[ অনলাইন ] 03/12/2024 |
|
|
|
বাবার পেনশনের টাকা তুলতে ব্যাংকে ধরনা ছেলের
|
|
|
> ব্যাংকের লুকায়িত শর্ত > কথা বললে টাকা পেতে সমস্যা হবে! > কর্মকর্তা সাজলেন গ্রাহক > বাবার পেনশনের টাকা নিতে ব্যাংকে ধরনা ছেলের
নিহার সরকার অংকুর :
টাকা তুলতে না পেরে সবুজ (ছদ্মনাম) দাঁড়িয়ে আছে ন্যাশনাল ব্যাংকের ইস্কাটন শাখার সামনে। ছোট ভাইয়ের বিশ্ববিদ্যালয়ের ফি দিতে হবে লাখ টাকা। জমা দেওয়ার শেষ সময়ও যাচ্ছে চলে কিন্তু টাকা তোলা যাচ্ছে না। যে টাকা না পেলে বিশ্ববিদ্যালয়েও বাড়বে জরিমানার পরিমাণ। কিন্তু নিজের টাকার পরিমাণ বাড়বে না উল্টো রয়েছে না পাওয়ার ভয়।
সরেজমিনে ঘুরে একই চিত্র দেখা গেছে রাজধানীর ন্যাশনাল ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের বিভিন্ন শাখায়। এসময় ব্যাংকের কাউন্টারগুলো ছিলো গ্রাহকশূন্য ।
‘লেনদেন স্বাভাবিক হয়ে গেছে। টাকা তুলতে পারছে এবং রাখতে পারছে। আমার সামনেই রয়েছেন একজন গ্রাহক উনাকেই জিজ্ঞেস করুন’ এমন মন্তব্য ন্যাশনাল ব্যাংকের নিউ ইস্কাটন শাখার ম্যানেজার ও ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. নজরুল ইসলাম। যদিও সেই ব্যক্তি বক্তব্য দিতে অস্বীকৃত জানিয়েছেন।
তবে অন্য আরেক গ্রাহক সবুজ (ছদ্মনাম) দেশ রূপান্তরকে বলেন, নিজের টাকা নিজে নিতেও ঘুরতে হচ্ছে। বলে টাকা নেই। ভাইয়ের বিশ্ববিদ্যালয়ে টাকা দিতে পারছি না। বাবা অবসরে গেছেন। আমিও খুব সামান্য বেতনে চাকরি করি। ভাইয়ের জন্য বাবার রাখা এই টাকাতেই চলে পড়াশোনা। এখন কীভাবে এই টাকা পাবো বুঝতে পারছি না। ঘুরতে ঘুরতে এখন বলছে প্রতিদিন ১০ হাজার করে টাকা তুলতে তাহলে আমার হবে কীভাবে? আমার টাকা আমি তুলবো তাতেও শর্ত?
এক্সিম ব্যাংক কর্মকর্তা গ্রাহক সেজে লেনদেন স্বাভাবিক থাকার কথা বললেও তারই সামনে আরেক গ্রাহক বলে বসলেন কোন কিছুই স্বাভাবিক নয়। এক লাখ টাকা তুলতে গেলে তাকেও ১০ হাজার টাকা নিতে বলা হয়। পরবর্তীতে বিভিন্ন জায়গায় ফোন দিয়ে ৫০ হাজার টাকা উত্তোলনের ব্যবস্থা করেন আরেক ব্যক্তি। যার নাম সোহেল (ছদ্মনাম)। একটু পর ব্যাংক সূত্র জানালেন যিনি লেনদেন স্বাভাবিক থাকার কথা জানিয়েছেন তিনিও ব্যাংকেরই কর্তা।
একই পরিস্থিতি নিউ ইস্কাটনের সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকে। নিজের জমা রাখা টাকাও উঠাতে পারছে না মানুষ। যা নিয়ে ক্ষোভ আর ভয় পাওয়ার দৃশ্যও দেখা গেছে। দুজন ষাটোর্ধ্ব মানুষের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তারা বলেন, বাবা আমাদের বলতে বলো না। পরে টাকা পেতে সমস্যা হবে।
গণমাধ্যম পরিচয় দিলে প্রথমে দুই ব্যাংকের ভেতর প্রবেশেও দেয়া হয় বাধা। বলা হয় ম্যানেজার নেই। যদিও এক পর্যায়ে ম্যানেজার নিজেই কথা বলেছেন। এবং এমন পরিস্থিতিতে মন্তব্য করতে অপারগতা জানান ব্যাংক ম্যানেজার মাসুম ইকবাল।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যাংক ম্যানেজার বলেছেন, কেউ টাকা উত্তোলন করতে চাইলেও বেশ কিছু লুকায়িত শর্ত জুড়ে দেয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠান থেকে। যেখানে গ্রাহক চাইলেও নিজের টাকা উত্তোলন করতে পারবে না।
সরেজমিনে ন্যাশনাল ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ঘুরে একই চিত্র উঠে এসেছে। পরিচয় প্রকাশ না করা শর্তে যার অনেক কিছু স্বীকারও করেছেন তারা।
এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক ৭ প্রতিষ্ঠানের অচলাবস্থা দূর করতে ঋণ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। যার মধ্যে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংককে সাড়ে ৫ হাজার কোটি , এক্সিম ব্যাংককে ৫ হাজার কোটি, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংককে ৪ হাজার কোটি ও ন্যাশনাল ব্যাংককে ৪ হাজার কোটি টাকা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এছাড়া ইউনিয়ন ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক প্রত্যেকে পাবে ২ হাজার কোটি টাকা। |
|