক বলছে, বর্তমানে বাংলাদেশের ব্যাংক খাত উচ্চ খেলাপি ঋণের চাপে রয়েছে। এ ছাড়া মূলধন স্বল্পতা, পরিচালন অদক্ষতা, সুশাসনের ঘাটতি, নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাকে কুক্ষিগত করা, ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার এবং সুবিধাভোগীদের মধ্যে ঋণ আদান-প্রদানের গড়ে ওঠা ব্যবস্থা বছরের পর বছর ব্যাংক খাতের সক্ষমতাকে নষ্ট করে দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছে সংস্থাটি।

বিশ্বব্যাংক আরও বলেছে, রাষ্ট্রক্ষমতার পালাবদলের পর অন্তর্বর্তী সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক এই খাতের দুর্বলতাগুলো আমলে নিয়ে সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। এর ফলে এ খাতের দুর্বলতাগুলো একে একে প্রকাশ হতে শুরু করেছে।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০২৩ সালে ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন করা হলেও এক পরিবারের সদস্যদের পর্ষদে থাকার মেয়াদ ১২ বছরে উন্নীত করার মাধ্যমে এ খাতে দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দিয়েছিল। রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর দুর্বল সুশাসনের বিষয়টি দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত এক সমস্যা। এই সমস্যার সমাধান না হওয়ায় তা বিশাল আর্থিক ক্ষতি ও আর্থিক খাতের অস্থিতিশীলতার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

পত্রিকার রিপোর্টে দেখা যায় শুধু ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণ নিয়েই এস আলম গ্রুপ ও তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্রায় ৭৩ হাজার কোটি টাকার ঋণ বের করে নেয়। এ অর্থ ব্যাংকটির মোট ঋণের প্রায় ৫০ শতাংশ।  এই ব্যাংক থেকে গ্রুপটির নেওয়া পরোক্ষ ঋণের পরিমাণ ৭ হাজার ৫২৪ কোটি টাকা।  যদিও ইসলামী ব্যাংক কোনো ব্যবসায়ী গ্রুপকে সর্বোচ্চ ৫০০ কোটি টাকা ঋণ দিতে পারে। তবু তারা সেই সীমা লঙ্ঘন করে অনেক বেশি দিয়েছে। স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ইসলামী ব্যাংকের নতুন পরিচালনা পর্ষদ দায়িত্ব নিয়ে গ্রুপটির চট্টগ্রাম ও রাজশাহীর বিভিন্ন প্রকল্প পরিদর্শন করে ঋণ আদায়ে উদ্যোগী হয়। অন্যদিকে দেশের ১৬টি ব্যাংক ও সাতটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে বেক্সিমকো গ্রুপের ৭৮টি প্রতিষ্ঠানের দায়ের পরিমাণ ৫০ হাজার কোটি টাকা। এ টাকার প্রায় অর্ধেকই জনতা ব্যাংকের।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ব্যাংকের চুরি হওয়া টাকা উদ্ধারে ইতোমধ্যে এস আলম গ্রুপের সব সম্পদ জব্দ করা হয়েছে। ঝুঁকির মুখে থাকা দেশের ব্যাংক খাতকে শক্তিশালী করতে ১০ দফা সুপারিশ করেছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটি বলছে, বাংলাদেশের ব্যাংক খাত বর্তমানে নানামুখী চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে, এসব চ্যালেঞ্জ ভবিষ্যতের জন্য খাতটিকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে। তাই এই ঝুঁকি মোকাবিলায় ব্যাংক খাতকে শক্তিশালী করতে সংস্থাটি ১০টি সুপারিশ করে।

 সংস্থাটির পক্ষ থেকে প্রকাশিত বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেটে এসব সুপারিশ তুলে ধরা হয়। বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে যে ১০টি সুপারিশ করা হয়েছে সেগুলো হলো ব্যাংক খাতের নীতি কাঠামো উন্নত করতে অগ্রাধিকার প্রদান; আমানত সুরক্ষাব্যবস্থা শক্তিশালী করা; প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার উন্নতি; রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংক পুনর্গঠন; খেলাপি ঋণ ব্যবস্থাপনায় একটি শক্তিশালী কাঠামো তৈরি; সমন্বিত দেউলিয়া আইন প্রণয়ন; ব্যাংকিং আইন ও নীতির যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করা; জরুরি প্রয়োজনে তারল্য সহায়তা প্রদানের জন্য একটি নীতি কাঠামো তৈরি; ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ ও তদারকিতে আন্তর্জাতিক উত্তম চর্চাগুলোর অনুশীলন এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পূর্ণ স্বাধীনতা নিশ্চিত করা।     

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পরিস্থিতি কেবল ব্যাংক খাত নয়—সমগ্র অর্থনীতির ওপর চাপ তৈরি করছে। এখনই মূলধন পুনর্গঠন, প্রভিশনিং নীতিমালা শক্তিশালীকরণ ও স্বচ্ছ ঋণ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সংকট উত্তরণে কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে সামনে আরও বড় বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে।   তাই সংকট উত্তরণে  ব্যাংক রেজুলেশন অর্ডিন্যান্স দ্রুত পাস করে খেলাপি ও দুর্বল ব্যাংকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া। বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাধীনতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গড়ে তোলা। ঋণ বিতরণ স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা এবং দুর্নীতির বিচার। প্রভিশনিং নীতিমালা শক্তিশালীকরণ, যাতে আর্থিক দুর্বলতা আড়াল করা না যায়। সরকারি পুঁজির সঠিক ব্যবহার, অনিয়ম দূর না করা পর্যন্ত কোনও ব্যাংককে পুনরায় পুঁজি না দেওয়া।

লেখক: অর্থনীতি বিশ্লেষক ও ব্যাংকার
News Source
 
 
 
 
Today's Other News
• প্রেস বিজ্ঞপ্তি
• শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি. এর ২৪ বছর পূর্তি উদযাপন
• বাস্তবায়ন নিয়ে শঙ্কা, ‘ভয় নেই’ বলছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক
• ব্যাংকে ঈদের ছুটির বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা
• বিদেশে চিকিৎসা ব্যয়ের সীমা বাড়িয়ে ১৫ হাজার ডলার
• ন্যাশনাল ব্যাংকের ক্যাশ অফিসারদের প্রশিক্ষণ সম্পন্ন
• জনতা ব্যাংকের নতুন পরিচালক ওবায়দুল হককে ব্যাংকের চেয়ারম্যানের শুভেচ্ছা
• বাংলাদেশ ব্যাংকের সম্মাননা পেল আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের নারী উদ্যোক্তা
• সোনালী ব্যাংকের ১২৩৪তম রাণীরবন্দর শাখা উদ্বোধন
• শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংকের ২৪ বছর পূর্তি উদযাপন
More
Related Stories
 
Forward to Friend Print Close Add to Archive Personal Archive  
Forward to Friend Print Close Add to Archive Personal Archive  
 
 
Home / About Us / Benifits / Invite a Friend / Policy
Copyright © Hawker 2013-2012, Allright Reserved