[ অনলাইন ] 16/06/2024
 
মৃত্যুর পর ঋণ নিলেন ১৪ জন!
পটুয়াখালীর বাউফলের সূর্যমনী ইউনিয়নের কালিকাপুর গ্রামের আহম্মদ আলী হাওলাদারের ছেলে জয়নাল হাওলাদার মারা গেছে ১৯৬৯ সালে। মৃত্যুর ৪৫ বছর পর তার নামে ২০১৪ সালে ৫০ হাজার টাকার কৃষিঋণ তোলা হয়েছে পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের কেশবপুর শাখা থেকে।

কথা হয় জয়নাল হাওলাদের ছেলে অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য মো. আবুল বাশারের (৬৪) সঙ্গে। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ২০২০ সালে আমার মৃত বাবার নামে কৃষি ব্যাংকের একটি নোটিশ পাই। তিনি নাকি ২০১৪ সালে ৫০ হাজার টাকা লোন এনেছেন। অথচ আমার বাবার মৃত্যু হয়েছে ১৯৬৯ সালে। তাহলে তিনি কীভাবে ২০১৪ সালে লোন আনলেন? এটি চিন্তার বিষয়। কী করে মৃত ব্যক্তির নামে লোন হয়? এখানে জালিয়াতি করা হয়েছে। সরকারে কাছে আমার অনুরোধ এ বিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হোক।

এ ছাড়া কৃষি ব্যাংকের কেশবপুর শাখা থেকে স্বাধীনতার আগে মারা যাওয়া অন্তত চারজনসহ মোট ১৪ জনকে এমন নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তাদের নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে ২০১৪ সালে বিভিন্ন পরিমাণে ব্যাংক থেকে ঋণ উত্তোলন করা হয়েছে। কারও কারও নামে একাধিক ঋণ উত্তোলন দেখানো হয়েছে। আবার কেউ কখনো ব্যাংকেই যাননি। ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের মধ্যে ১২ জনের বাড়ি উপজেলার সূর্য্যমনি ইউনিয়নের কালিকাপুর গ্রামে।

ব্যাংকের নোটিশ অনুযায়ী জানা যায়, বাউফলের সূর্য্যমনি ইউনিয়নের কালিকাপুর গ্রামের কেতাব উদ্দিন হাওলাদারের তিন ছেলে জবেদ আলী, হযরত আলী ও রহম আলী ২০১৪ সালে ওই শাখা থেকে কৃষিঋণ নিয়েছেন। তাদের মধ্যে জবেদ আলীর নামে ২৫ ও ৩০ হাজার টাকার দুটি, হযরত আলীর নামে ৪৫ হাজার ও রহম আলীর নামে ৫০ হাজার টাকার ঋণ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু জবেদ আলী ১৯৬০, হযরত আলী ১৯৬৩ ও রহম আলী ১৯৬৬ সালে মারা যান।

জবেদ আলীর নাতি বজলু হাওলাদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘প্রথমে ব্যাংকের নোটিশগুলো আমি পেয়েছি। পাওয়ার পর দেখি নোটিশগুলো আমার দাদা, তালই এর নামে। আমার দাদারা মারে গেছে সেই পাকিস্তান আমলে, আমরা কেউ দেখিনি। এই ব্যাংকের নোটিশ দেখে আমরা হতভম্ব। ২০২০ সালে নোটিশ পাওয়ার পর চার বছরে অসংখ্যবার ব্যাংকে গেলেও ব্যাংক কর্মকর্তারা কোনো আশা-ভরসা দিচ্ছে না।’
হযরত আলী হাওলাদারের নাতি ফকরুল ইসলাম বলেন, ১৯৬৬ সালে আমার জন্ম। আমি আমার দাদাকে দেখিনি, এমনকি আমার বড় ভাইও দেখেনি। তবে এই লোন ২০১৪ সালে হয়েছে। ২০২০ সালে নোটিশ পেয়ে আমরা অবগত হয়েছি। তারপরের চার বছর যাবত আমরা ব্যাংকে যাই, কিন্তু এর কোনো সমাধান পাচ্ছি না।

সাধারণত বিধি অনুযায়ী কোনো ঋণ অনুমোদনের আগে ব্যাংকের একজন মাঠ কর্মকর্তা ঋণগ্রহীতা ব্যক্তি ও তার কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করেন। সবকিছু ঠিক থাকলে তিনি শাখা ব্যবস্থাপকের কাছে ঋণের ব্যাপারে সুপারিশ করে থাকেন। ব্যবস্থাপক আবার যাচাই-বাছাই করে ঋণগ্রহীতার উপস্থিতিতে স্বাক্ষর বা টিপসই নিয়ে ঋণ অনুমোদন করেন।

এ ব্যাপারে কৃষি ব্যাংকের কেশবপুর শাখার বর্তমান ব্যবস্থাপক হুসাইন মো. তাইফ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ২০১৪ সালে নুর হোসেন নামের একজন ব্যবস্থাপক ছিলেন এবং মাঠ কর্মকতা ছিলেন মো. শফিউর রহমান। ঘটনাটি ঘটেছে ২০১৪ সালে আর আমি এই শাখায় যোগদান করেছি চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে। গত সপ্তাহে অভিযোগের ভিত্তিতে বিষয়টি আমি জানতে পেরেছি। এরপরই অনুসন্ধান শুরু করেছি। ওই সময়ে যারা কর্মরত ছিলেন তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তাদের বক্তব্য গ্রহণ করার জন্য তাদেরকে শাখায় তলব করা হয়েছে। বিষয়টি এখন অনুসন্ধান পর্যায়ে রয়েছে।

২০১৪ সালে কেশবপুর শাখার মাঠ কর্মকর্তা ছিলেন মো. শফিউর রহমান। তিনি ২০১৯ সালে অবসরে গেছেন। এ বিষয়ে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও যোগাযোগ সম্ভব হয়নি।

এ বিষয়ে কৃষি ব্যাংকের পটুয়াখালীর মুখ্য আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক আশফাকুর রহমান জানান, বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।