Hawkerbd.com     SINCE
 
 
 
 
ব্যাংকের সিংহভাগ ঋণ নিয়েছেন কোটিপতিরা [ পাতা-১২ ] 20/04/2024
ব্যাংকের সিংহভাগ ঋণ নিয়েছেন কোটিপতিরা
ব্যাংকের লাখ টাকার নিচের আমানত ও ঋণগ্রহীতাদের সাধারণত নিম্ন আয়ের মানুষ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ২০২৩ সালের শেষে ওই গ্রাহকদের মোট ঋণের পরিমাণ ২ শতাংশও ছুঁতে পারেনি। অথচ কোটিপতি ঋণগ্রহীতারা দেশের প্রায় ৭৫ শতাংশ ঋণই দখল করে রেখেছেন। আর অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি গ্রাহকদের ভাগ্যে জুটেছে ঋণের মাত্র ২৫ শতাংশ। বিশেষজ্ঞদের মতে, বৃহৎ ঋণের চাপে কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন ক্ষুদ্র ঋণের গ্রাহকরা। কিন্তু দেশের অর্থনীতি সচল রাখতে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন ছোট উদ্যোক্তারাই।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংক খাতের আমানতকারীর সংখ্যা ১৫ কোটি ৩৫ লাখ ৬০ হাজার ৯৩৭ জন। তাদের জমাকৃত টাকার পরিমাণ ১৭ লাখ ৪৯ হাজার ১৩২ কোটি। একই সময়ে ১৫ লাখ ৩৮ হাজার ৩৪২ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করেছে ব্যাংকগুলো, যেখানে ঋণগ্রহীতার সংখ্যা ছিল ১ কোটি ৩০ লাখ ২৮ হাজার ২৭৮ জন। অর্থাৎ ১২ জনের জমাকৃত টাকা ভোগ করছেন মাত্র একজন। এটা ছিল সার্বিক হিসাব। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ব্যাংক ঋণের বেশিরভাগই ভোগ করছেন কোটিপতি গ্রাহক। বঞ্চিত হচ্ছেন প্রান্তিক পর্যায়ের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের হাজারো উদ্যোক্তা।

তথ্য বলছে, প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষক, মুটে, মজুর, দোকানদারের খুব বেশি ঋণের প্রয়োজন হয় না। তারা কখনো ৫০ হাজার; ১ লাখ বা ব্যবসাভেদে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ করেন। আর নতুন ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ঋণের প্রয়োজন হয় ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত। এর বাইরে কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ নেন মধ্যম আয়ের চাকরিজীবীরা। যারা বাড়ি এবং গাড়ির জন্য ঋণ নিয়ে থাকেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ডিসেম্বর পর্যন্ত মাত্র ৩ হাজার ৬৬০ জন গ্রাহক ব্যাংক খাতের মোট ঋণের ২৭ দশমিক ৮৭ শতাংশই দখলে নিয়েছেন। অথচ, নিম্ন আয়ের মানুষ বা লাখ টাকার নিচের ঋণগ্রহীতারা মাত্র ১ দশমিক ৮৭ শতাংশ ঋণ নিয়েছেন। এসব গ্রাহকের নেওয়া মোট ঋণের পরিমাণ ২৮ হাজার ১৭৩ কোটি টাকা। অতিক্ষুদ্র উদ্যোক্তা বা ১-৫ লাখ টাকা পর্যন্ত নেওয়া গ্রাহকদের ঋণের পরিমাণ ৪ দশমিক ৫৮ শতাংশ। এসব গ্রাহকের নেওয়া মোট ঋণের পরিমাণ ৭০ হাজার ৫২৯ কোটি টাকা। আর নতুন ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ঋণের প্রয়োজন হয় ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত। এসব গ্রাহক ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংক থেকে মোট ঋণের ১৩ দশমিক ১৮ শতাংশ ঋণ গ্রহণ করেছেন। তাদের মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ২ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা। এর বাইরে মধ্যম আয়ের চাকরিজীবী ও ব্যবসায়ী বা কোটি টাকা পর্যন্ত নেওয়া গ্রাহকরা ৫ দশমিক ৫৯ শতাংশ ঋণ নিয়েছেন। তাদের নেওয়া মোট ঋণের পরিমাণ ৮৭ হাজার ৫৭৬ কোটি টাকা।

জানতে চাইলে ব্যাংক এশিয়ার সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও এমএমই ঋণ বিশেষজ্ঞ আরফান আলী কালবেলাকে বলেন, ‘স্বাধীনতার ৫০ বছর পেরিয়ে গেলেও দেশের ব্যাংকগুলো গ্রামাঞ্চলে ঋণ বিতরণের সক্ষমতা তৈরি করতে পারেনি। ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণে খরচ বেশি হওয়ার অজুহাতে তারা বরাবরের মতোই এ খাত থেকে সরে আসে। এতে গ্রামের মানুষ বেশি সুদে এমআরএ প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে ঋণ নিতে বাধ্য হচ্ছে। অথচ ব্যাংকগুলো এগিয়ে এলে কৃষক স্বল্প খরচে ঋণ নিতে পারতেন। এতে তাদের উৎপাদন খরচও কমত। এ কথা ঠিক যে, গ্রামে ঋণ বিতরণে খরচ কিছুটা বেশি হয়। কিন্তু ব্যাংকগুলোর তো সামাজিক দায়বদ্ধতা থাকা উচিত।’

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের (এমটিবি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মাহবুবুর রহমান কালবেলাকে বলেন, ‘গ্রামাঞ্চলে ঋণ বিতরণে যে ধরনের সক্ষমতা প্রয়োজন অনেক ব্যাংকেরই তা নেই। এ কারণে ব্যাংকগুলো এমএফআই প্রতিষ্ঠানগুলোর সহায়তা নিয়ে ঋণ বিতরণ করে। এখন আবার কোনো কোনো ব্যাংক ফিনটেক কোম্পানিগুলোরও সহায়তা নিচ্ছে। এর পেছনে আরেকটি কারণ হচ্ছে ছোট ঋণ বিতরণে খরচ বেশি হওয়ায় ব্যাংকগুলো আগ্রহ কম দেখায়। এ ছাড়া গ্রামে ব্যাংকের তেমন জনবল না থাকায় গ্রাহকের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক কম। এমন পরিস্থিতিতে অপরিচিত ও ঝুঁকি তৈরি হতে পারে, তাই ঋণ বিতরণে অনীহা দেখায়।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, মাত্র ৩ হাজার ৬৬০ জন গ্রাহক ব্যাংক খাতের মোট ঋণের ২৭ দশমিক ৮৭ শতাংশই দখলে নিয়েছেন। ৫০ কোটি টাকার বেশি এসব ঋণগ্রহীতার মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ২৮ হাজার ৬৬০ কোটি টাকা। ২০ কোটি টাকার ওপরে ঋণ নিয়েছেন এমন গ্রাহকের সংখ্যা ১১ হাজার ২৭ জন, যাদের কাছে আছে ৬ লাখ ৫৯ হাজার ১১৫ কোটি টাকা, যা ব্যাংক খাতের মাধ্যমে বিতরণকৃত মোট ঋণের ৪২ দশমিক ৮৫ শতাংশ। ৫ কোটি টাকার বেশি ঋণ বিতরণ করা হয়েছে, এমন গ্রাহকের সংখ্যা ৪১ হাজার ১৩৭ জন। তাদের কাছে বিতরণ করা হয়েছে ৯ লাখ ৪১ হাজার ৪৩ কোটি টাকা। হিসাব অনুযায়ী ব্যাংকের মোট ঋণের ৬১ দশমিক ১৮ শতাংশ রয়েছে এসব গ্রাহকের কাছে। ১ কোটি টাকার ওপরে ঋণ নিয়েছেন এমন গ্রাহকের সংখ্যা ১ লাখ ৪৫ হাজার ১১৫ জন। তাদের হাতে রয়েছে বিতরণকৃত মোট ঋণের ৭৪ দশমিক ৭৩ শতাংশ। অঙ্কে যার পরিমাণ ১১ লাখ ৪৯ হাজার ৩২২ কোটি টাকা।

এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, শিল্প খাতে ছোট প্রতিষ্ঠানের চেয়ে বড়দের খেলাপির হার বেশি। বড় প্রতিষ্ঠানগুলো খেলাপি হওয়ার পরও বারবার ঋণ পাচ্ছে। তাই এ খাতে খেলাপি ঋণের হার বেড়েছে। এ ছাড়া পুনঃতপশিল ও পুনর্গঠন সুবিধার কারণে এ খাতের দুর্দশাগ্রস্ত ঋণের পরিমাণ অনেক বেশি। বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের কাছে খেলাপি ঋণ বেশি। এরা ধরাছোঁয়ার বাইরে। যারা ধরাছোঁয়ার বাইরে তাদের নতুন করে ঋণ দেওয়া বন্ধ করে দিতে হবে। নতুন ঋণ যাতে না বাড়ে এটা নিশ্চিত করতে হবে। তাহলেই এ খাতে খেলাপি ঋণ কমবে।
News Source
 
 
 
 
Today's Other News
More
Related Stories
 
Forward to Friend Print Close Add to Archive Personal Archive  
Forward to Friend Print Close Add to Archive Personal Archive  
 
 
Home / About Us / Benifits / Invite a Friend / Policy
Copyright © Hawker 2013-2012, Allright Reserved