[ অনলাইন ] 27/06/2025
 
আমদানি বিকল্প পণ্য উৎপাদন খুবই সম্ভাবনাময়
২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে আগামী তিন বছরে এমএসএমই খাতে ১৫ হাজার নতুন উদ্যোক্তা তৈরি এবং বিভাগীয় পর্যায়ে ২৫ হাজার উদ্যোক্তাকে পণ্য প্রদর্শনের সুবিধা প্রদান, আঞ্চলিক পর্যায়ে পণ্য মেলা আয়োজন এবং কেন্দ্রীয় এমএসএমই উদ্যোক্তা তথ্যভাণ্ডার তৈরির প্রস্তাব করা হয়েছে।

২০২৫-২৫ অর্থবছরের বাজেটে এমএসএমই খাত কতটা গুরুত্ব পেয়েছে? নতুন বাজেট এ খাতের বিকাশে কতটা সহায়ক হবে বলে মনে করেন?

২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে আগামী তিন বছরে এমএসএমই খাতে ১৫ হাজার নতুন উদ্যোক্তা তৈরি এবং বিভাগীয় পর্যায়ে ২৫ হাজার উদ্যোক্তাকে পণ্য প্রদর্শনের সুবিধা প্রদান, আঞ্চলিক পর্যায়ে পণ্য মেলা আয়োজন এবং কেন্দ্রীয় এমএসএমই উদ্যোক্তা তথ্যভাণ্ডার তৈরির প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া ১০ হাজার প্রান্তিক উদ্যোক্তার মাঝে ১ হাজার কোটি টাকা ঋণ বিতরণ এবং তিন হাজার নারী উদ্যোক্তাকে করপোরেট ক্রেতার সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে, যা অত্যন্ত ইতিবাচক।

দেশে বড় আকারের বিনিয়োগের গতি এখন ধীর। এমন অবস্থায় কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য এমএসএমই খাতে বাড়তি মনোযোগ, সহায়তা প্রয়োজন আছে কি? দেশের এমএসএমই খাত এখন কেমন করছে?

কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য বড় আকারের বিনিয়োগের চেয়ে এমএসএমই খাতের বিনিয়োগ বেশি ভূমিকা পালন করে। এ খাতে দক্ষ, কম দক্ষ বা অদক্ষ শ্রমিকেরও কর্মসংস্থান সম্ভব। দেশের শিল্প খাতের মোট কর্মসংস্থানের ৮০-৮৫ শতাংশ এমএসএমই খাতে। মানুষের কর্মসংস্থান বাড়লে আয় বাড়ে, আয় বাড়লে সামষ্টিক অর্থনীতিতে একটা গুণিতক প্রভাব কাজ করে, যা প্রবৃদ্ধি বাড়ায়। তবে ফরওয়ার্ড লিংকেজ হিসেবে এসএমই খাতের বিকাশের জন্য বড় আকারের বিনিয়োগের প্রয়োজন রয়েছে। আমাদের মতো শ্রমঘন দেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে এমএসএমই খাতকে অপরিহার্য বলা যেতে পারে। তাই এ খাতে বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে। আমাদের দেশে সিএমএসএমই খাতে অর্থায়ন এখনো বাংলাদেশ ব্যাংক নির্ধারিত অনুপাত অর্জন করতে পারেনি। এ খাতে আরো অর্থায়নের সুযোগ রয়েছে।

এমএসএমই খাতের অনেক উদ্যোক্তা ব্যাংক ঋণ সুবিধার বাইরে আছেন। তাদের জন্য ঋণের সুবিধা নিশ্চিত করতে আপনাদের ভাবনা বা উদ্যোগ কেমন?

পর্যাপ্ত তথ্য ও সহায়ক জামানতের অভাব মূলত এমএসএমই উদ্যোক্তার ব্যাংক ঋণ সুবিধার বাইরে থাকার অন্যতম কারণ। তথ্য সরবরাহে ব্যাংকিং ব্যবস্থার পাশাপাশি সরকারও কিছু ভূমিকা পালন করতে পারে। জামানতের বিষয়ে বিভিন্ন ব্যবসায়িক সংগঠন ভূমিকা রাখতে পারে। এছাড়া ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিমের মতো ঝুঁকি মোকাবেলায় আরো কিছু স্কিম চালু করা যেতে পারে, যা জামানতের বিকল্প হিসেবে কাজ করবে। তবে এক্ষেত্রে গ্রাহকদেরও ভূমিকা রয়েছে। ঋণ পরিশোধে গ্রাহককে আরো নিষ্ঠাবান হতে হবে, যা তাদের পরবর্তী ঋণপ্রাপ্তিতে সহায়তা করবে।

দক্ষতা ও তথ্যের ঘাটতি, প্রযুক্তি ব্যবহারে সীমাবদ্ধতা এমএসএমই খাতের জন্য বড় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত। এসব সমস্যা দূর করতে কী ধরনের পদক্ষেপ প্রয়োজন?

এমএসএমই খাতে দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য সরকারকেই মূল ভূমিকা পালন করতে হবে। উদ্যোক্তা উপযোগী ব্যবহারিক বিষয় স্কুল লেভেলের পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন বা আলাদা কোর্সও করা যেতে পারে। সব ব্যাংক মিলে সিএসআর ফান্ড থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকায় কিছু প্রতিষ্ঠান করা যেতে পারে, যেগুলো দক্ষতা বৃদ্ধি ও উদ্যোক্তা তৈরিতে ভূমিকা রাখবে। তথ্য সরবরাহ ও প্রযুক্তি ব্যবহার বিকাশে ব্যাংক ও সরকাকে ভূমিকা পালন করতে হবে। এমএসএমই খাতে প্রযুক্তি ব্যবহারে উন্নত দেশের অভিজ্ঞতা কাজে লাগানো যায়। তথ্য সরবরাহের জন্য বিভিন্ন মেলা, সভা-সেমিনার আয়োজন, পত্রপত্রিকা ও সোশ্যাল মিডিয়ায় ধারাবাহিক প্রচারণার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

চীন, ভারত, থাইল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশে রফতানি আয়ে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা আছে এমএসএমই খাতের। বাংলাদেশ কীভাব এমএসএমই খাতকে আরো বেশি রফতানি আয়ে অংশীদার করতে পারে?

যেসব পণ্যের তুলনামূলক উৎপাদন সুবিধা আছে সেগুলো উৎপাদনে এমএসএমই খাতকে সম্পৃক্ত করে রফতানি বাড়ানো সম্ভব। রফতানির ক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা। রফতানি বাড়ানোর জন্য সরকারকে বাজার সৃষ্টি, মানসম্পন্ন পণ্য উৎপাদনে সহায়তা, কর অব্যাহতি ইত্যাদি সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। প্রতিটি ঘরকে উৎপাদনের হাব হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। তবে আমদানি বিকল্প পণ্য উৎপাদনের মাধ্যমে এমএসএমই খাত পরোক্ষভাবে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে বড় ভূমিকা পালন করতে পারে।

এমএসএমই খাতের কোন ধরনের প্রডাক্টকে আপনারা সম্ভাবনাময় মনে করেন?

আমাদের দেশে এমএসএমই খাতের বড় অংশ ব্যবসা। উৎপাদন ও সেবা খাত এমএসএমইতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। আমদানি বিকল্প পণ্য উৎপাদন বাংলাদেশের এমএসএমই খাতের জন্য খুব সম্ভাবনাময়।

এমএসএমই খাতে নারী উদ্যোক্তাদের অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্য। তাদের অংশগ্রহণে সহায়তা দিতে আপানাদের কোনো পরিকল্পনা আছে কি?

নারী উদ্যোক্তাদের সহায়তার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সরকারের বিভিন্ন নীতিসহায়তা রয়েছে। এমএসএমই খাতে নারী উদ্যোক্তাদের অবদান প্রায় ২৪ দশমিক ৬০ শতাংশ। দেশে নারীর মালিকানাধীন প্রায় ১৮ লাখ এমএসএমই উদ্যোগ রয়েছে। আমরাও গুরুত্বের সঙ্গে এ খাতে অর্থায়ন করছি। নারীদের অর্থায়নের জন্য ‘অনন্যা’ নামে আমাদের আলাদা একটি ঋণ প্রডাক্ট রয়েছে। নারীদের প্রশিক্ষণ প্রদানপূর্বক অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ঋণ দেয়া হচ্ছে। ঘরে ঘরে শিল্প বিকাশের লক্ষ্যে নারীদের ব্যাপক হারে কুটির ও মাইক্রো ঋণ প্রদানের পরিকল্পনা রয়েছে।

জেলা-উপজেলা পর্যায়ে উদ্যোক্তাদের সেবা দিতে শাখা, উপশাখা ও এজেন্ট ব্যাংকিং কীভাবে কাজ করছে?

সাধারণ এমএসএমই খাতের উদ্যোক্তাদের কাছে ঋণসংক্রান্ত তথ্য পৌঁছানোর জন্য তথ্যের অবাধ প্রবাহ জরুরি। ২০০ শাখা ও উপশাখার মাধ্যমে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে আমরা কাজটি শুরু থেকেই করে আসছি। তথ্যপ্রবাহ নিশ্চিতে বিভিন্ন মেলায় অংশগ্রহণ, সভা-সেমিনার আয়োজন ও ব্যানার-ফেস্টুন প্রদর্শনের ব্যবস্থা করছি। এছাড়া আন্তর্জাতিক এমএসএমই দিবস উদযাপন, পত্রপত্রিকা ও সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারণার মাধ্যমেও তথ্য সরবরাহের কাজ করে যাচ্ছি।