[ অনলাইন ] 08/09/2024
 
নিরাপত্তা সঞ্চিতির ঝুঁকিতে ৯ ব্যাংক
দেশের ব্যাংকিং খাত খেলাপি ঋণে বেসামাল হয়ে পড়েছে। এতে গত জুন শেষে খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ১১ হাজার ৩৯২ কোটি টাকা। এই খেলাপি ঋণের বিপরীতে গ্রাহকের নিরাপত্তার নির্ধারিত প্রভিশন (নিরাপত্তা সঞ্চিতি) রাখতে পারছে না কিছু ব্যাংক। তার মধ্যে ৯টি ব্যাংকের সঞ্চিতি ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৩১ হাজার ৫২০ কোটি টাকা। তবে অধিকাংশ ব্যাংক উদ্বৃত্ত সঞ্চিতি রাখায় মোট ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২৪ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। আর ৪৪টি বেসরকারি ব্যাংকের মধ্যে ১ হাজার ৪৭১ কোটি টাকা ঘাটতি নিয়ে শীর্ষে অবস্থান করছে ন্যাশনাল ব্যাংক। সঞ্চিতির ঘাটতিতে থাকা ব্যাংকগুলোর আমানতকারীরা ঝুঁকিতে রয়েছেন বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য বলছে, জুন শেষে দেশের ৯টি ব্যাংকের মোট সঞ্চিতি ঘাটতির পরিমাণ ৩১ হাজার ৫২০ কোটি টাকা। তবে কিছু ব্যাংকের উদ্বৃত্তের কারণে ব্যাংক খাতে সার্বিক ঘাটতি কমে দাঁড়িয়েছে ২৪ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। তবে এই ঘাটতির পরিমাণ গত ডিসেম্বরে ছিল ১৯ হাজার ২৬১ কোটি টাকা। সেই হিসাবে ৬ মাসের ব্যবধানে প্রভিশন ঘাটতি বেড়েছে ৫ হাজার ৫৪৮ কোটি টাকা।

এ বিষয়ে বিশ্ব ব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, নিট লাভের বিপরীতে সাধারণত ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দেওয়া হয়। কিন্তু সেই লাভ থেকে যদি প্রভিশন সংরক্ষণ করা হয়, তখন লভ্যাংশের পরিমাণ কমে আসে। সে জন্য কোনো কোনো ব্যাংক অধিক মুনাফার লক্ষ্যে প্রভিশন রাখতে চায় না। কিন্তু প্রভিশন না রাখলে আমানতকারীদের ঝুঁকি বাড়ে। এ ঝুঁকি এড়াতেই ব্যাংকগুলোর জন্য প্রভিশন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, সরকারি ব্যাংকের ঘাটতির তালিকায় শীর্ষে থাকা অগ্রণী ব্যাংকের ঘাটতির পরিমাণ ৫ হাজার ৩১২ কোটি টাকা। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংক। ব্যাংকটির ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ২৪১ কোটি টাকা। রূপালী ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি ৪ হাজার ৪০১ কোটি টাকা। এদিকে বেসরকারি খাতের মধ্যে ন্যাশনাল ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি ১ হাজার ৪৭১ কোটি টাকা, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের ৪৪৩ কোটি টাকা, ঢাকা ব্যাংকের ৩২৭ কোটি টাকা, আইএফআইসি ব্যাংকের ৫০৫ কোটি টাকা, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের ৩৯১ কোটি টাকা এবং আরও একটি ব্যাংকের ১৯৮ কোটি টাকা প্রভিশন ঘাটতি রয়েছে।

ব্যাংকিং বিধিমালা অনুযায়ী, ব্যাংকগুলোকে পরিচালন মুনাফার শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশ প্রভিশন রাখতে হয়। নিম্নমানের খেলাপির ২০ শতাংশ, সন্দেহজনক খেলাপির বিপরীতে ৫০ শতাংশ এবং মন্দ ঋণের বিপরীতে ১০০ শতাংশ সঞ্চিতি রাখতে হয়।

এ বিষয় বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক বলেন, অনেক ব্যাংক আগ্রাসী কায়দায় ঋণ দিয়ে আদায় করতে হিমশিম খাচ্ছে। ঋণ আদায় কম হওয়ায় তারল্যসংকট দেখা দিয়েছে বিভিন্ন ব্যাংকে। আবার কিছু ব্যাংক খেলাপি ঋণের বিপরীতে নিরাপত্তা সঞ্চিতি রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ওই সব ব্যাংককে তাগাদা দিচ্ছে। তবে বারবার সুযোগ পাওয়ার পরেও যদি কোনো ব্যাংক সঞ্চিতি রক্ষায় ব্যর্থ হয়, তবে ব্যবস্থা নেবে বাংলাদেশ ব্যাংক।