[ অনলাইন ] 26/06/2025 |
 |
|
|
গ্রাহকবান্ধব সেবায় এগিয়ে যাচ্ছে ট্রাস্ট ব্যাংক
|
|
|
দেশের বেসরকারি খাতের অন্যতম নির্ভরযোগ্য ব্যাংক হিসেবে এগিয়ে যাচ্ছে ট্রাস্ট ব্যাংক। পেশাদার ব্যবস্থাপনা, গ্রাহকবান্ধব সেবা এবং প্রযুক্তিনির্ভর উদ্ভাবনের মাধ্যমে ব্যাংকটি ধীরে ধীরে দেশের ব্যাংকিং খাতে একটি আদর্শ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। সশস্ত্র বাহিনী পরিচালিত এ ব্যাংকটি প্রথম থেকেই নির্ভরযোগ্যতা ও নৈতিক ব্যাংকিং নীতিমালার ওপর জোর দিয়েছে। গ্রাহকের আস্থা অর্জনই ব্যাংকটির প্রধান লক্ষ্য—এ লক্ষ্য অর্জনে ট্রাস্ট ব্যাংক দৃঢ় অবস্থানে রয়েছে। ২০২৪ সালে ব্যাংকটি পরিচালন মুনাফা, আমানত বৃদ্ধি এবং খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণ—সবকিছুতেই অগ্রগতি অর্জন করেছে।
ট্রাস্ট ব্যাংকের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, চলতি বছরের মে মাস শেষে ব্যাংকটির মোট আমানত দাঁড়িয়েছে ৪৬ হাজার ৭২৪ কোটি টাকা। আর মোট ঋণের পরিমাণ ৩৭ হাজার ৪৩৯ কোটি টাকা। ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের হার দেশের গড় হারের চেয়ে অনেক কম। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রকাশিত সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ব্যাংকটির মোট খেলাপি ঋণ ২ হাজার ৭৫২ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৭ দশমিক ৫২ শতাংশ। চলতি বছরের মে মাস শেষে ব্যাংকটির গ্রাহকের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১২ লাখ ৪৬ হাজার ৩৯ জন। ১১৯ শাখাবিশিষ্ট ব্যাংকটির এটিএম বুথের সংখ্যা ২৮৭টি। এসব এটিএম বুথে ৭০০ থেকে প্রায় হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত লেনদেন হয়।
ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও আহসান জামান চৌধুরী কালবেলাকে বলেন, ‘আমরা টেকসই ব্যাংকিং, গ্রাহকসেবার গুণগত মান এবং পরিবেশবান্ধব কার্যক্রমকে গুরুত্ব দিয়ে ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত হচ্ছি। আগামীতে ট্রাস্ট ব্যাংক শুধু একটি ব্যাংক নয়, বরং একটি সম্মানজনক ব্র্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাবে—এ লক্ষ্যেই আমরা কাজ করছি।’
ব্যাংকের একাধিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত ব্যাংকটি ১ হাজার ৪৫ জন শিল্পোদ্যোক্তার সঙ্গে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। আর এসএমই খাত শক্তিশালী করতে একই সময়ে ব্যাংকটি এ খাতে ঋণ দিয়েছে ৪ হাজার ৬৮৪ কোটি টাকা। শুধু তা-ই নয়, প্রবাসীদের রেমিট্যান্স সংগ্রহেও ব্যাংকটি ব্যাপক মুনশিয়ানা দেখাচ্ছে। ২০২৪ সালে ব্যাংকটি মোট ১৬ হাজার ৭১৫ কোটি টাকার প্রবাসী আয় সংগ্রহ করেছে। আর চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত সংগ্রহ করেছে ৯ হাজার ১৬৬ কোটি টাকা।
এ ছাড়া আমদানি ও রপ্তানির ক্ষেত্রেও অবদান রয়েছে ট্রাস্ট ব্যাংকের। ২০২৪ সালে ব্যাংকটির মাধ্যমে ১৭ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকার আমদানি হয়েছে। একই সঙ্গে চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত ৭ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা। গত বছর ব্যাংকটির মাধ্যমে রপ্তানি হয়েছে ৮ হাজার ৩৫৮ কোটি টাকা। আর চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত রপ্তানি হয়েছে ৩ হাজার ৪৭০ কোটি টাকা। ব্যাংকটি সর্বশেষ বছর পরিচালন মুনাফা করেছে ১ হাজার ৩৫১ কোটি টাকা।
ব্যাংকাররা বলছেন, সুশাসন, প্রযুক্তি, স্বচ্ছতা ও সামাজিক দায়বদ্ধতার সমন্বয়ে ট্রাস্ট ব্যাংক ধীরে ধীরে এগিয়ে চলেছে একটি শক্তিশালী ও সম্মানজনক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পথে। দেশের অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে এ ব্যাংক যেমন আস্থা তৈরি করেছে, তেমনি উদ্ভাবনী কর্মকৌশলের মাধ্যমে ভবিষ্যতের পথেও নেতৃত্ব দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়ার সঙ্গে ব্যবসায় দিন দিন উন্নতি করছে ট্রাস্ট ব্যাংক। প্রতি বছর ব্যাংকটির মুনাফা বাড়ছে। ২০২০ সাল শেষে ব্যাংকটির শেয়ার প্রতি মুনাফা হয় ২ টাকা ৮০ পয়সা। এ মুনাফা পরের বছর ২০২১ সাল শেষে বেড়ে দাঁড়ায় ৩ টাকা ৭৮ পয়সায়। যদিও এর পরের বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে মুনাফা সামান্য কমে হয় ৩ টাকা ৭৫ পয়সা। তবে এর পরের বছর মুনাফা রেকর্ড পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ৪ টাকা ৯৭ পয়সায়।
প্রতি বছর মুনাফা করার পাশাপাশি বিনিয়োগকারীদের দিচ্ছে নিয়মিত লভ্যাংশ। সব শেষ ২০২৪ হিসাব বছরের জন্য বিনিয়োগকারীদের জন্য ১৫ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে ট্রাস্ট ব্যাংক। এর মধ্যে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ নগদ ও ৭ দশমিক ৫ শতাংশ বোনাস। এর আগে ২০২৩ সালে বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দেয় ২০ শতাংশ। এর মধ্যে ১২ শতাংশ নগদ ও ৮ শতাংশ বোনাস। ২০২২ সালেও বিনিয়োগকারীদের ২০ শতাংশ লভ্যাংশ বিতরণ করে ট্রাস্ট ব্যাংক। এর মধ্যে ১০ শতাংশ নগদ ও ১০ শতাংশ বোনাস। ২০২১ সালে বিনিয়োগকারীদের সাড়ে ২২ শতাংশ লভ্যাংশ দেয়। এর মধ্যে সাড়ে ১২ শতাংশ নগদ ও ১০ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ। ব্যাংকটি নিয়মিত এজিএম করার পাশাপাশি বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে লভ্যাংশ বিতরণ করে আসছে।
ট্রাস্ট ব্যাংকের অনুমোদিত মূলধন ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। ব্যাংকটির পরিশোধিত মূলধন ৯৯৪ কোটি ৭ লাখ ৯০ হাজার টাকা। এর বিপরীতে ব্যাংকটিতে শেয়ার রয়েছে ৯৯ কোটি ৪০ লাখ ৭৯ হাজার ৪৮২টি। ব্যাংকটির রিজার্ভের রয়েছে ১ হাজার ৩৮৬ কোটি ২৮ লাখ টাকা। ব্যাংকটির মোট শেয়ারের ৬০ শতাংশ রয়েছে উদ্যোক্তা পরিচালকদের হাতে, ২২ দশমিক ২২ শতাংশ রয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে, দশমিক ২ শতাংশ রয়েছে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের হাতে এবং বাকি ১৭ দশমিক ৭৬ শতাংশ রয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে। |
|