নিজস্ব প্রতিবেদক: তীব্র তারল্য সংকটে থাকা তালিকাভুক্ত ন্যাশনাল ব্যাংক নতুন করে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ১ হাজার কোটি টাকা ধার পেয়েছে। ডিমান্ড প্রমিসরি (ডিপি) নোটের বিপরীতে ১০ শতাংশ সুদে ৯০ দিনের জন্য এই ঋণ দেওয়া হয়। প্রচলিত জামানত না থাকায় কার্যত কেন্দ্রীয় ব্যাংক ‘টাকা ছাপিয়ে’ এই সহায়তা দিয়েছে, যা মূল্যস্ফীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে অর্থনীতিবিদদের আশঙ্কা।

সূত্র জানায়, ২ জুন এই লেনদেন সম্পন্ন হয়, যার একদিন আগে ন্যাশনাল ব্যাংক এই সহায়তার আবেদন করে। গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরের অনুমোদনে ঋণটি অনুমোদিত হয়। এতে করে মোট ছাপানো অর্থের পরিমাণ দাঁড়াল প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা।

এই ঋণের ব্যবহার নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক কঠোর নির্দেশনা জারি করেছে। এতে বলা হয়—

ব্যাংকের সাবেক বা বর্তমান পরিচালক বা তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ঋণ পরিশোধে অর্থটি ব্যবহার করা যাবে না; অন্য কোনো ব্যাংকে আমানত রাখা বা আন্তঃপ্লেসমেন্ট করা যাবে না; পরিচালন ব্যয়, ডিভিডেন্ড বিতরণ, অতিরিক্ত খরচ, বা ডলারে লেনদেনের জন্যও অর্থটি ব্যবহারের অনুমতি নেই।

ব্যাংকটির আর্থিক অবস্থার ক্রমাবনতির প্রেক্ষাপটে ২০২৩ সালের ৫ আগস্ট বাংলাদেশ ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদ বাতিল করে নতুন পর্ষদ গঠন করে। সিকদার পরিবার ও এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে দীর্ঘদিন ধরে নানা আর্থিক অনিয়মে জড়ানোর অভিযোগ রয়েছে।

২০২৩ সাল শেষে ব্যাংকটির লোকসান দাঁড়ায় ১,৭০৬ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় ১৪ শতাংশ বেশি। উল্লেখযোগ্যভাবে, ২০২২ সালে ব্যাংকটি এককভাবে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ৩,২৬১ কোটি টাকা লোকসান করে।

যদিও ড. মনসুর দায়িত্ব নেওয়ার পর ‘টাকা ছাপিয়ে’ সহায়তা না দেওয়ার নীতির কথা বলেছিলেন, তবে গত মার্চে সেই অবস্থান থেকে সরে এসে ‘প্রয়োজনে’ দুর্বল ব্যাংককে সহায়তার কথা জানান।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র বলেন, “আমরা কোনো ব্যাংক বন্ধ করতে চাই না। এতে আমানতকারীদের আস্থা হারানোর ঝুঁকি থাকে। আইন কার্যকর হওয়ার আগ পর্যন্ত সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।”

তিনি আরও স্বীকার করেন, “বিষয়টি মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক হলেও তাৎক্ষণিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখাই এখন অগ্রাধিকার।”