[ অনলাইন ] 05/10/2024
 
ক্ষুদ্র ঋণগ্রহীতা নিয়েছে ২২ শতাংশ ঋণ
দেশের অর্থনীতি সচল রাখতে ছোট উদ্যোক্তাদের বড় অবদান রয়েছে। ক্ষুদ্র ঋণগ্রহীতাদের মধ্যে ঋণ পরিশোধের হারও সবচেয়ে বেশি বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। অতিক্ষুদ্র্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি গ্রাহকদের কাছে রয়েছে ২২ শতাংশ ঋণ। নতুন ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণের প্রয়োজন হয়।
তাদের মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে দুই লাখ তিন হাজার ৯৩ কোটি টাকা।

এর বাইরে কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ নেন মধ্যম আয়ের চাকরিজীবীরা। তাঁরা বাড়ি ও গাড়ির জন্য ঋণ নিয়ে থাকেন। এই শ্রেণীর গ্রাহকরা ৫.৬৩ শতাংশ ঋণ নিয়েছেন।

তাঁদের নেওয়া মোট ঋণের পরিমাণ ৮৯ হাজার ৮৪৪ কোটি টাকা। এক কোটি টাকার ওপরে ঋণ নিয়েছেন এমন গ্রাহকের সংখ্যা এক লাখ ৫২ হাজার ৫৯০ জন। তাঁদের হাতে রয়েছে বিতরণকৃত মোট ঋণের ৭৭.৮০ শতাংশ। টাকার অঙ্কে যার পরিমাণ ১২ লাখ ৪২ হাজার ৬৮২ কোটি টাকা।

ব্যাংকের লাখ টাকার নিচের আমানত জমাকারী ও ঋণগ্রহীতাদের সাধারণত নিম্ন আয়ের মানুষ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষক, মুটে, মজুর, দোকানদারের খুব বেশি ঋণের প্রয়োজন হয় না। তাঁরা কখনো ৫০ হাজার, এক লাখ বা ব্যবসাভেদে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত ব্যাংকঋণ গ্রহণ করেন।

চলতি বছরের জুন শেষে নিম্ন আয়ের মানুষ বা লাখ টাকার নিচের ঋণগ্রহীতারা ঋণ নিয়েছেন ১.৭৫ শতাংশ। এসব গ্রাহকের নেওয়া মোট ঋণের পরিমাণ ৩২ হাজার ৭৩৬ কোটি টাকা।

অতিক্ষুদ্র উদ্যোক্তা বা এক থেকে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত নেওয়া গ্রাহকদের ঋণের পরিমাণ ৪.৫৮ শতাংশ। এসব গ্রাহকের নেওয়া মোট ঋণের পরিমাণ ৭৩ হাজার ২৬৮ কোটি টাকা। আর নতুন ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণের প্রয়োজন হয়।

ব্যাংক এশিয়ার সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও এসএমই ঋণ বিশেষজ্ঞ আরফান আলী বলেন, ‘ব্যাংকগুলো গ্রামাঞ্চলে ঋণ বিতরণের সক্ষমতা তৈরি করতে পারেনি। ক্ষুদ্রঋণ বিতরণে খরচ বেশি হওয়ায় ব্যাংকগুলো বরাবরের মতোই এই খাত থেকে সরে আসে। এতে গ্রামের মানুষ বেশি সুদে এমআরএ প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে ঋণ নিতে বাধ্য হচ্ছে। অথচ ব্যাংকগুলো এগিয়ে এলে কৃষক স্বল্প খরচে ঋণ নিতে পারতেন। এতে তাঁদের উৎপাদন খরচও কমত। এ কথা ঠিক যে গ্রামে ঋণ বিতরণে খরচ কিছুটা বেশি হয়। কিন্তু ব্যাংকগুলোর তো সামাজিক দায়বদ্ধতা থাকা উচিত।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন শেষে ব্যাংক খাতের আমানতকারীর সংখ্যা ১৫ কোটি ৮৪ লাখ ৭৭ হাজার ৫২৩ জন। তাঁদের হিসাবে জমাকৃত টাকার পরিমাণ ১৮ লাখ ৩৮ হাজার ৮৩ কোটি। একই সময়ে ১৫ লাখ ৯৭ হাজার ১০১ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করেছে ব্যাংকগুলো। এই ঋণ গ্রহণ করেছেন এক কোটি ২৬ লাখ ৫৭ হাজার ৩৯৬ জন। অর্থাৎ ১২ জনের জমাকৃত টাকা ভোগ করছেন মাত্র একজন। এটা ছিল সার্বিক হিসাব। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ব্যাংকঋণের বেশির ভাগই ভোগ করছেন কোটিপতি গ্রাহকরা। প্রায় ৭৮ শতাংশ ঋণ দখলে রেখেছেন দেশের কোটিপতি ঋণগ্রহীতারা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত জুন পর্যন্ত তিন হাজার ৮০৬ জন গ্রাহক ব্যাংক খাতের মোট ঋণের ২৭.৬৯ শতাংশ দখলে নিয়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ৫০ কোটি টাকার বেশি নেওয়া ঋণগ্রহীতাদের মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে চার লাখ ৪২ হাজার ১৮৪ কোটি টাকা। ২০ কোটি টাকার ওপরে ঋণ নিয়েছেন এমন গ্রাহকের সংখ্যা ১১ হাজার ৪৮৩ জন। তাঁদের  কাছে আছে ছয় লাখ ৮৩ হাজার ৮৪৭ কোটি টাকা, যা ব্যাংক খাতের মাধ্যমে বিতরণকৃত মোট ঋণের ৪২.৮২ শতাংশ। ৫ কোটি টাকার বেশি ঋণ বিতরণ করা হয়েছে, এমন গ্রাহকের সংখ্যা ৪৩ হাজার ৭৯৭ জন। তাঁদের কাছে বিতরণ করা হয়েছে ৯ লাখ ৮৪ হাজার ৬৪১ কোটি টাকা। হিসাব অনুযায়ী, ব্যাংকের মোট ঋণের ৬১.৬৫ শতাংশ রয়েছে এসব গ্রাহকের কাছে।