[ অনলাইন ] 26/06/2025 |
 |
|
|
পাঁচ ব্যাংক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সিআইপিসিতে অভিযোগ
|
|
|
নিম্নমানের ও খাবার অনুপযোগী মাছ (শেড ফিশ) গছিয়ে দেওয়ার প্রমাণ মিলেছে পরিদর্শনে। বিদেশি সরবরাহকারীও রাজি হয়েছিলেন ক্ষতিপূরণ দিতে। বাংলাদেশ ব্যাংকও নির্দেশনা দিয়েছে আমদানিকারকের সঙ্গে কথা বলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে পদক্ষেপ নিতে। উচ্চ আদালতে এ নিয়ে রিটও হয়েছে। এত কিছুর পরও বিষয়টি ফয়সালা হওয়ার আগেই উরুগুয়ের কোম্পানিকে এলসির ৩০ হাজার ৬৮০ ইউএস ডলার (৩৭ লাখ টাকা) ছাড় করে দিয়েছে একটি তফসিলি ব্যাংক। প্রশ্ন উঠেছে ওই ব্যাংক কার স্বার্থে বিপুল অঙ্কের এই টাকা ছেড়ে দিল? দেশের স্বার্থ না দেখে বিদেশি শঠ ব্যবসায়ীর পক্ষাবলম্বনের হেতু কী?
এহেন কর্মকাণ্ডের কারণে ন্যাশনাল ক্রেডিট অ্যান্ড কমার্স ব্যংক পিএলসির ৫ কর্মকর্তাকে আইনি নোটিশ দিয়েছে চট্টগ্রামের একটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান। মা আমেনা ইন্টারন্যাশনাল নামের ওই প্রতিষ্ঠানের মালিক হাবিবুর রহমানের পক্ষে অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ নাজমুল হক খোকন নোটিশটি পাঠিয়েছেন। যাদের নোটিশ দেওয়া হয়েছে তারা হলেন, এনসিসি ব্যাংকের এসএভিপি ও ম্যানেজার আশরাফুর রহমান, সিনিয়র এক্সিকিউটিভ অফিসার অনিমেষ সেনগুপ্ত, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী এম শামসুল আরেফিন, ডেপুটি ম্যানেজিং ডাইরেক্টর মাহবুব আলম ও এসএ ভিপি জাহাঙ্গীর আলম। পাশপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকের (বিবি) কাস্টমার্স ইন্টারেস্ট প্রটেকশান সেন্টারে (সিআইপিসি) ওই ৫ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দেওয়া হয়েছে লিখিত অভিযোগ।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, উরুগুয়ের রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ইন্ডাস্ট্রিয়াস পেসকোয়ারাস ভালিমার এসএর কাছ থেকে ৫৬ টন ফ্রোজেন ডটেড গিজার্ড শেড ফিশ আমদানির জন্য এলসি খোলে মা আমেনা ইন্টারন্যাশনাল। এনসিসি ব্যাংক পিএলসি, চট্টগ্রামের জুবিলী রোড শাখায় ৩০ হাজার ৬৮০ ডলারের এই এলসি খোলা হয়। এই মাছ আমদানির পর দেখা যায়, ঠিক যে ধরনের ও যে সাইজের (৪০০ গ্রাম) দেওয়ার কথা সে ধরনের মাছ দেওয়া হয়নি। সাইজে ছোট, মস্তকবিহীনÑএমনকি খাবার অনুপযোগী পচা মাছ দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানকে জানানোর পর তারা তৃতীয় পক্ষ দিয়ে ইন্সপেকশন করে রিপোর্ট দেওয়ার কথা বলে। রিপোর্ট পাওয়ার পর প্রয়োজনে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে বলেও ইমেইল বার্তায় জানায়। আমদানিকারক কর্তৃপক্ষ তৃতীয় একটি কোম্পানি দ্বারা আমদানিপণ্য ইন্সপেকশন করে রিপোর্ট দেয়। সেই রিপোর্টেও পচা মাছ গছিয়ে দেওয়ার তথ্য উঠে আসে। এ অবস্থায় সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে এলসির টাকা বিদেশি প্রতিষ্ঠানের অনুক‚লে ছাড় না করার জন্য লিখিতভাবে চিঠি দেওয়া হয়। একইভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকেও চিঠি দেওয়া হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক স্থানীয় ব্যাংকে গ্রাহকের সঙ্গে আলাপ করেই এ বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশনা দেয়। এরপরও এলসির টাকা ছাড়ের তোড়জোড় করায় আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান উচ্চ আদালতে একটি রিট পিটিশন দাখিল করে। সেই কপিও ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট শাখায় জমা দেওয়া হয়।
আমদানিকারক হাবিবুর রহমান অভিযোগ করেন, এত কিছুর পরও ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ঈদুল আজহার ছুটি শুরু হওয়ার আগের দিন ৪ জুন বিদেশি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের অনুক‚লে ৩০ হাজার ৬৮০ ডলারের এলসির পেমেন্ট দিয়ে দেয়। আর ১৪ জুন এসে বিষয়টি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানকে জানালে তারা যেন আকাশ থেকে পড়েন।
আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের অপর মালিক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন যুগান্তরকে বলেন, ‘সব ডকুমেন্ট দেওয়ার পরও ব্যাংকের কর্মকর্তারা দেশের স্বার্থ না দেখে কেন বিদেশি শঠতা ও প্রতারণার আশ্রয় নেওয়া রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের স্বার্থ দেখলেন তা বোধগম্য নয়। কোনো আইন-কানুনের তোয়াক্কা না করে, চিঠিপত্রের তোয়াক্কা না করে রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়ে শুধু ব্যক্তিগত লাভের জন্যই এহেন কাজটি করা হয়েছে বলে আমাদের বদ্ধমূল ধারণা। তাই দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দেওয়া জড়িত ব্যাংক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশে ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট শাখায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতেও আমরা প্রক্রিয়া শুরু করেছি।’ |
|