[ Online ] 24/11/2024 |
|
|
|
মাদক ইন্সপেক্টরের এত সম্পদ!
|
|
মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের রমনা সার্কেলের ইন্সপেক্টর (সাময়িক বরখাস্ত) এ কে এম কামরুল ইসলাম ও তার স্ত্রী |
মতলু মল্লিক
মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের রমনা সার্কেলের ইন্সপেক্টর (সাময়িক বরখাস্ত) এ কে এম কামরুল ইসলামের নামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ সম্পদ থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। অবৈধ উপায়ে স্ত্রী ও শ্যালিকাসহ (স্ত্রীর বোন) বিভিন্ন জনের নামে শতকোটি টাকার সম্পদ গড়েছেন তিনি। এর মধ্যে রাজধানীতে বিলাসবহুল ফ্ল্যাট, প্লট, একাধিক কার-মাইক্রোবাস, ৫০ ভরি স্বর্ণালংকার, একাধিক জীবন বিমা ও ৩০ লাখ টাকার পারিবারিক সঞ্চয়পত্র, বিভিন্ন কোম্পানিতে ব্যবসায়িক শেয়ার এবং কয়েকটি অ্যাকাউন্টে শতকোটি টাকার লেনদেনের প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে একেএম কামরুল ও তার স্ত্রী ফাতেমাতুজ জোহরার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় ইতোমধ্যে আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছেন দুদকের পরিচালক মোনায়েম হোসেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জানান, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে রাজধানীর রমনা সার্কেলের পরিদশর্কের দায়িত্ব পালনের সময় ঘুষ-দুর্নীতি ও মাদকের ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হয়ে অবৈধ উপায়ে কোটি কোটি টাকার সম্পদ অর্জন করেন এ কে এম কামরুল ইসলাম। মাদক নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকার পরও মাদক ব্যবসায় যুক্ত হয়ে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে রাজধানীর ৭ জন পরিদর্শকের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ওই বছর অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। অনুসন্ধানের অভিযোগের সত্যতা পেয়ে কামরুলের বিরুদ্ধে ২০২০ সালে ১২ আগস্ট মামলা করা হয়। তদন্তে দালিলিক তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে সেই সময়ই অভিযোগের সত্যতার প্রমাণ পাওয়া যায়। কিন্তু সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের প্রভাবে চার্জশিট দাখিল করতে পারেননি তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। গত ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর কামরুল ইসলাম ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট জমা দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, অবৈধ উপায়ে অর্জিত টাকায় কামরুল ইসলাম ও তার স্ত্রী রাজধানীর ৪১ চামেলীবাগের ‘গ্রীন পিস’ নামের ১৮ তলা ভবনে কার পার্কিংসহ এল-১৩ নম্বরের ১৫০০ স্কয়ার ফুট, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে তিন কাঠার প্লট, একটি বিলাসবহুল নোয়া মাইক্রোবাস কিনেছেন। এছাড়া তাদের ৫০ ভরি স্বর্ণালংকার, শান্তিনগর পোস্ট অফিসে ৩০ লাখ টাকার পারিবারিক সঞ্চয়পত্র, আমেরিকান ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে বার্ষিক কিস্তি ৮২ হাজার ৫১২ টাকা এবং ৪৪ হাজার ৩১০ টাকার ১০ বছর মেয়াদি দুইটি জীবন বিমা রয়েছে। ২০১০ সাল থেকে কয়েকটি কোম্পানিতে অন্তত ৫০ লাখ টাকার শেয়ার রয়েছে।
শুধু তাই নয়, কামরুল ইসলামের অবৈধ আয়কে বৈধ করার পূর্বপরিকল্পনায় প্রায় সব অর্থসম্পদ ভোগদখলে রাখেন তার স্ত্রী ফাতেমাতুজ জোহরা ও জোহরার বড় বোন সাবিনা ইয়াসমিন শিউলী। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ফাতেমাতুজ জোহরা এবং সাবিনা ইয়াসমিনের নামে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের মালিবাগ শাখায় ০১৭৪১২২০০০০০২৭৬ ও ০১৭৪১২২০০০০১১০১ এবং অগ্রণী ব্যাংক মৌচাক শাখার ০৯৬৪৩৪০১২১৭৯ নম্বর সঞ্চয়ী অ্যাকাউন্টে বিভিন্ন সময়ে প্রায় শতকোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। এরমধ্যে ০৯৬৪৩৪০১২১৭৯ নম্বর অ্যাকাউন্ট থেকে আমিন মোহাম্মদ ফাউন্ডেশন ও ইস্ট ওয়েস্ট প্রপার্টিজকে বিভিন্ন সময়ে অন্তত ১৫ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। ০১৭৪১২২০০০০০২৭৬ নম্বর অ্যাকাউন্ট থেকে ২০১০ থেকে ২০২০ সালের ২৩ মার্চ পর্যন্ত ২ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। ০১৭৪১২২০০০০১১০১ অ্যাকাউন্ট থেকে একই সময়ে সাড়ে ৩ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে।
খবরের কাগজের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
কামরুল ইসলাম নিজে একই মোবাইল নম্বর বিভিন্ন ব্যক্তির নাম ব্যবহার করে এসব অ্যাকাউন্টে নিয়মিত কোটি কোটি টাকা জমা করেছেন বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে।
দুদকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা খবরের কাগজকে জানান, আইনগত বিষয় যুক্ত থাকায় বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় থাকা একাধিক প্লট ও ফ্ল্যাটের বিষয়টি মামলায় যুক্ত করা যায়নি। তবে, মামলার বিচারের সময় অধিকতর তদন্তের আবেদন করা হতে পারে। এ জন্য কমিশনের অনুমতির প্রয়োজন হবে। কমিশন পুনর্গঠন হলে এ বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হবে।
এদিকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, কামরুল ইসলামকে রাজধানীর রমনা সার্কেল থেকে বদলি করে বান্দরবান জেলায় পাঠানো হয়েছিল। সেখানে থাকা অবস্থায় তাকে গত এপ্রিল মাসে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ব্যাপারে কামরুল ইসলামকে একাধিকবার মোবাইলে ফোন করা হলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। |
|