রাজধানী ঢাকার পশ্চিমাংশে নগর সম্প্রসারণের জন্য বছিলা এলাকা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তবে গত এক দশক আগেও অবহেলিত এলাকা হিসেবে সবার কাছে পরিচিত ছিল বসিলা। বছরের পর বছরে গড়ে উঠেছে নাগরিক সেবাবিহীন নতুন নতুন আবাসিক এলাকা। অপরিকল্পিত ভাবে নিয়মনীতি বিহীন নির্মাণের মধ্যদিয়ে সম্প্রসারিত হয়ে গড়ে উঠেছে এক নতুন জনপদ।
এলাকাবাসীর জীবনযাত্রায় এর বিরূপ প্রভাব পড়লেও কেউ এগিয়ে আসেনি সমস্যা সমাধানের জন্য। বিভিন্ন সেবাসংস্থার লোকজনের অবৈধ উপার্জনের ‘সোনারডিম পাড়া হাঁস’এর দিকে এত দিনে দৃষ্টি পড়েছে মহানগরীর নিয়ন্ত্রকদের। এতদিনে ভবন নির্মাণসহ সব কিছু পরিকল্পিতভাবে গড়তে চাচ্ছেন রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ রাজউক ও ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি)।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উত্তর সিটির ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তুর্ভুক্ত এই বছিলা এক সময় বুড়িগঙ্গা নদী আর বিল মিলিয়ে ছিল অনেকটা দ্বীপের মতো। তবে এখন সেই অবহেলিত চিত্রের বদলে নতুন নতুন আবাসিক এলাকাই দেখা মিলছে। ফলে অনেকটাই বদলে গেছে পুরো বসিলা এলাকা। অন্যান্য এলাকা থেকে বাসা ভাড়া কম থাকায় অনেকের কাছে এলাকাটি দিন দিন প্রিয় হয়ে উঠেছে।
উন্নয়নের ছোঁয়ায় বদলে যাওয়া বসিলা ঢাকা মহানগর বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) এর আওতায় মধ্যে রয়েছে। ফলে এই বসিলা এলাকা নগর সম্প্রসারণে আগের থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বসিলাকে কেন্দ্র করে নানা পরিকল্পনাও রয়েছে উত্তর সিটি ও রাজউকের।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বছরে পর বছর অবহেলিত ছিল এই এলাকাটি। কিন্তু গত কয়েক বছর আগে ডিএনসিসির পক্ষ থেকে নাগরিক সুবিধায় পিছিয়ে থাকা বছিলায় সড়কবাতির খুঁটি ও নতুন বাতি লাগানো হয়েছে। এছাড়া সড়কে পানিনিষ্কাশনের নালা তৈরি ও সড়ক সংস্কার, বাসাবাড়ি থেকে সংগ্রহ করা ময়লা-আবর্জনা ফেলার জন্য একটি সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন (এসটিএস) স্থাপন করা হয়েছে। দক্ষিণপাড়ার ২৪০ মিটার সড়কে পানিনিষ্কাশনের নালা তৈরি করা হয়েছে। সংস্কার করা হয়েছে বুদ্ধিজীবী সেতুর নিচ দিয়ে বছিলায় প্রবেশের ভাঙ্গাচোরা প্রধান সড়কসহ ভেতরের প্রায় সব কয়টি সড়ক। ফলে স্থানীয় বাসিন্দারা এখানে স্বাচ্ছন্দে বসবাস করতে পারছেন। তবে অধিকাংশ আবাসিক এলাকায় খেলার মাঠ না থাকায় স্থানীয় কিশোররা ঠিকমত খেলাধূলা করতে পারছে না বলে তারা অভিযোগ করেছেন। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নজর দেয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।
খোঁজ নিয়ে আরো জানা গেছে, বেড়িবাঁধ চৌরাস্তা থেকে শহীদ বুদ্ধিজীবী সেতু পর্যন্ত বুড়িগঙ্গাপাড়ের এলাকাটি সবার কাছে এখন বছিলা নামেই পরিচিত। এছাড়া শহীদ বুদ্ধিজীবী সেতটিু বছিলা ব্রিজ নামেই সবাই চেনে। এই সেতুর কারণে মোহাম্মদপুরের সঙ্গে কেরানীগঞ্জের যোগাযোগ আরো সহজ হয়েছে।
মূলত এই সেতু আর বেড়িবাঁধ চৌরাস্তা থেকে শুরু হওয়া সংযোগ সড়কটিই বছিলার চিত্র পাল্টেছে। সেতু নির্মাণের পরই এলাকাটি বিভিন্ন বেসরকারি আবাসন কোম্পানির নজরে আসে। বর্তমানে বেড়িবাঁধ চৌরাস্তা থেকে সেতু পর্যন্ত সড়কের দুই পাশের নিম্নভূমি ভরাট করে গড়ে তোলা হয়েছে প্রায় ১৩ টি আবাসিক এলাকা। এ ছাড়া সেতুর নিচে দুই পাশে বছিলার আদি বসতিস্থল দক্ষিণপাড়া, উত্তরপাড়া ও মধ্যপাড়াতেও লেগেছে নগরজীবনের ছোঁয়া। ফলে নতুন বাসিন্দাদের সাথে আদি বাসিন্দারাও খুব খুশি। তারা বলছেন আমাদের ধারনা ছিলনা অবহেলিত এই এলাকাটি আজ এতো উন্নতি হবে। তবে ধীরে ধীরে অন্যান্য এলাকার মতই ঘনবসতি হয়ে উঠছে এ এলাকাটি। ফলে জমি ও ফ্ল্যাটের দামও আগের চেয়ে বেড়েছে। তার সাথে সাথে বাড়ছে বাসা ভাড়াও। তবুও স্থানীয় বাসিন্দারা খুশি। কারণ ঢাকার মধ্যে এই এলাকাতেই বাসাভাড়া একটু কম।
জানা গেছে, যে গতিতে এই এলাকার পরিবর্তনগুলো হয়েছে, তা আগে বাসিন্দারা কল্পনাও করেনি। অথচ কয়েক বছর আগেও এখানকার যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম ছিল নৌকা। বুড়িগঙ্গা থেকে রায়েরবাজার খাল ধরে মোহাম্মদপুরে যেতে হতো। এখন চিত্র পাল্টে যাওয়ায় এগুলো কিছুই বোঝার উপায় নেই। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এই এলাকার সড়কগুলো আগে খানাখন্দে ভরপুর ছিল।
এখন সব সড়কেই উন্নয়নের ছোঁয়া লাগাতে সব চিত্র পাল্টে গেছে। এছাড়া, সড়কবাতি বসায় এলাকায় যাতায়াতে অনেক সুবিধা হয়েছে। সন্ধ্যার পর গলির ভেতর আলোকিত হওয়ায় এলাকার নিরাপত্তাও বেড়েছে। তবে বছিলায় নানা অবকাঠামোগত উন্নয়ন কিংবা নাগরিক সুবিধার সম্প্রসারণ হলেও এলাকার মানুষের মধ্যে কিছুটা আক্ষেপ রয়ে গেছে। নবিউল হক নামের এক বাসিন্দা বলেন, এলাকার চিত্র পাল্টেছে ঠিকই। কিন্তু অধিকাংশ আবাসিক এলাকায় খেলার মাঠ নেই। দ্রুত মাঠের ব্যবস্থা করলে আমাদের ছেলে মেয়েরা স্বাচ্ছন্দে খেলাধূলা করতে পারবে। রাজউকের নগর পরিকল্পবিদ আশরাফুল ইসলাম বলেন, ঢাকার পশ্চিমাংশে নগর সম্প্রসারণের জন্য বছিলা এলাকাটি আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। ফলে এই এলাকায় যাতে সব কিছুই পরিকল্পিত উপায়ে হয় সে বিষয়ে নজর রাখা হচ্ছে। এলাকাটি পরিবল্পিতভাবে গড়ে না উঠলে ভবিষ্যতে এর জন্য মূল্য দিতে হবে।