Hawkerbd.com     SINCE
 
 
 
 
সঞ্চয়পত্রে মুনাফা কমায় চাপে পড়বে সীমিত আয়ের মানুষ [ অনলাইন ] 09/07/2025
সঞ্চয়পত্রে মুনাফা কমায় চাপে পড়বে সীমিত আয়ের মানুষ
ইয়াসির আরাফাত রিপন :

ব্যাংকখাতে আস্থার সংকট প্রকট। এ খাতে বিনিয়োগ ঝুঁকি মনে করেন সীমিত আয়ের মানুষ। অবসরপ্রাপ্ত চাকরিজীবী, নারী ও স্বল্প আয়ের মানুষের কাছে নির্ভরযোগ্য ও আস্থার বিনিয়োগ মাধ্যম সঞ্চয়পত্র। এটি তাদের কাছে নিশ্চিত আয়ের উৎস। ছয় মাসের ব্যবধানে সঞ্চয়পত্রে মুনাফা কমানোয় অখুশি বিনিয়োগকারীরা।

চলতি অর্থবছরের শুরুতেই সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার কমানোর ঘোষণায় হতাশ সাধারণ গ্রাহক। সরকার বলছে, সঞ্চয়পত্রের সুদহার বাড়িয়ে দিলে সবাই সঞ্চয়পত্র কিনবে, কেউ আর ব্যাংকে টাকা রাখবে না। এতে ব্যাংকগুলোতে লিকুইডিটির (তারল্য) ব্যাপার আছে। সবাই সঞ্চয়পত্র কিনলে ব্যাংক টাকা কোথায় পাবে।

বিনিয়োগকারীরা বলছেন, সরকার সুদহার কমানোয় নতুন বিনিয়োগের ক্ষেত্রে তারা চাপে পড়বেন। ৩০ জুন পর্যন্ত যে হার ছিল তাতে সবাই মোটামুটি ভালো মুনাফা পেতেন। অবসরপ্রাপ্তরা অনেকেই সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের মুনাফার ওপর নির্ভরশীল। তাদের কাছে এক-দুই হাজার টাকা কম পাওয়া মানে চাপ বাড়া। যাদের কাজ করার শারীরিক সামর্থ্য নেই তাদের জন্য সঞ্চয়পত্রের চেয়ে নির্ভরযোগ্য কোনো বিনিয়োগ ক্ষেত্র নেই।

মুনাফার হার কমিয়ে প্রজ্ঞাপন

গত মঙ্গলবার (১ জুলাই) অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি) জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের আওতায় পরিচালিত পাঁচটি সঞ্চয় স্কিমে মুনাফার হার আগামী ছয় মাসের জন্য কমিয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। এতে দেখা যায়, স্কিম অনুযায়ী এখন থেকে মুনাফার সর্বোচ্চ হার হবে ১১ দশমিক ৮২ শতাংশ থেকে ১১ দশমিক ৯৮ শতাংশ পর্যন্ত। এর আগে চলতি বছরের ১ জানুয়ারি এসব স্কিমে মুনাফার হার ছিল ১২ দশমিক ২৫ শতাংশ থেকে ১২ দশমিক ৫৫ শতাংশ পর্যন্ত। অর্থাৎ সর্বোচ্চ হার থেকে কমানো হয়েছে প্রায় ০.৫৭ শতাংশ।

    এখন কাজ করতে পারি না, অন্য কোনো পেশায় যাওয়ার পরিস্থিতি নেই। পেনশন আর কিছু সঞ্চয়পত্রের মুনাফার ওপর নির্ভর করে আমার সংসার চলে। এক-দুই হাজার টাকা কম পাওয়া মানেও আমার জন্য সমস্যার।–অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা

মুনাফার হার কমানো পাঁচ স্কিমের মধ্যে রয়েছে- পরিবার সঞ্চয়পত্র, পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র, তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র, পেনশনার সঞ্চয়পত্র এবং পোস্ট অফিস ফিক্সড ডিপোজিট বা ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংক মেয়াদি হিসাব।

চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ জুনের জন্য একটি সুদহার নির্ধারণ করেছিল সরকার। ১ জুলাই থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ের জন্য নতুন সুদহার নির্ধারণ করে দিয়েছে। ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি আবার সুদহার বাড়বে, কমবে নাকি নতুন হার নির্ধারণ হবে সেটি সে সময় জানা যাবে। সাড়ে সাত লাখ ও সাড়ে সাত লাখের বেশি বিনিয়োগের এই দুটি ধাপে বিনিয়োগে সুদহার ভিন্ন। পাঁচটি স্কিমে যিনি যে সময়ে সঞ্চয়পত্র কিনবেন, সেই সময়ের সুদহার অনুযায়ী মেয়াদকালীন তিনি মুনাফা পাবেন।

নতুন ঘোষণায় আগের মতো সঞ্চয়পত্রের বিনিয়োগকারীদের দুটি ধাপ রাখা হয়েছে। প্রথম ধাপ ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকার নিচের বিনিয়োগকারী। দ্বিতীয় ধাপটি হলো ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকার ওপরের বিনিয়োগকারী। জাতীয় সঞ্চয় স্কিমের আওতায় ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ড, ইউএস ডলার প্রিমিয়াম বন্ড, ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ড এবং ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংক সাধারণ হিসাব- এই চারটি স্কিমের মুনাফার হার অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।

নতুন সুদহার

১ জুলাই ২০২৫ থেকে কার্যকর হওয়া নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বিভিন্ন স্কিমে সঞ্চয়পত্রের সর্বোচ্চ মুনাফার হার নির্ধারণ করা হয়েছে ১১ দশমিক ৯৮ শতাংশ এবং সর্বনিম্ন ৯ দশমিক ৭২ শতাংশ।

নতুন হারে বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি বিভাজন নির্ধারণ করা হয়েছে—সাড়ে সাত লাখ টাকা। যাদের বিনিয়োগ এ সীমার নিচে, তারা তুলনামূলকভাবে বেশি মুনাফা পাবেন। আর যাদের বিনিয়োগ সাড়ে সাত লাখ টাকার বেশি, তাদের জন্য মুনাফার হার কিছুটা কম হবে।

বর্তমানে চালু থাকা জাতীয় সঞ্চয় স্কিমের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় পরিবার সঞ্চয়পত্রে আগে সাড়ে সাত লাখ টাকার কম বিনিয়োগে পাঁচ বছর মেয়াদ শেষে মুনাফার হার ছিল ১২ দশমিক ৫০ শতাংশ। এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ৯৩ শতাংশে।

    মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্ত কিংবা পেনশনের টাকায় সঞ্চয়পত্র কিনে সেখান থেকে মুনাফা পান। তা দিয়ে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করেন। মুনাফার হার কমলে তারা প্রভাবিত হবেন। আবার সরকার রাজস্বহার বাড়াতে পারছে না, বিপরীতে সুদের হার যদি বাড়তি হয় তাহলে বেতন-ভাতা পরিশোধে সরকারকে ঋণ করতে হবে।- অর্থনীতিবিদ এম হেলাল আহমেদ জনি

সাড়ে সাত লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগে এই স্কিমে মুনাফার হার আগে ছিল ১২ দশমিক ৩৭ শতাংশ, যা এখন কমিয়ে ১১ দশমিক ৮০ শতাংশ করা হয়েছে।

পেনশনার সঞ্চয়পত্রেও একই রকম কমেছে। আগে পাঁচ বছর মেয়াদি এ স্কিমে সাড়ে সাত লাখ টাকার কম বিনিয়োগে মেয়াদ শেষে মুনাফার হার ছিল ১২ দশমিক ৫৫ শতাংশ, যা এখন ১১ দশমিক ৫৮ শতাংশ। অন্যদিকে, সাড়ে সাত লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগকারীরা আগে পেতেন ১২ দশমিক ৩৭ শতাংশ, এখন পাবেন ১১ দশমিক ৮০ শতাংশ।

তিন বছর মেয়াদি তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রে প্রথম ধাপের বিনিয়োগকারীরা তিন মাস অন্তর মুনাফা সঞ্চয়পত্রে মেয়াদ শেষে মুনাফার হার ছিল ১২ দশমিক ৩০ শতাংশ। বর্তমানে এটা ১১ দশমিক ৮২ শতাংশ। দ্বিতীয় ধাপের বিনিয়োগকারীরা মেয়াদ ১২ দশমিক ২৫ শতাংশ হারে মুনাফা পান। এখন পাবেন ১১ দশমিক ৭৭ শতাংশ হারে।

গ্রাহকদের ক্ষোভ

মুনাফার হার কমানোর খবরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা বলছেন, মূল্যস্ফীতি ও পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এই সময়ে সরকার সঞ্চয়পত্রের মুনাফা কমিয়ে মধ্যবিত্তের কষ্টার্জিত অর্থ থেকে আরও বেশি কর আদায়ের পথ তৈরি করছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতিঝিল অফিসে কথা হয় অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা আব্দুল্লাহর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এখন কাজ করতে পারি না, অন্য কোনো পেশায় যাওয়ার পরিস্থিতি নেই। পেনশন আর কিছু সঞ্চয়পত্রের মুনাফার ওপর নির্ভর করে সংসার আমার চলে। এক-দুই হাজার টাকা কম পাওয়া মানে আমার জন্য সমস্যার। সঞ্চয়পত্রে মুনাফা কমলে নতুন বিনিয়োগে জীবনযাত্রা চালানো কঠিন হয়ে পড়বে।’

এদিন একই স্থানে কথা হয় মিরপুরে বসবাসকারী উম্মে হাবিবা নামে এক গৃহবধূর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমরা ব্যাংকে টাকা রাখতে ভয় পাই, শেয়ারবাজার তেমন একটা বুঝি না, তাই সঞ্চয়পত্রই আমার একমাত্র ভরসা। এখন যদি এটাতে কম রিটার্ন পাই, তাহলে কীভাবে ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় করবো?’

মুনাফার হার কমে যাওয়ায় অনেকে এখন ব্যাংকে স্থায়ী আমানত বা অন্য ঝুঁকিপূর্ণ খাতে যাওয়ার চিন্তা করছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সঞ্চয়পত্রের ওপর নির্ভরশীল মানুষদের কথা বিবেচনা না করে যদি কেবল অর্থনৈতিক সূচকের ভারসাম্য রক্ষার নামে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, তাহলে সমাজে অসন্তোষ ও অসাম্য আরও বাড়তে পারে।

নতুন সুদহারে মধ্য ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত শ্রেণির বিনিয়োগকারীরা বেশি হতাশ। তারা বলছেন, সঞ্চয়পত্র ছিল তাদের জন্য নিরাপদ ও নিশ্চিত আয়ের ভরসার জায়গা—নতুন সিদ্ধান্তে সেই আয়ের পরিমাণ কমে যাওয়ায় ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে।

নতুন সুদহার নিয়ে পুরান ঢাকার গৃহবধূ জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, ‘আমি এর আগে ব্যাংকে টাকা রেখেছিলাম, ব্যাংকটির অবস্থা খুবই খারাপ মনে হয়েছে। অনেক কষ্ট করে আমার টাকা উত্তোলন করেছি। ব্যাংকের প্রতি আর ভরসা করতে পারছি না। এখন এসেছি সঞ্চয়পত্র কিনতে। নতুন সরকারের প্রতি আশা ছিল, অন্তত সঞ্চয়পত্রে হাত দেবে না। কিন্তু আজ বাংলাদেশ ব্যাংকে এসে অনেকের মুখে শুনছি এটাতে মুনাফার হার কমানো হয়েছে, যা আমার কাছে ভালো মনে হয়নি।’

যা বলছে সরকার

অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, সরকারি ব্যয় কমানো এবং ব্যাংক ও অন্য আর্থিক খাতের প্রতি মানুষের আস্থা ফেরাতেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। একটি ভারসাম্যপূর্ণ মুদ্রানীতি বাস্তবায়নের অংশ হিসেবেই সঞ্চয়পত্রে মুনাফা কমানো হয়েছে।

গত শনিবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘সঞ্চয়পত্রের সুদহার বাড়িয়ে দিলে সবাই সঞ্চয়পত্র কিনবে, কেউ আর ব্যাংকে টাকা রাখবে না। এতে ব্যাংকগুলোতে লিকুইডিটির ব্যাপার আছে আর সবাই সঞ্চয়পত্র কিনলে ব্যাংক কোথায় টাকা পাবে।’

এ বিষয়ে চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভ রিসার্চ ফেলো ও অর্থনীতিবিদ এম হেলাল আহমেদ জনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্ত কিংবা পেনশনের টাকায় সঞ্চয়পত্র কিনে সেখান থেকে মুনাফা পান। তা দিয়ে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করেন। মুনাফার হার কমলে তারা প্রভাবিত হবেন। আবার সরকার রাজস্বহার বাড়াতে পারছে না, বিপরীতে সুদের হার যদি বাড়তি হয় তাহলে বেতন-ভাতা পরিশোধে সরকারকে ঋণ করতে হবে। সব মিলিয়ে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির আর্থিক নিরাপত্তার দিকটিও গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে হবে।’
News Source
 
 
 
 
Today's Other News
• ভালো ব্যাংক চেনার ৫টি কৌশল, আপনার টাকা কতটা নিরাপদ?
• মধুমতি ব্যাংকের অর্থায়ন এবং সিও- এর সহযোগিতায় ১০ কোটি টাকা কৃষি ঋণ বিতরণ
• ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিতে ডুবেছে ইউনিয়ন ব্যাংক
• গোল্ড অ্যাওয়ার্ডস পেল এমটিবি এয়ার লাউঞ্জ
• প্রেস বিজ্ঞপ্তি
• ন্যাশনাল ব্যাংক পিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন আদিল চৌধুরী
• সোনালী ব্যাংকের রেকর্ড ৩৭০৬ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা অর্জন
• খেলাপি সংস্কৃতি রোধে বিশেষ আদালত গঠন জরুরি
• আকুর বিল পরিশোধের পর কমল রিজার্ভ
• খেলাপি সংস্কৃতি রোধে বিশেষ আদালত গঠন জরুরি
More
Related Stories
 
Forward to Friend Print Close Add to Archive Personal Archive  
Forward to Friend Print Close Add to Archive Personal Archive  
 
 
Home / About Us / Benifits / Invite a Friend / Policy
Copyright © Hawker 2013-2012, Allright Reserved