[ অনলাইন ] 16/05/2024
 
প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর দিকে বিশেষ মনোযোগ দিচ্ছে ইউসিবি: এমডি আরিফ কাদরী
ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক পিএলসি (ইউসিবি) ১৯৮৩ সালে যাত্রা শুরু করে। ৪১ বছরে পা রাখছে ইউসিবি। ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে যোগ দেন আরিফ কাদরী। এর আগে তিনি ব্যাংকটির অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছিলেন। ব্যাংকটির বর্তমান অবস্থা, আগামীর পদক্ষেপ জানতে আরিফ কাদরীর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বিজনেস বাংলাদেশ -এর নিজস্ব প্রতিবেদক নাজমুল ইসলাম।

বিজনেস বাংলাদেশ: ৪১ বছরে পা রাখছে ইউসিবি। এ সময়ের অভিজ্ঞতা জানতে চাই

আরিফ কাদরী: ১৯৮৩ সালে যাত্রা শুরু করে ইউসিবি। ৪১ বছর হয়েছে ব্যাংকটির বয়স। প্রথমে দিকে বেশিভাগই ব্যাংকটি করপোরেট খাতে ঋণ দিয়েছে। তবে এখন ব্যাংকটি সেখান থেকে ফিরে এসেছে। কারণ করপোরেটে ঋণ দিলে বেশি মানুষের কাছে যাওয়া যায় না। তাই বেশি মানুষের সাথে ব্যাংকিং করার জন্য ইউসিবি ব্যাংক এখন এসএমই খাতে বেশি ঋণ দিচ্ছে। আমরা ব্যাংকিং সেবার বাইরে থাকা মানুষকে সেবা দিতে নানা উদ্যোগ নিয়েছি। ছোট ছোট প্রতিষ্ঠানে এ ঋণ দেওয়ার ফলে উৎপাদন বাড়বে, নতুন কর্মসংস্থান হবে। এতে করে ক্রয়ক্ষমতা বেড়ে অর্থনীতিতে বিনিয়োগ হবে। এভাবে টাকা যত বেশি হাতবদল হবে, অর্থনীতি তত শক্তিশালী হবে।

বিজনেস বাংলাদেশ: প্রথম প্রজন্মের ব্যাংক হিসেবে আপনাদের সেবায় কোনো নতুনত্ব রয়েছে, নাকি এনালক পদ্ধতি চলছে ?

আরিফ কাদরী : অন্য ব্যাংকগুলোর চাইতে ইউসিবি ব্যাংকের সেবার মান অনেক উন্নত। গ্রাহকের চাহিদা মতো সেবা দিচ্ছে ইউসিবি ব্যাংকের কর্মীরা। ইউসিবি একটি করপোরেট ব্যাংক হলেও প্রান্তিক মানুষকেও সেবা দিচ্ছে। করপোরেট ব্যাংকিংয়ের পাশাপাশি নতুন নতুন সেবার সংযোজন করা, গ্রাহক সেবার মান উন্নয়ন, নিরাপদ ও নির্ভুল সেবার নিশ্চয়তার বিভিন্ন ধরনের উদ্দ্যোগ নেয়া হয়েছে। এছাড়া তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর আধুনিক ব্যাংকে রূপান্তরিত হয়েছে; এখানে গ্রিন ব্যাংকিং এবং ডিজিটাল তথ্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। আমাদের গ্রাহকরা কার্ড দিয়ে দেশজুড়ে এটিএম থেকে টাকা উত্তোলন করতে পারেন। সর্বোচ্চ তথ্য ও প্রযুক্তির ব্যবহার করা হচ্ছে ইউসিবি ব্যাংকে। যা এখনও অনেকই এই তথ্য ও প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারিনি। যা গ্রাহকের জন্য আমরা পেরেছি। ৮৬ হাজার মত গ্রাহক ইউসিবির কার্ড ব্যবহার করছে। এছাড়া প্রান্তিক ও নিম্ন আয়ের মানুষকে সেবার আওতায় আনতে ইউসিবি ব্যাংকের চালু রয়েছে ২২৯টি শাখা, ১৫২ উপশাখা ৭০৩টি এটিএম বুথ ও সিআরএম এবং ৯২৭ এজেন্ট ব্যাংকিং শাখা। সামনে সেবা বাড়ানোর জন্য শাখা, উপশাখা ও এটিএম বুথ এবং এজেন্ট আরও বৃদ্ধি করা হবে।

বিজনেস বাংলাদেশ: ব্যাংকের আমানত ও ঋণ বিতরণের পরিমাণ কত?

আরিফ কাদরী : ব্যাংকের আমানতের পরিমাণ এপ্রিল পর্যন্ত ৫৫ হাজারে মত। ঋণ বিতরণের পরিমাণ হলো সাড়ে ৫৩ হাজারের মত। এর মধ্যে রিটেইল খাতে ২ হাজার ৮৮৬ কোটি টাকা, এসএমইতে খাতে ১১ হাজার ২৮১ কোটি টাকা ও করপোরেট খাতে ৩৮ হাজার ২০০ কোটি টাকা এবং তাকওয়া ইসলামীক খাতে ১ হাজার ৩৩ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। খেলাপী ঋণ রয়েছে ৬ শতাংশের কাছাকাছি।

বিজনেস বাংলাদেশ: ব্যাংকের আমাদানি ও রপ্তানির পরিমাণ কত ?

আরিফ কাদরী : ব্যাংকের আমদানি হলো ৩ হাজার ৮৩২ মিলিয়ন ডলার। রপ্তানির পরিমাণ হলো ৩২ হাজার ৪৮ কোটি মিলিয়ন ডলার। সামনে আমদানি ও রপ্তানির পরিমাণ আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। তবে রপ্তানিমুখী পণ্যে ইউসিবি ব্যাংক বিনিয়োগে আগ্রহ বেশি।

বিজনেস বাংলাদেশ: প্রান্তিক মানুষের জন্য ক্ষুদ ঋণ দিতে অনেক ব্যাংক তেমন আগ্রহ দেখায় না, সেক্ষেত্রে আপনার ব্যাংকের অবস্থা কী?

আরিফ কাদরী : কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে এমন সবখাতেই ঋণ দিচ্ছি। মূলত যেখানে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়, অর্থনৈতিক অবদান আছে এবং কটেজ, মাইক্রো ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ঋণ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করি। আমাদের বিতরণকৃত ঋণের সিংহভাগই শিল্প খাতে। ইউসিবি সব সময় রিটেইল এবং এসএমই ঋণের প্রতি আগ্রহ ছিল। আর এখন সেটাকে আরও বাড়ানো হয়েছে। আগে ঋণের ৩৫ শতাংশ ঋণ দেয়া হতো রিটেইল এবং এসএমই খাতে। এখন সেটাকে বাড়িয়ে ৪০ শতাংশ করা হয়েছে। সারাদেশে ৬০ হাজারেরও অধিক কৃষককে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কৃষি খাতে ঋণ দিচ্ছে ইউসিবি ব্যাংক।

বিজনেস বাংলাদেশ: কৃষি ঋণের লক্ষ্যমাত্রা কত এবং বিতরণ করেছেন কত?

আরিফ কাদরী: এখন বরাবরই লক্ষমাত্রার চেয়ে কৃষিতে বেশি ঋণ দিয়ে থাকি। প্রতিবছর যে লক্ষমাত্রা থাকে তার চেয়ে অনেক বেশি কৃষিখাতে ঋণ দেয়া থাকে। ২০২২-২৩ সালে লক্ষমাত্রা ছিল ৭৭৬ কোটি দেয়া হয়েছে ৮৬০ কোটি টাকা। ২০২৩-২৪ সালের লক্ষমাত্রা ১ হাজার ১৯ কোটি এ পর্যন্ত দেয়া হয়েছে ৯৫৯ কোটি। এখনো যে সময় রয়েছে তাতে লক্ষমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।

বিজনেস বাংলাদেশ: ডলার সংকট কাটাতে কী পদক্ষেপ নিয়েছেন?

আরিফ কাদরী: ব্যাংকের আমদানি হলো ৩ হাজার ৮৩২ মিলিযন ডলার। রপ্তানির পরিমাণ হলো ৩২ হাজার ৪৮ মিলিয়ন ডলারের মত। ২০২৩ সালে রেমিটেন্সের পরিমাণ আসছে ৫০১ মিলিয়ন। ২০২৪ সালের এ পর্যন্ত আসছে ১২৫ মিলিয়ন। তাই ডলারে তেমন সংকটে পড়তে হয়নি। রপ্তানি ও রেমিটেন্সের আয়ের অর্থ দিয়েই ডলার ব্যায়ের চাহিদার যোগান দিতে পেরেছি। প্রযোজন অনুযায়ী এলসি খুলতে তেমন কোন সমস্যা হয়নি।

বিজনেস বাংলাদেশ: ব্যাংকের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
আরিফ কাদরী : খেলাপি ঋণ কমানোর পাশাপাশি গ্রাহকের উন্নত সেবা নিশ্চিত করা। দেশের আর্থ সামাজিক উন্নয়নে ইউসিবি ব্যাংকের অবদান আরও ত্বরান্বিত করা। ঋণ পুনঃরুদ্ধার নিশ্চিত করার জন্য ঋণ হিসাব পর্যবেক্ষণ পদ্ধতিকে আরও জোরালো করা। ব্যবস্থাপনা পর্ষদের সিদ্ধান্ত এবং বিধি সহজতর করার জন্য সঠিক এবং সময়োপযোগী তথ্য ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি (এমআইএস) নিশ্চিত করা। বড় খেলাপী ঋণ সম্পূর্ণ সমন্বয়ের জন্য অগ্রাধিকার নির্ধারণ এবং কার্যক্রম ত্বরান্বিত করা। ঋণ পুনঃরুদ্ধারের সম্ভাবনাকে আরও বৃদ্ধি করার জন্য উপযুক্ত ক্ষেত্রে আইনি পদক্ষেপের সূচনা করা। এছাড়া রিটেইল, এসএমই এবং কার্ড বিভাগ উচ্চ ফোকাস পাবে এবং সেগমেন্টগুলোর বৃদ্ধি করপোরেট বিভাগে বৃদ্ধির চেয়ে বেশি হবে।

বিজনেস বাংলাদেশ: ব্যাংকিং খাতে বর্তমানে কি ধরণের চ্যালেঞ্জ রয়েছে?
আরিফ কাদরী : ব্যাংক খাতে বেশকিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। তার মধ্যে ব্যাংক খাতে আমানত সংগ্রহের পাশাপাশি মুনাফা অর্জন এখন একটা বড় চ্যালেঞ্জ। এছাড়া ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ আদায় করাও একটা বড় চ্যালেঞ্জ। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক খেলাপি আদায় ঋণ আদায় করতে বেশ কিছু পলিসি দিয়েছে। এটা বড় কাজে লাগবে খেলাপি ঋণ আদায়ে। আশা করছি, সামনে খেলাপি ঋণ কমে যাবে। খেলাপি ঋণ কমলে দেশের অথনৈতিক অবস্থা অনেক পরিবর্তন হবে।