fictionfactory.org [ অনলাইন ] 05/06/2025 |
|
|
|
বিশ্ব পরিবেশ দিবস ২০২৫-এ প্লাস্টিক মুক্ত বাংলাদেশের রূপরেখা
|
 |
|
ড: মো: তৌহিদুল আলম খান :
আজ ৫ই জুন- বিশ্ব পরিবেশ দিবস। এবছর "প্লাস্টিক দূষণের অবসান" এই প্রতিপাদ্যে সারাবিশ্ব যখন একত্রিত হয়েছে, বাংলাদেশও এইচ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে প্রস্তুত। প্রজাতন্ত্রী কোরিয়ায় আন্তর্জাতিকসম্প্রদায়ের সম্মেলনের প্রেক্ষাপটে, বাংলাদেশের জন্য প্লাস্টিক বর্জ্যেরভয়াবহ প্রভাব – পরিবেশ, জনস্বাস্থ্য ও অর্থনীতিতে এর ক্ষতিকর প্রভাব– মোকাবিলা করা এখন জরুরি। এই দিনটি শুধু সমস্যার মাত্রা চিহ্নিতকরারই নয়, বরং টেকসই সমাধানের পথে বাংলাদেশের অঙ্গীকারকেপুনর্ব্যক্ত করারও একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত।
এ বিষয়ে সাম্প্রতিক তথ্যগুলো একটি স্পষ্ট কিন্তু উদ্বেগজনক চিত্রউপস্থাপন করে। বিভিন্ন প্রতিবেদনে পরিসংখ্যানের তারতম্য থাকলেওমূল বক্তব্য একই: দ্রুত নগরায়নশীল বাংলাদেশে প্লাস্টিক বর্জ্যউৎপাদন একটি বড় এবং ক্রমবর্ধমান সমস্যা এবং এটিকে অস্বীকারকরার কোন উপায় নেই।
বাংলাদেশ সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড স্টাডিজের (বিসিএএস) ২০২৪সালের একটি প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ঢাকাসহ বড় শহরগুলোতেপৌরসভার কঠিন বর্জ্যের মধ্যে প্লাস্টিকের অনুপাত বাড়ছে। বর্তমানেঢাকার মোট বর্জ্যের ১২-১৫% প্লাস্টিক, যা আগের হিসাবের ১০% থেকেবেশি। এই বৃদ্ধি ভোক্তার আচরণ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি পরিবর্তনেরজরুরিতা নির্দেশ করে।
প্লাস্টিক দূষণের আরেকটি জটিল দিক হলো এর আন্তঃসীমান্ত প্রকৃতি।বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পদ্মা নদী উজান থেকে আসা প্লাস্টিকবর্জ্যেরও একটি বড় মাধ্যম। বিশ্বব্যাংকের ২০২৩ সালের মূল্যায়নঅনুযায়ী, বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে পাওয়া প্লাস্টিক বর্জ্যের ৬০%-এর বেশি প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে আসে। এটি সমস্যারআন্তঃসংযুক্ততা এবং সম্মিলিত সমাধানের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে।
প্লাস্টিক দূষণের প্রভাব শুধু পরিবেশের ক্ষতিতেই সীমাবদ্ধ নয়।এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের(ইএসডিও) ২০২৪ সালের গবেষণায় দেখা গেছে, বাণিজ্যিকভাবেগুরুত্বপূর্ণ মাছের দেহে ও প্রধান নদী ও উপকূলীয় অঞ্চলেমাইক্রোপ্লাস্টিকের ব্যাপক উপস্থিতি রয়েছে। এটি মানব খাদ্যশৃঙ্খলেমাইক্রোপ্লাস্টিকের সংক্রমণের ঝুঁকি তৈরি করেছে। আরও উদ্বেগজনকহলো, পানীয় জলেও মাইক্রোপ্লাস্টিকের মাত্রা উদ্বেগজনক পর্যায়েপৌঁছেছে।
প্লাস্টিক দূষণের অর্থনৈতিক প্রভাবও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। পরিবেশ, বন ওজলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের (মোইএফসিসি) তথ্য অনুযায়ী, বার্ষিকপরিবেশ বাজেটের প্রায় ২৫% বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ব্যয় হয়, যার বড় অংশপ্লাস্টিক বর্জ্য পরিষ্কারে ব্যয়িত হয়। এই অর্থ অনায়াসেই টেকসইঅবকাঠামো উন্নয়ন ও সবুজ প্রযুক্তির উদ্ভাবনে বিনিয়োগ করা যেত।
২০০২ সালে পলিথিন শপিং ব্যাগ নিষিদ্ধ করার মতো নীতি থাকলেওদুর্বল বাস্তবায়ন এর কার্যকারিতা কমিয়েছে। ইনস্টিটিউট ফর পলিসি, অ্যাডভোকেসি অ্যান্ড গভর্ন্যান্সের (আইপিএজি) ২০২৩ সালেরপর্যালোচনা অনুযায়ী, দুর্বল প্রয়োগ ব্যবস্থা, সাশ্রয়ী বিকল্পের অভাব এবংগণসচেতনতা কর্মসূচির অপ্রতুলতা নিষেধাজ্ঞার প্রভাব কমিয়ে দিয়েছে।এই পর্যালোচনায় প্লাস্টিক পণ্যের উৎপাদন থেকে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পর্যন্তদায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে উৎপাদকদের দায়িত্ব (ইপিআর) জোরদারেরওপরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
প্লাস্টিক দূষণ রোধ করতে বাংলাদেশকে সর্বাত্মক ও বহুমুখী পদক্ষেপনিতে হবে যা নিম্নরূপ:
নিয়ন্ত্রণ ও প্রয়োগ জোরদার: বিদ্যমান নিষেধাজ্ঞা কঠোরভাবে প্রয়োগ ওএকবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের পরিধি বাড়ানো।
বর্জ্য পৃথকীকরণ ও পুনর্ব্যবহার: পরিবার, সমাজ ও বাণিজ্যিক পর্যায়েবর্জ্য পৃথকীকরণ ব্যবস্থা চালু করা। মাল্টি-লেয়ার প্লাস্টিকের মতো জটিলবর্জ্য প্রক্রিয়াকরণে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার।
সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব: টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও উদ্ভাবনীসমাধানে বেসরকারি খাতকে উৎসাহিত করা।
টেকসই বিকল্পের প্রচার: প্লাস্টিকের বিকল্প হিসেবে বায়োডিগ্রেডেবল পণ্যউৎপাদনে ভর্তুকি ও কর ছাড় দেওয়া।
আঞ্চলিক সহযোগিতা: প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে যৌথভাবে প্লাস্টিকবর্জ্য ব্যবস্থাপনার কৌশল প্রণয়ন।
প্লাস্টিক সঙ্কট মোকাবিলায় তার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করার ক্ষেত্রে বিশ্বপরিবেশ দিবস ২০২৫-বাংলাদেশের জন্য এটি একটি নতুন সুযোগ।উদ্ভাবনী সমাধান, শক্তিশালী নীতিকাঠামো ও সম্মিলিত প্রচেষ্টারমাধ্যমে বাংলাদেশ একটি পরিষ্কার, স্বাস্থ্যকর ও টেকসই ভবিষ্যৎ গড়েতুলতে পারে। সময় এখনই এবং সারা বিশ্ব তা বিশালভাবে পর্যবেক্ষন করছে। |
News Source
|
|
|
|
|
|
|
|
Today's Other News
|
Related Stories |
|
|
 |
|