Hawkerbd.com     SINCE
 
 
 
 
বিপর্যস্ত ব্যাংক খাত, ঝুঁকির মাত্রা আরও বেড়েছে [ অনলাইন ] 20/04/2024
বিপর্যস্ত ব্যাংক খাত, ঝুঁকির মাত্রা আরও বেড়েছে
বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর সার্বিক আয় কমছে, বাড়ছে ব্যয়। এতে ঝুঁকি মোকাবিলার জন্য চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন খাতে অর্থ সংরক্ষণ করতে পারছে না। ঋণ আদায় কম হওয়ায় খেলাপি ঋণ বেড়ে যাচ্ছে। প্রভিশন খাতে আটকে থাকা অর্থের পরিমাণ বাড়ছে।

একই সঙ্গে বেড়ে যাচ্ছে ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের পরিমাণ। আয় কম হওয়ায় চাহিদা অনুযায়ী ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের বিপরীতে মূলধনের জোগান দিতে পারছে না। তারল্যের প্রবাহও কমে যাচ্ছে। বকেয়া ঋণের স্থিতি বেড়েই চলেছে। এতে খেলাপি ঋণ আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এসব মিলে ব্যাংক খাত গত এক বছরে মন্দা কাটিয়ে ওপরের দিকে যাত্রা করতে পারেনি। বরং নিম্নমুখী যাত্রা অব্যাহত ছিল। এতে ব্যাংকগুলোর ঝুঁকি মোকাবিলার সক্ষমতা যেমন কমেছে, তেমনই আর্থিক ঝুঁকির মাত্রা আরও বেড়েছে।

কেন্দ্রীয় প্রতিবেদন থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, ২০২২ সালের ডিসেম্বরে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ ছিল ৮ দশমিক ১৬ শতাংশ। গত বছরের ডিসেম্বরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ শতাংশে। এর মধ্যে জুনে তা বেড়ে ১০ দশমিক ১১ শতাংশে উঠেছিল। পরে কিছুটা কমেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি খেলাপি ঋণ সরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোয়, যা মোট ঋণের ২১ শতাংশ। বিশেষায়িত সরকারি ব্যাংকগুলোয় প্রায় ১৪ শতাংশ। বেসরকারি ব্যাংকে ৬ এবং বিদেশি ব্যাংকে প্রায় ৫ শতাংশ খেলাপি ঋণ রয়েছে।

আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ সর্বোচ্চ ২ শতাংশ হতে পারে। ৩ শতাংশ হলেই ওই ব্যাংককে ঝুঁকিপূর্ণ ধরা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের প্রেক্ষাপটে ৫ শতাংশ পর্যন্ত খেলাপি ঋণকে স্বাভাবিক মনে করে। এর বেশি হলেই ওই ব্যাংককে ঝুঁকিপূর্ণ ধরা হয়। সামগ্রিকভাবে দেশের ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ ৯ শতাংশ। এ হিসাবে পুরো খাতটিই ঝুঁকিপূর্ণ। তবে বিদেশি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ গড়ে ৫ শতাংশের কম। কোনো কোনো ব্যাংকের অনেক বেশি। প্রকৃত হিসাবে খেলাপি ঋণ আরও বেশি। অর্থনীতিবিদদের মতে, খেলাপি ঋণ কমপক্ষে ২৫ শতাংশ।

২০২২ সালের ডিসেম্বরে প্রভিশন খাতে আটকে ছিল ৭৩ হাজার কোটি টাকা। এখন আটকে আছে ৮০ হাজার কোটি টাকা। প্রভিশন ঘাটতি ছিল ১১ হাজার কোটি টাকা। এখন তা বেড়ে ২০ হাজার কোটি টাকা।

ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বাড়ায় এবং এর বিপরীতে প্রভিশন রাখার হার কমায় মূলধন ঘাটতি বেড়ে গেছে। এর কারণে ব্যাংকগুলোর ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদ বেড়েছে। কিন্তু ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের বিপরীতে মূলধন রাখার হার কমেছে। এতে ব্যাংকগুলোর আর্থিক ঝুঁকির মাত্রা বেড়েছে।

ব্যাংকগুলোর বকেয়া স্থিতিও বেড়ে যাচ্ছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে শিল্প খাতে মেয়াদি ঋণের বকেয়া স্থিতি বেড়েছিল ১ দশমিক ৬২ শতাংশ। গত অর্থবছরে তা বেড়েছে ২৩ দশমিক ৩৮ শতাংশ। এসব ঋণের বড় অংশই পরবর্তী সময়ে খেলাপি হবে। কৃষি ও পলি­ঋণের চলতি অর্থবছরের জানুয়ারি পর্যন্ত বকেয়া বেড়েছে ২৩ দশমিক ৭০ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে কমেছিল ১ দশমিক ১৫ শতাংশ। গ্রাহকদের ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা কমায় পরিশোধ কম হচ্ছে। ফলে বকেয়া ঋণের স্থিতি বেড়ে যাচ্ছে। এতে খেলাপি ঋণের পরিমাণও বাড়বে, যা আতঙ্কের বিষয়।

খেলাপি ঋণ বাড়ায় ২০২২ সালের ডিসেম্বরে প্রভিশন খাতে আটকে ছিল ৭৩ হাজার কোটি টাকা। এখন আটকে আছে ৮০ হাজার কোটি টাকা। একই সময়ে প্রভিশন ঘাটতি ১১ হাজার কোটি থেকে বেড়ে ২০ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়িয়ছে।

আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী ব্যাংকগুলোর ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের বিপরীতে কমপক্ষে ১০ শতাংশ মূলধন রাখতে হয়। তবে ঝুঁকিমুক্ত থাকতে ১২ শতাংশ মূলধন রাখাকে আন্তর্জাতিকভাবে উত্তম মনে করা হয়। কিন্তু সে হারে মূলধন নেই। ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদ বাড়ার বিপরীতে উলটো আরও কমেছে। ২০২১ সালের জুনে ব্যাংকগুলোর ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের বিপরীতে মূলধন ছিল ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। একই বছরের সেপ্টেম্বরে তা কিছুটা কমে ১১ দশমিক ২২ শতাংশ হয়। একই বছরের ডিসেম্বরে তা আরও কমে ১১ দশমিক ০৬ শতাংশ হয়।

২০২২ সালের মার্চে ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের বিপরীতে মূলধন আবার সামান্য বেড়ে ১১ দশমিক ৪১ শতাংশ হয়। একই বছরের জুনে কমে তা আবার ১১ দশমিক ১৫ শতাংশে নামে। একই বছরের সেপ্টেম্বরে আরও কমে ১১ দশমিক ০১ শতাংশ হয়। ওই বছরের ডিসেম্বরে আবার তা বেড়ে ১১ দশমিক ৮৩ শতাংশে দাঁড়ায়।

গত বছরের মার্চে মূলধন সংরক্ষণের হার আবার কমে ১১ দশমিক ২৩ শতাংশ, জুনে আরও কমে ১১ দশমিক ১৯ শতাংশে এবং সেপ্টেম্বরে আরও কমে ১১ দশমিক ০৮ শতাংশ হয়। এর মধ্যে সরকারি ব্যাংকগুলোর ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের বিপরীতে মূলধন ২০২১ সালের জুনে ছিল ৬ দশমিক ৮২ শতাংশ। এখন তা কমে ৬ দশমিক ০৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ ৩ দশমিক ৯৭ শতাংশ ঘাটতি হয়েছে। বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের বিপরীতে মূলধন ঘাটতি বেড়েই যাচ্ছে। ২০২১ সালের জুনে ঘাটতি ছিল ৩২ দশমিক ১৬ শতাংশ। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩৯ শতাংশে। বেসরকারি ব্যাংকগুলোরও ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদ বাড়ছে। কিন্তু মূলধন কমেছে। তবে তা নির্ধারিত সীমার বেশি রয়েছে। মূলধন কমায় তাদের ঝুঁকি মোকাবিলার সক্ষমতা কমেছে। ২০২১ সালের জুনে তাদের মূলধন ছিল ১৩ দশমিক ২৬ শতাংশ। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে তা বেড়ে ১৩ দশমিক ৮০ শতাংশে ওঠে। এখন তা কমে ১২ দশমিক ৮২ শতাংশে নেমেছে। কেবল বিদেশি ব্যাংকগুলোর মূলধন বাড়ছে। তাদের চাহিদার তুলনায় তিনগুণের বেশি মূলধন রয়েছে। আলোচ্য সময়ে তাদের মূলধন ২৮ দশমিক ৪৬ শতাংশ থেকে বেড়ে এখন ৩৫ দশমিক ৭২ শতাংশে উঠেছে।

প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, ঋণ বা বিনিয়োগ থেকে ব্যাংকগুলোর আয় কমে যাচ্ছে। অন্যদিকে ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। ফলে নিট মুনাফা কম হচ্ছে। এতে শেয়ারহোল্ডাররা যেমন লভ্যাংশ কম পাচ্ছেন, তেমনই ব্যাংকের বিভিন্ন খাতে ঝুঁকির মাত্রা মোকাবিলায় চাহিদা অনুযায়ী অর্থের সংস্থান করতে পারছে না। ফলে ব্যাংকগুলো দুর্বল হয়ে পড়ছে। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে ব্যাংকগুলোর ঋণ বা বিনিয়োগ বা সম্পদ থেকে ১০০ টাকায় আয় হয়েছে ৬২ পয়সা। গত ডিসেম্বরে তা কমে ১০০ টাকা ৫৯ পয়সা আয় হয়েছে। এক বছরের ব্যবধানে আয় কমেছে ৩ পয়সা। মধ্যবর্তী সময়গুলোয় ব্যাংকের সম্পদ থেকে আয় আরও কমেছিল। ব্যাংকগুলোর আয়ের সিংহভাগই আসে সম্পদ থেকে। এ খাত থেকে আয় কমায় সার্বিকভাবে ব্যাংকের আয় কমে গেছে। ১০০ টাকায় সরকারি ব্যাংকগুলোর আয় মাত্র ১৮ পয়সা। বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর কোনো আয় নেই। উলটো লোকসান ২ টাকা ৭৪ পয়সা। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর আয় ৬২ পয়সা। মধ্যবর্তী সময়ে আরও কমেছিল। এ খাতে বিদেশি ব্যাংকগুলোর আয় বেড়েছে। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে সম্পদ থেকে আয় ছিল ২ টাকা ৪৮ পয়সা। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ টাকা ২৮ পয়সায়।

এদিকে ব্যাংকের পুঁজি থেকেও আয় কমেছে। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে এ খাতে ১০০ টাকায় আয় হয়েছে ১০ টাকা ৬৭ পয়সা। এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে ১০ টাকা ৫৫ পয়সায়। পুঁজি থেকে সরকারি ব্যাংকের আয় ৪ টাকা ৭৮ পয়সা। বিশেষায়িত ব্যাংকের লোকসান ১০ টাকা ৪৮ পয়সা। বেসরকারি ব্যাংকের আয় ১০ টাকা ১৩ পয়সা। বিদেশি ব্যাংকের আয় ১৭ টাকা ০৯ পয়সা।

প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, ব্যাংকগুলোর আয়-ব্যয় অনুপাত বেড়ে যাচ্ছে। এতে ব্যাংকগুলো চাহিদা অনুযায়ী ঝুঁকি মোকাবিলার বিপরীতে অর্থের সংস্থান রাখতে পারছে না। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী ব্যাংকগুলোর আয়-ব্যয় অনুপাত ৪০ শতাংশের কম হলে ভালো। এর বেশি হলে ভালো নয়। বাংলাদেশের ব্যাংক খাতে এ অনুপাত অনেক বেশি। ২০২১ সালে ব্যাংকগুলো ১০০ টাকায় আয় করে ৭৭ টাকা খরচ করেছে। এখন ১০০ টাকা আয় করে ৮১ টাকা ১০ পয়সা খরচ করে। ফলে ব্যাংকের হাতে থাকে মাত্র ১৮ টাকা ৯০ পয়সা। এ থেকে প্রভিশন ঘাটতি পূরণ, করপোরেট কর প্রদান, শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দেওয়া এবং রিজার্ভ তহবিলে অর্থ স্থানান্তর করতে হয়। নিট আয় একেবারেই কম থাকে বলে এসব খাতে ঘাটতি থেকে যায়।

এদিকে ব্যাংকগুলোয় তারল্য সংকটও প্রকট রয়েছে। গত বছর তারল্য কিছুটা বাড়লেও এখন আবার কমছে। ডিসেম্বরে তারল্য ছিল ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা। গত জানুয়ারিতে তা কমে ৪ লাখ ২৪ হাজার কোটি টাকায় নেমেছে। ওই সময়ে তারল্য কমেছে ৯ হাজার কোটি টাকা।

টাকার পাশাপাশি ব্যাংকগুলো ডলারের ঘাটতিতেও রয়েছে। এতে আমদানি বাণিজ্য করতে পারছে না। ফলে ব্যাংকগুলো বৈদেশিক বাণিজ্যের গ্রাহক হারাচ্ছে। কিছু ব্যাংক চড়া দামে রেমিট্যান্স কিনে আমদানি চালাচ্ছে সীমিত পরিসরে।

এদিকে ব্যাংকগুলোর বিভিন্ন খাতে অতিরিক্ত অর্থ রাখার প্রবণতা কমে যাচ্ছে। সক্ষমতা কমার কারণেই এমনটি হচ্ছে। ক্যাশ রিজার্ভ রেশিও (সিআরআর) খাতে ব্যাংকগুলোকে মোট আমানতের ৪ শতাংশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে নগদ রাখতে হয়। জুনে এ খাতে অতিরিক্ত ছিল ১৯ হাজার ৯৭০ কোটি টাকা। এখন তা কমে ৫ হাজার ৯৯০ কোটি টাকায় নেমে এসেছে। একইভাবে এসএলআর খাতে অতিরিক্ত ছিল ১ লাখ ৬৩ হাজার ৩১০ কোটি টাকা। এখন তা কমে দাঁড়িয়ছে ১ লাখ ৫০ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানায়, ব্যাংক খাতের শৃঙ্খলা, সুশাসন এবং বিশ্বাসযোগ্যতা নিশ্চিত করার জন্য বেশকিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এগুলো বাস্তবায়িত হলে ব্যাংক খাতে স্তিতিশীলতা ফিরে আসবে। একই সঙ্গে গতিশীল হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কারণ, ব্যাংক খাতের রক্ত সঞ্চালনের সঙ্গে তুলনা করা হয় গ্রাহকদের আমানতকে। সেই আমানত বাড়তে শুরু করেছে। ডলারের প্রবাহও কিছুটা বেড়েছে। এখন সুশাসন প্রতিষ্ঠা, জালজালিয়াতি শূন্যে নামিয়ে আনতে পারলে এবং খেলাপি ঋণ কমাতে পারলেই পরিস্থিতি পর্যায়ক্রমে উন্নতি হবে।
News Source
 
 
 
 
Today's Other News
• ‘ব্যাংকার্স ওয়েলফেয়ার ক্লাব’ এর পানি ও খাবার স্যালাইন বিতরণ বিবিধ
• শ্রমজীবী মানুষের মাঝে ব্যাংকার্স ওয়েলফেয়ার ক্লাবের পানি ও স্যালাইন বিতরণ
• সাউথইস্ট ব্যাংকের লভ্যাংশ ঘোষণা
• ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে রিফ্রেশার্স ট্রেইনিং কোর্স
• ন্যাশনাল ব্যাংকের ভার্চুয়াল প্রশিক্ষণ কর্মশালা
• চুক্তিভিত্তিক কর্মকর্তা নিয়োগ দেবে অগ্রণী ব্যাংক, বয়স ৬০ হলেও আবেদন
• এবি ব্যাংকের প্রথম প্রান্তিক প্রকাশ
• এবি ব্যাংকের ডিভিডেন্ড ঘোষণা
• নাওয়ার প্রোপার্টিজের গ্রাহকদের হোম লোন সুবিধা দিবে সাউথইস্ট ব্যাংক
• মাস্টারকার্ড ও ব্যাংক এশিয়া নিয়ে এল ‘ওয়ার্ল্ড এলিট মাস্টারকার্ড’
More
Related Stories
 
Forward to Friend Print Close Add to Archive Personal Archive  
Forward to Friend Print Close Add to Archive Personal Archive  
 
 
Home / About Us / Benifits / Invite a Friend / Policy
Copyright © Hawker 2013-2012, Allright Reserved